তা‘মীরুল মিল্লাত, এক নামে যে মাদরাসাকে সারা দেশের মানুষ চেনেঃ ডা. শফিকুর রহমান

ক্যাম্পাস বাংলাদেশ শিক্ষা সময় চিন্তা সময় সংবাদ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, তা‘মীরুল মিল্লাত, এক নামে যে মাদরাসাকে সারা দেশের মানুষ চেনে। বাংলাদেশে আরও হাজারো মাদরাসা আছে কিন্তু সেগুলো এতটা জনপ্রিয় হয় নি। এখান থেকে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীদের কাছে মাত্র দু’টো বিষয় আমরা চাই। দ্বীনি জ্ঞানার্জনে নিজেকে গড়ে তুলবেন এবং পাশাপাশি সমাজ বদলের জন্য চেষ্টা করবেন।

আজ ১লা নভেম্বর, শনিবার সকাল ৯টা থেকে দিনব্যাপী রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ চীন মৈত্রি সম্মেলন কেন্দ্রে এ দেশের ঐতিহ্যবাহী তা‘মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ১ম অ্যালামনাই কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।

অনলাইনে বক্তব্য রাখছেন আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান

চার সেশনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে অনলাইনে সবার উদ্দেশ্যে ভিডিও পর্দায় বক্তব্য প্রদান করেন আমীরে জামায়াত ডা. শফিক।

এসময় তিনি বলেন, সুদূর লন্ডন থেকে আপনাদের সাথে থাকতে পেরে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। এখানের ভাই-বোনেরা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভূমিকা রাখছেন। যেখানেই কাজ করেন, স্বার্থকতা খুঁজে পেতে হবে। প্রকৃত যারা দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে, তারাই ভাগ্যবান।

আয়োজনের বিশেষ অতিথি আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, আজকে আপনাদের জন্যে বিশেষত আমাদের জন্য খুব একটি আনন্দের দিন। আজকে আপনারা প্রথম অ্যালামনাই কনফারেন্স করতে পারছেন। কারণ মহান জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিবর্তন হয়েছে। সকল জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি আমার সালাম এবং আমার সম্মান সকল শহীদদের প্রতি। এই জুলাই বিপ্লব যেটা হয়েছে এটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লব হিসেবে দেখি। আমাদের বাঙালি মুসলমানের যে আত্মপরিচয়, সেই আত্মপরিচয় আমরা নতুন করে বুঝতে শিখেছি জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে।

বক্তব্য রাখছেন আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান

স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আসলে তা’মীরুল মিল্লাত মাদরাসা যে কতটা সুনাম অর্জন করেছে সেটা আমি টের পেলাম যখন ২০১৯ সালে মালয়েশিয়ার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে একটু লেখাপড়া করতে গেলাম। তখন ওখানে গিয়ে দেখলাম তা’মীরুল মিল্লাতের ছাত্রদের খুব সুনাম এবং এটা দেখে আমি খুব গর্ববোধ করেছিলাম যে, বাংলাদেশের একটা মাদরাসার ছাত্রদের সুনাম আমি মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে পাচ্ছি। এটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের একটা সময় ছিল। আসলে মুসলমানদের জন্যে ইসলামী এবং আধুনিক শিক্ষার যে একটি মিশ্রণ, একটি মেলবন্ধন দরকার এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটা তা’মীরুল মিল্লাত খুব সফলভাবে দেখাতে পেরেছে।

তা‘মীরুল মিল্লাত ট্রাস্টের সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল মাওলানা যাইনুল আবেদীনের উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া এ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জনপ্রিয় দাঈ ও বক্তা শায়খ আহমাদুল্লাহ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. নকিব মোঃ নাসরুল্লাহ, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শামসুল আলম, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মিয়া মুহাম্মদ নূরুল হক, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ডক্টর কামালুদ্দীন আব্দুল্লাহ জাফরী, মাওলানা মোশতাক ফয়েজী, ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম, তা‘মীরুল মিল্লাত ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কুরবান আলী, গভর্নিং বডি সদস্য প্রফেসর নুরুন্নবী মানিক, আব্দুর রহমান আলমাদানী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল ড. আবু ইউসুফ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি হাবীবুল্লাহ মুহাম্মদ ইকবাল প্রমূখ।

আইকনিক ব্যাচ হিসেবে কনফারেন্সের সর্ব্বোচ্চ উপস্থিতি দাখিল ২০০০ সালের অ্যালামনাইদের সাথে আনন্দঘন মুহুর্তে তা‘মীরুল মিল্লাত ট্রাস্টের সেক্রেটারি সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন

জুলাই বিপ্লবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অবদানের কথা স্মরণ করে বক্তারা বলেন, এই মাদরাসার ছেলেরা যাত্রাবাড়িতে যে লড়াই করেছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে এই ইতিহাস আমাদেরকে বারেবারে বলতে হবে। সুতরাং, আজকে আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয়েছি। আপনাদের সকলের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে আমরা যেন আমাদের এই বিজয় ধরে রাখতে পারি। এবং সেই বিজয় ধরে রাখার বিষয়ে ইনশাআল্লাহ তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার ছেলেরা ও অ্যালামনাইরা সবাই নেতৃত্ব দেবেন।

অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছেন ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম

বাঙালি মুসলমানের রেনেসাঁ বাংলাদেশে দেখতে পাচ্ছি উল্লেখ করে বক্তারা আরো বলেন, এই রেনেসাঁ দেখবার জন্য আমরা দীর্ঘকাল ধরে অপেক্ষা করছি। আমরা এখন আশাবাদী যে আমরা বাংলাদেশে সেই রেনেসাঁর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি। কারণ মুসলমানদের যদি রেনেসাঁ না হয় তাহলে সারা বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো না।

১ম অ্যালামনাই কনফারেন্সে উপস্থিতিদের একাংশ

সারা বিশ্বে মুসলমানদের উপরে যে জুলুম চলছে তার প্রধান কারণ আমরা তাদের সাথে জ্ঞানে পেরে উঠছি না, বিজ্ঞানে পেরে উঠছি না। তাদের সঙ্গে জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমরা যখন শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারবো তখনই আমরা মুসলমানদের সম্মান প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। আমরা মনে করি এই ক্ষেত্রে তা’মীরুল মিল্লাত একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। যেটা তারা অনেকটা এখন পর্যন্ত দেখাতে সক্ষম হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। একারণেই আজকে তা’মীরুল মিল্লাতের ছেলেরা বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়। মাদরাসার ছেলেরা বিভিন্ন আধুনিক সেক্যুলার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিপি-জিএস নির্বাচিত হয়। এটা এক ধরনের সফলতা।

কনফারেন্সে আগত অতিথিবৃন্দের একাংশ

তা’মীরুল মিল্লাতের সফলতা কামনা করে বক্তারা আরও বলেন, এই প্রসঙ্গে আপনাদের একটা পুরনো ইতিহাস মনে করিয়ে দিতে চাই। এই বাংলাদেশে একজন সুফি একজন মহান ব্যক্তি এমন একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আজ থেকে শত শত বছর আগে, সেই মাদরাসা সারা বিশ্বে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাদরাসা হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই মহান ব্যক্তির নাম শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা। শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামার যে মাদরাসা সোনারগাঁতে ছিল সেটা সারা বিশ্বে একটা এক্সাম্পল ছিল। এই সেঞ্চুরিতে আমরা দেখতে চাই যেমন করে আবু তাওয়ামার মাদরাসা সারা বিশ্বে মুসলমানের জন্যে আলোকবর্তিকা হয়ে দাঁড়িয়েছিল -তেমনি তা’মীরুল মিল্লাত সারা বিশ্বে ইসলামী শিক্ষা এবং আধুনিক শিক্ষায় সারা পৃথিবীতে এক নম্বর স্থান অধিকার করবে। এটা আমরা স্বপ্ন দেখি এবং এটা আমরা দেখতে চাই।

প্রোগ্রামের আহবায়ক ও তা‘মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ডক্টর খলীলুর রহমান মাদানীর সভাপতিত্বে দেশের প্রতিথযশা শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, আলিমে দ্বীন, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকসহ এ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বর্তমান ১২০টি ব্যাচের রেজিস্ট্রেশনকৃত ৩হাজার মেধাবীর পদচারণায় দিনব্যাপী এ অ্যালামনাই জমকালো পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *