অনুবাদ: মাসুম খলিলী
এক. আপনার হৃদয় থেকে ক্ষোভ দূর করুন। এটিকে পরিশুদ্ধ করুন। আপনার হৃদয় একটি ছোট অঙ্গ। যখন আপনি এটিকে ঘৃণা দিয়ে পূর্ণ করেন, আপনি এটিকে সর্বশক্তিমানের ভালবাসায় পূর্ণ হতে বাধা দিচ্ছেন। সর্বদা তাঁর কাছে আমাদেরকে এমন হৃদয় থেকে রক্ষা করতে বলুন যা ঘৃণা, হিংসা, অহংকার, হিংসা দ্বারা গ্রাস করা থাকে।
দুই. সময় নষ্ট করবেন না। আপনার যে কাজ আজ করা উচিত তা আগামীকালের জন্য ফেলে রাখবেন না। জীবন অতিশয় সংক্ষিপ্ত। মৃত্যু আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের সময় শেষ হওয়ার আগেই যতটা সম্ভব ভাল কাজ করুন। গতকাল কখনই আগামীকাল হতে পারে না। শয়তানের কথা শুনবেন না। যদি সে আপনাকে দিয়ে পাপ করাতে না পারে তবে সে আপনার সময় নষ্ট করার চেষ্টা করবে!
তিন. সর্বশক্তিমান। আমাদের হৃদয়ে সন্দেহকে স্থির হতে দেবেন না। বিশ্বের যে অনিশ্চয়তা ও অস্থির আবস্থার সম্মুখীন আমরা হচ্ছি তা ক্ষোভ-বিক্ষোভ সৃষ্টি করছে এবং আমাদের শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সর্বদা আপনার পরিকল্পনার উপর আস্থা রেখে আমাদের বিশ্বাসে দৃঢ় থাকতে সাহায্য করুন। আমাদের পরিপ্রেক্ষিত থেকে সবকিছু দেখতে সাহায্য করুন। আপনার উপর আমাদের ফোকাসকে নিবদ্ধ রাখুন।
চার. আজ আমরা এমন একটি বিশ্বে আছি যা আপনাকে ঘৃণা করার চেষ্টা করছে, বিচার করছে এবং যা অন্যের প্রতি যত্নশীল নয়। এ সময়ে বিবেচনাশীল ও সহানুভূতিশীল হতে শিখুন। বড় মানুষ হোন। সহনশীল হোন। এমন একজন হোন যে কাউকে সাহায্য করার জন্য আপন পথের বাইরে চলে যাবে। শুধু খারাপ সময়েই নয়, সব সময় দয়া দেখান।
পূনশ্চঃ
এক. অহংকার থেকে সাবধান থাকুন। এটা অনেক অবয়বে আসতে পারে। এমন অহংকারী লোক আছেন যারা মনে করেন যে তারা সবাই শক্তিশালী। তারা তাদের সমস্ত অর্জন ও সাফল্যকে তাদের নিজস্ব ক্ষমতার বলে পেয়েছে মর্মে মনে করেন এবং সমগ্র সমীকরণে সর্বশক্তিমানকে উপেক্ষা করেন। অন্ধকার ও অবিশ্বাস তাদের অন্তরকে ঢেকে দেয়।
দুই. আমাদের জীবনে এমন অনেক সময় আসবে যেখানে সর্বশক্তিমান আমাদের এমন জিনিসগুলির মধ্য দিয়ে যেতে দেবেন যে অবস্থাকে আমরা বুঝতে পারি না। আমাদের অবশ্যই আস্থা স্থাপন করতে হবে যে তাঁর পরিকল্পনার পিছনে একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। এটাই ঈমান। সর্বদা বিশ্বাস করুন যে, তিনি আমাদের জন্য সেরাটিই চান। তিনি শেষ পর্যন্ত এর জন্য কাজ করবেন! সন্দেহাতীতভাবেই করবেন!
তিন. কিছু কিছু লোক আছেন যারা যে কোন কিছুর মধ্যে কদর্যতা দেখতে বেশি পছন্দ করেন। তারা বিশ্বাস করেন যে, পুরো বিশ্ব তাদের প্রাপ্তির বাইরে চলে গেছে। না! এর পরিবর্তে সৌন্দর্য দেখা বেছে নিন। ইতিবাচকতা খুঁজে নিন। জীবনের প্রতি আপনি একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পাবেন। প্রকৃতপক্ষে, যখন আপনি ইতিবাচক হন, আপনি যেখানেই যান ভাল দিকগুলো আপনাকে অনুসরণ করবে।
চার. আপনার কৃতজ্ঞ হৃদয় আছে মানে আপনার সব আছে। আপনি আপনার জীবনের সদগুণকে স্বীকৃতি দিন। সর্বশক্তিমান আপনাকে আরও দান করবেন। তিনি আপনার উপার্জন বাড়িয়ে দেবেন; আপনার বিষয়গুলিকে সহজ করে দেবেন; যে বন্ধ দরজা খোলা সম্ভব এমনটি আপনি কখনও মনে করেননি, সেটি খুলে দেবেন । আপনাকে বঞ্চিত হবার তুলনায় অনেক বেশি তিনি দেবেন!
পাঁচ. যখন কোনও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন তখন আপনি যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সেভাবে অন্যের কাছে সাড়া আশা করবেন না। মনে রাখবেন, আমরা সবাই আলাদা আলাদাভাবে বেড়ে উঠেছি এবং জীবনের অভিজ্ঞতাও বিভিন্ন। এটি ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে আমাদের প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করবে। তাই সর্বদা সদয় হন এবং মনে রাখবেন আমরা সবাই সংগ্রামের মধ্যে আছি!
ছয়. কিছু লোক বিতর্ক করে সাফল্য লাভ করতে চায়। তারা ছোট ও ক্ষুদ্র জিনিসগুলো নিয়েও এটি করে। এ ধরনের যুক্তিতে আকৃষ্ট হতে অস্বীকৃতি জানান। জীবন এর চেয়ে অনেক ভালো! আর ক্ষোভ পোষণ করে রাখবেন না অথবা অন্যকে নিজের মন থেকে দোষ দেবেন না। এটা আপনার কাছ থেকে আসা এমন একটা বিষ যা আপনি কখনোই অনুধাবন করেননি। এর কারণে আপনার আত্মার ক্ষতি করবেন না। ক্ষমা করে দিন।
সাত. অন্যকে ক্ষমা করে দেয়ায় তাদের চেয়ে আমাদেরই বেশি উপকার হয়। হৃদয়, মন ও আত্মাকে ভার থেকে মুক্তি প্রদান অমূল্য। সবাই পাপী, তবে সবাই ক্ষমা প্রার্থনা করে না। সুতরাং অবিচ্ছিন্নভাবে এটি করুন। ক্ষমা আপনাকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে আনার একটি শক্তিশালী উপায়।
দ্রষ্টব্যঃ
আর যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে তাদের কৃত কোন অন্যায় ছাড়াই কষ্ট দেয়, নিশ্চয় তারা বহন করবে অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপ। (সূরা আল আহজাব: ৫৮)
রাসূল (সা:) বলেন, হে ঐ লোকসকল! যারা মুখে ইসলাম কবুল করেছ, কিন্তু অন্তরে এখনো ঈমান মজবুত হয়নি। তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবে না এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়োজিত হবে আল্লাহ তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ প্রকাশ করে দিবেন তাকে অপমান করে ছাড়বেন, সে তার উটের হাওদার ভিতরে অবস্থান করে থাকলেও। (তিরমিযী :২০৩২; মিশকাত:৫০৪৪; ছহীহুত তারগীব:২৩৩৯)
লেখক: মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি
অনুবাদ: মাসুম খলিলী, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট