বিচ্ছিন্নতা দূর করতে টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়রের সঙ্গে ১৫০ বাসিন্দার আনন্দমুখর চা-আড্ডা

প্রবাসী যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব দূরীকরণে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে ব্যতিক্রমী এক “বিকেলের চা-আড্ডা”। গত সপ্তাহে টাওয়ার হ্যামলেটস টাউন হলে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন নির্বাহী মেয়র লুফতুর রহমান এবং হেলথ, ওয়েলবিয়িং এন্ড সোশ্যাল কেয়ার বিষয়ক ক্যাবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর সাবিনা আক্তার।

অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রায় ১৫০ জন স্থানীয় বাসিন্দা, যারা টাওয়ার হ্যামলেটসের বিভিন্ন কমিউনিটি গ্রুপের সদস্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ইস্ট লন্ডন পেনশনার্স গ্রুপ, এমোট ক্লোজ সিনিয়র সিটিজেনস ক্লাব, বো গীজার্স, গ্লোব টাউন ওসান টেন্যান্টস অ্যান্ড লিজহোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ওয়াপিং কমিউনিটি হলসহ আরও বেশ কিছু স্থানীয় সংগঠন।

চা–আড্ডার পর ছিল সরাসরি গান পরিবেশনা, যেখানে অংশ নেন ঐতিহ্যবাহী পার্লি কুইন্স-এর সদস্যরাও। উচ্ছ্বাস, আড্ডা এবং হাসিখুশিতে মুখর ছিল পুরো পরিবেশ – যেন পুরনো বন্ধুদের মিলনমেলা।

একাকীত্বকে গুরুত্ব সহকারে মোকাবিলা করছে কাউন্সিল

কাউন্সিল ২০১৭ সাল থেকে স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে মিলে একাকীত্ব কমাতে কাজ করছে, বিশেষ করে ৫০ বছরের বেশি বয়সী বাসিন্দাদের জন্য। গবেষণায় দেখা যায়, দীর্ঘ সময় একা থাকা শুধু মনকে নয়, শরীরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

একাকীত্বের কারণে, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২৯% বৃদ্ধি পায়, স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩২% বাড়ে, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২৫% বাড়ে।
এছাড়া প্রবীণদের গুরুতর একাকীত্বের কারণে স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিচর্যা খাতে ব্যয় দাঁড়ায় প্রতি ব্যক্তির জন্য ৬,০০০ পাউন্ডেরও বেশি।

বৈকালিক চা-আড্ডায় অংশগ্রহণকারীদের একজন এমোট ক্লোজ সিনিয়র সিটিজেনস ক্লাবের সদস্য ডেনিস বলেন, “দারুণ একটি দিন কেটেছে। বহু পুরনো পরিচিত মানুষের সঙ্গে দেখা হলো, যা আমাকে কয়েক বছরের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। কাউন্সিলের সবাই অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন, আর আমরা নিজেদের সত্যিই বিশেষ অনুভব করেছি।”
ইস্ট লন্ডন পেনশনার্স গ্রুপ এর ক্যারল বললেন, “একাকীত্ব প্রাণঘাতী হতে পারে। আমাদের গ্রুপের অনেক সদস্য আছেন যারা দিনে একবারও কারও সঙ্গে কথা বলেন না। এমনকি একজন বলেছিলেন, শুধু মানুষের কথা শোনার জন্য তিনি সংবাদপত্রে ফোন করেন। তাই কাউন্সিল যখন এমন সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে, তা সত্যিই আমাদের জীবনে পরিবর্তন আনে।”

টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র, লুৎফুর রহমান বলেন, “প্রবীণদের সঙ্গে এই বিকেলের সময় কাটাতে পেরে আমি আনন্দিত। আমাদের কমিউনিটিতে তাঁদের অবদান অমূল্য। হাসি, গান ও আড্ডায় ভরা সময় কাটিয়ে আমরা সবাই আনন্দ এবং সংযোগের অনুভূতি পেয়েছি। একাকীত্ব মোকাবিলায় এবং আমাদের প্রবীণদের সম্মান জানিয়ে এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে।”

হেলথ, ওয়েলবিয়িং এন্ড সোশ্যাল কেয়ার বিষয়ক ক্যাবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর সাবিনা আক্তার বলেন, “একাকীত্ব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে, তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য। তাই এমন অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক অনুষ্ঠান আমাদের অগ্রাধিকার। এত মানুষকে এক সঙ্গে, হাসিখুশি পরিবেশে দেখতে সত্যিই অসাধারণ লেগেছে। আমরা ভবিষ্যতেও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবো যাতে কমিউনিটির সবাই সংযুক্ত ও সুখী থাকতে পারে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *