ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে হিজাব আন্দোলনের সেই তাবাসসুম শাইক এবার নতুন ভাবে আলোচিত হয়েছেন। সেবার প্রতিবাদী কন্ঠে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। এবার পরীক্ষায় ভাল করে সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। ১৭ বছরের এই কিশোরী দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় কলা বিভাগে প্রথম হয়েছেন। মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৫৯৩ নম্বর পেয়ে শীর্ষ স্থান লাভ করেছেন। হিন্দি, সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানে তিনি শতভাগ তথা ১০০তে ১০০ পেয়েছেন।
গত বছরের জানুয়ারিতে কর্ণাটকের উদিপি জেলায় এক স্কুলে হঠাৎ হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়। কর্তৃপক্ষ ফরমান জারি করে, হিজাব বা ওই ধরনের কোনো ধর্মীয় পোশাক পরে ক্লাস করা যাবে না। কর্ণাটকের স্কুলগুলোতে হিজাব নিষিদ্ধের পর প্রতিবাদ শুরু হয় গোটা রাজ্যে। দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা ওই আন্দোলনের প্রধান মুখ হয়ে উঠেছিলেন তাবাসসুম শাইক। তাকে নিয়ে তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সমূহে বহু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
ওই ঘটনার এক বছর পর আবারও সংবাদমাধ্যমের খবরে এলেন তাবাসসুম। তবে এবার ওই হিজাব আন্দোলনের জন্য নয়, বরঞ্চ রাজ্যের কলা বিভাগ থেকে প্রথম হয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তিনি। তবাসসুমের ইচ্ছা ‘ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি’ নিয়ে বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন।
ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়েছে, ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৫৯৩ পেয়ে কর্ণাটক রাজ্যে চলতি বছরের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় কলা বিভাগে প্রথম হয়েছেন তাবাসসুম শাইক। এই ফলাফলের সুবাদে পুনরায় সংবাদমাধ্যমের নজরে এসেছেন তিনি। সেই সঙ্গে কর্ণাটকের হিজাব আন্দোলন প্রসঙ্গেও যেনো নয়া মাত্রা পেয়েছে। বেঙ্গালুরুতে হিজাব আন্দোলনে তাবাসসুম ছিলেন আন্দোলনকারী মেয়েদের অন্যতম। প্রতিবাদে সেসময় স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। যদিও পরে তিনি তার সিদ্ধান্ত বদলান।
পরীক্ষার সাফল্য প্রসঙ্গে তাবাসসুম বলেন, সেসময় হিজাব নিষিদ্ধ করায় বাসায় বসে ছিলাম বহুদিন। তবে শেষ পর্যন্ত বাবা-মায়ের একটি কথায় তার সিদ্ধান্ত বদলায়। তারা বলেন যে, পড়াশুনো বন্ধ করে দিলে ভবিষ্যতের প্রতি অন্যায় করা হবে।
তাবাসসুমের বাবা আবদুল কায়উম শাইক পেশায় ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার। মা পারভিন গৃহবধূ। চার বছরের বড় দাদা আবদুল কালাম মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। তাবাসসুম জানিয়েছেন, বাবা-মা-দাদার পরামর্শে আমি স্কুলে ফিরে যাই। অবশ্যই হিজাব ছাড়া খুব খারাপ লাগছিল। আমি পাঁচ বছর বয়স থেকে হিজাব পরি, পোশাকটা আমার ভাল লাগে। একটা অধিকার জন্মে গিয়েছিল। হিজাব না পরে স্কুলে যেতে তাই খুব কষ্ট হয়েছে।
যদিও হিজাব পরার অধিকারের জন্য তার অনেক বন্ধুরাই স্কুল ছেড়ে দিয়েছিল। তবে তাবাসসুম মনে করেন প্রতিবাদের নামে পড়াশুনো ছাড়লে সিদ্ধান্তকারীদের উদ্দেশ্যই সফল হতো। তাই স্কুলে ফেরা এবং পরীক্ষার আগে সব ভুলে পড়ায় মন দেন তিনি।
কর্ণাটক রাজ্যে হিজাব প্রসঙ্গ নিয়ে হাইকোর্টে এখনও বিচার চলছে। তাবাসসুমের প্রশ্ন, একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কেন পোশাকের উপর সরকারি বিধিনিষেধ থাকবে। শিক্ষা আমার অধিকার, ধর্মাচরণও অধিকার। কর্ণাটকে আসন্ন বিধানসভার ভোট। সেখানেও ফিরেছে হিজাব বিতর্ক। তাবাসসুম এবার কলেজে যাবেন, সেখানে ইউনিফর্মের কড়াকড়ি নেই। তবুও শঙ্কা রয়ে গেছে তার মনে। যে কোনো সময় বিশ্ববিদ্যালয়েও এই কড়াকড়ি চালু হতে পারে। তাই তিনি এখন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি নিয়ে পড়তে বিদেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান।
তাবাসসুমকে ‘শাবাশি’ জানিয়ে গতকাল সোমবার টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। মা–বাবার সঙ্গে এই মেধাবী ছাত্রীর ছবি দিয়ে কেরালার এই কংগ্রেস নেতা লিখেছেন, ‘সাফল্যই সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ। শাবাশ তাবাসসুম।’