যুদ্ধ বিরতি ও জিম্মি মুক্তির ঘটনায় ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলে জিম্মির পরিবারের সদস্যরা মিডিয়াকে তাদের স্বস্তির কথা জানিয়েছেন। হামাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া ১৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে রেডক্রসের ব্যবস্থাপনার গাজা থেকে মিশরে নেয়ার পর ইসরায়েলে ফিরিয়ে নেয়া হয়। তাদের মুক্তির পরপরই পশ্চিম তীরের বেইতুনিয়া চেকপয়েন্ট এলাকায় মুক্তি দেয়া হয়েছে ৩৯ ফিলিস্তিনি বন্দীকে, যাদের মধ্যে ১৫ জন কিশোর রয়েছে।
এছাড়া কাতারের মধ্যস্থতায় কার্যকর হওয়া চুক্তির আওতায় আরও দশ থাই নাগরিক ও একজন ফিলিপিনোকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। কাতার চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মোট ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি ও ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দী চারদিনের যুদ্ধবিরতির মধ্যে মুক্তি পাওয়ার কথা।
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজাবাসী সাত সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবারের মতো ঘুমের মধ্যে নিহত হওয়ার ভয় ছাড়াই রাত পার করেছেন। শনিবার (২৫ নভেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- গাজার নারী ও শিশুরা আজ স্বস্তিতে রাত পার করেছেন। ৪৮ দিনের মধ্যে এটি প্রথম রাত, যেসময়ে তারা অবিশ্বাস্য বিমান হামলা এবং বোমা হামলায় মৃত্যুর ক্রমাগত ভয় ছাড়াই ঘুমিয়েছেন।
হামাসের দেয়া তিনশ নারী ও শিশুর একটি তালিকা থেকে মুক্তিপ্রাপ্তদের নাম চূড়ান্ত করেছে ইসরায়েল। ওই তালিকার এক চতুর্থাংশেরও কম ব্যক্তির সাজা দেয়া হয়েছিলো। বাকীরা বিভিন্ন অভিযোগে রিমান্ডে বিচারের অপেক্ষায় । তবে ওই তালিকার ৪০ ভাগেরই বয়স ১৮ বছরের কম। এছাড়া একজন কিশোরী ও ৩২ জন নারী আছে।
যে ৩৯ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল তাদের পাথর ছোঁড়া থেকে শুরু করে হত্যা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো। ২৪ নারী ও ১৫ কিশোরকে বেইতুনিয়া চেকপয়েন্টের কাছে নিয়ে ছেড়ে দেয়ার পর বিপুল সংখ্যক মানুষ উল্লাস করে তাদের শুভেচ্ছা জানায়। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ১৬ বছর বয়সে আটক হওয়া মারাহ বাকিরও আছেন। সীমান্তে পুলিশ কর্মকর্তার ওপর ছুঁড়ি-হামলার দায়ে তার সাড়ে আট বছরের জেল দেয়া হয়েছিলো।
মুক্তি পাওয়া বন্দীদের নিয়ে বাস যখন গাজার কাছে এসে পৌঁছায় তখন সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। একজন ফিলিস্তিনের পতাকা গায়ে জড়িয়ে রেখেছিলেন। শ্লোগানে মুখরিত মানুষের মুখে ছিলো ‘আল্লাহ মহান’ ধ্বনি। তারা হামাসের পতাকা নাড়াচ্ছিলেন এবং ফিলিস্তিনি ঐক্যের কথা বলেছেন। পুরো বিষয়টা ছিলো ‘যুদ্ধের বিভীষিকার মধ্যে বিজয়ের একটি মূহুর্ত’।
অন্যদিকে চার দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী যে কোন জায়গাতেই ত্রাণ সংস্থাগুলোর প্রবেশাধিকার থাকার কথা। তবে বাস্তুচ্যুত যেসব মানুষ গাজার দক্ষিণে অবস্থান করছে তাদের বাড়ি ফেরার চেষ্টা না করতে বলেছে ইসরায়েল। তারা বলছে, “উত্তরাঞ্চল এখন যুদ্ধ ক্ষেত্র”। অবশ্য এখনো বহু বেসামরিক নাগরিক সেখানে অবস্থান করছে।
শুক্রবার হামাস যেসব জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে তাদের ইসরায়েলে ফিরিয়ে নেয়ার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মিশরের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। এর মধ্যে দুই, চার, ছয় ও নয় বছর বয়সের-মোট চারটি শিশুর পাশাপাশি ৮৫ বছর বয়সী এক নারীও আছেন।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৪ হাজার ৮৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৮ হাজারেরও বেশি শিশু এবং নারী। আহত হয়েছে ২৮ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ।
গত মাস থেকে অবরুদ্ধ ছিটমহলে ইসরাইলের অবিরত বিমান ও স্থল হামলায় হাসপাতাল, মসজিদ এবং গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ইতোমধ্যে ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছে। সুত্র: বিবিসি ও আল-জাজিরা