যুদ্ধ বন্ধের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে ইসরায়েলে

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

জনমত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধ অবসানে হামাসের সাথে চুক্তির পক্ষে। দেশটির গভীরভাবে বিভক্ত, যুদ্ধে ক্লান্ত ও বৈশ্বিকভাবে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। এখন পরিস্থিতি একটি চুক্তির পক্ষে কিন্তু চুক্তি শেষ পর্যন্ত হবেই এর নিশ্চয়তা এখনো নেই। জিম্মিদের পরিবারগুলো আশা করছে তাদের প্রিয়জন পরিবারে ফিরে আসবে। যুদ্ধ বন্ধের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে ইসরায়েলে।

যুদ্ধবিরতির সমর্থনে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার ইসরায়েলি

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আশা প্রকাশ করেছেন যে, তিনি আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই গাজায় থাকা জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি ঘোষণা দিতে পারবেন। টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি একই সাথে বলেন, “হামাস নিরস্ত্র হবে এবং গাজা বেসামরিকীকরণ হবে— সহজ হোক আর কঠিন হোক, এটি অর্জিত হবেই”।

যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনায় সম্মত হয়ে হামাস শুক্রবার বিবৃতি দেওয়ার পর তিনি এই মন্তব্য করলেন। তবে হামাস যে অন্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চেয়েছে, তা নিয়ে তিনি কিছু বলেননি।

ওদিকে সোমবার থেকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে পক্ষগুলোর মধ্যে মিশরে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চুক্তির বিষয়ে হামাসের বিলম্ব ‘সহ্য করবেন না’। “হামাসকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। নাহলে সব বাজি শেষ হয়ে যাবে…চলুন দ্রুত কাজটি করি,” ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন তিনি।

পরে তিনি আরেক পোস্টে জানিয়েছেন, ইসরায়েল প্রাথমিক সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ২০-দফায় অবিলম্বে লড়াই বন্ধ ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির পাশাপাশি শত শত ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির বিষয়টি আছে।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ জানিয়েছে, ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে প্রস্তুতির জন্য তারা একটি আদেশ জারি করেছে। এতে ইসরায়েলি সেনাদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বলা হয়েছে।

এদিকে হামাস ট্রাম্পের প্রস্তাব (কমপক্ষে কিছু বিষয়) গ্রহণের জন্য চাপের মুখে পড়েছিলো। তারা সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে এবং গাজা টেকনোক্র্যাটদের দ্বারা শাসিত হবে। তবে নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে তারা কিছু বলেনি, যা ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান দাবি।

গাজা ও ইসরায়েল- উভয় পক্ষেই সতর্ক আশাবাদ আছে যে চলমান উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত একটি চুক্তিতে গড়াতে পারে। যেসব বিষয়ে মতপার্থক্য আছে, তার মধ্যে আছে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি। যুদ্ধ শেষ করেছেন এমন একজন হিসেবে তিনি স্মরণীয় ও পুরস্কৃত হতে চান।

তিনি প্রকাশ্যে হামাসকে আহবান জানাচ্ছেন, আরও সামরিক শক্তির হুমকি দিচ্ছেন এবং একই সাথে ইসরায়েলের নেতৃত্বের সাথে তার ক্রমবর্ধমান অস্বস্তিরও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে ট্রাম্প-প্রভাব যথেষ্ট হবে কি-না।

যেসব বাধা এখন দেখা যাচ্ছে, সেগুলো আগেও ছিলো। হামাস সবসময় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর পুর্ণাঙ্গ প্রত্যাহার চেয়ে আসছে। একই সাথে তারা ইসরায়েল আবার যুদ্ধ শুরু করবে না এমন নিশ্চয়তা চায়। গোষ্ঠীটি জানে জিম্মি ছাড়া এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।

অন্যদিকে সন্দেহের বিষয়ও আছে। ইসরায়েলের ভেতরে ও বাইরে অনেকেই নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ প্রলম্বিত করার দায় দিয়ে আসছেন।
তিনি অতি জাতীয়তাবাদী মন্ত্রীদের সমর্থন পাচ্ছেন। তারা হামাসকে পূর্ণ পরাজিত ছাড়া যুদ্ধ শেষ করলে কোয়ালিশন সরকার থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে, যা সরকারের পতন ঘটাতে পারে।

গাজার ফিলিস্তিনিদের মধ্যেই প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় আশা ও গভীর সন্দেহ দেখা গেছে। অনেকে ভয় পাচ্ছেন যে, হামাস একটি ফাঁদে পা দিতে যাচ্ছে। অন্যরা মনে করছেন, দুই বছরের সংঘাত শেষ করতে এটি একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। গাজার অধিবাসী ইব্রাহিম ফারেস বিবিসিকে বলছেন, “আশায় ভেসে যেওনা। আরও অনেক দফা আলোচনা হবে। খুঁটিনাটি বিষয়ের মধ্যেই শয়তানিটা থাকে”।

ওদিকে ইসরায়েলি আর্মি গাজায় হামলায় অব্যাহত রেখেছে। শনিবারও গাজা শহরে তিনটি বিমান হামলা হয়েছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে গত চব্বিশ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ২৪ জন মারা গেছে। সব মিলিয়ে মোট মারা গেছে ৬৭ হাজার ৭৪ জন।

যুদ্ধের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গাজায় যেতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। ফলে উভয় পক্ষের দাবির সত্যতা যাচাই করা কঠিন। তবে এই যুদ্ধে গাজার বেশিরভাগ মানুষ বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ৯০ভাগেরও বেশি মানুষের বাড়িঘরের ক্ষতি বা ধ্বংস হয়েছে। বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *