এসআইআর আতঙ্কে কেন পশ্চিমবঙ্গে পরপর আত্মহত্যা?

এশিয়া সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

পায়েল সামন্ত কলকাতা, ডিডাব্লিউ

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে গত সোমবার। সেই রাতেই আত্মহত্যা করেন পানিহাটির প্রদীপ কর। পুলিশের দাবি, তার সুউসাইড নোটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য এনআরসি দায়ী।’ মঙ্গলবার দিনহাটার খইরুল শেখ বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তিনিও এসআইআর আতঙ্কে এই কাজ করেছেন বলে পরিবারের দাবি। বৃহস্পতিবার বীরভূমের ইলমবাজারে এক বৃদ্ধ আত্মহত্যা করেন। তিনি ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নিজের নাম খুঁজে না পেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পরিবারের দাবি।

এসআইআর শুরু হওয়ার পর এই ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে, ভোটার তালিকার সংশোধন নিয়ে সাধারণ মানুষ কতটা আতঙ্কে আছেন। প্রত্যাশিতভাবেই আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে প্রবলভাবে রাজনীতি শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এত তাড়াহুড়ো করে এসআইআর করা হচ্ছে?
প্রশ্নের মুখে এসআইআর

এ মাসেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মাস তিনেকের মধ্যে সে রাজ্যে এসআইআর প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলা হয়েছে। ৬৯ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। ২১ লক্ষের নাম যুক্ত হয়েছে। এই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলা বিবেচনাধীন। তারই মধ্যে ১২টি রাজ্যে নিবিড় সমীক্ষার ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে এ বছর প্রকাশিত তালিকা মিলিয়ে দেখা হয়েছে। সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের ভোটার ছিল সাড়ে চার কোটির বেশি। এখন সাড়ে সাত কোটির বেশি নাম রয়েছে তালিকায়। ৭ জানুয়ারি খসড়া ও ৭ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করার কথা বলেছে কমিশন। মাত্র তিন মাসের মতো সময়ে এই বিপুল সংখ্যক ভোটারের সমীক্ষা কি সম্ভব?

বিহারের প্রক্রিয়া এই সময়ের মধ্যে শেষ হলেও তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। মহিলা ও দলিত ভোটারদের নাম বাদ গিয়েছে বেশি। সংখ্যালঘু প্রধান এলাকায় একই ছবি। এই সংক্রান্ত মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও কেন পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১২ রাজ্যে এসআইআর ঘোষিত হল, এই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।

কংগ্রেস-সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলির প্রশ্ন, কেন অনেকটা সময় হাতে নিয়ে এসআইআর-এর কাজ শুরু করা হল না? পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন আগামী এপ্রিল মাস নাগাদ হবে, এটা বহু আগেই ঠিক ছিল। তাহলে কেন নভেম্বর থেকে নিবিড় সমীক্ষা শুরু করা হচ্ছে? এত অল্প সময়ের মধ্যে বিএলওরা কীভাবে তিনবার ভোটারদের দরজায় পৌঁছবেন?
পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি

বিহারে মোটের উপরে নির্বিঘ্নেই মিটেছে সমীক্ষার পর্ব। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সংঘাত চরমে উঠেছে এসআইআর ঘিরে। দুইটি আত্মহত্যা ও একটি আত্মহত্যার চেষ্টার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘বিজেপির ভয়, ঘৃণা এবং বিভাজনের রাজনীতির করুণ পরিণতির সাক্ষী থাকছি আমরা। বাংলায় এসআইআর ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে একের পর এক ট্র্যাজেডি ঘটছে, যা অনায়াসে এড়ানো যেত। এর জন্য দায়ী কে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি এর দায় নেবেন? বিজেপি আর তাদের জোটসঙ্গীরা, যাদের তত্ত্বাবধানে এই ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাদের কি কিছু বলার সাহস আছে?’’

মমতা বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক নাগরিককে বলছি, বিশ্বাস হারাবেন না। কোনও চূড়ান্ত পদক্ষেপ করবেন না। আমাদের সরকার আপনার পাশে আছে। আমরা বাংলায় এনআরসি হতে দেব না। সামনের দরজা দিয়েও নয়, পিছনের দরজা দিয়েও নয়।”

বিজেপি এসব কথা খারিজ করে এটাকে তৃণমূলের পরিকল্পনা বলে পাল্টা দাবি জানাচ্ছে। এরই মধ্যে বিএলওদের একটা ছোট অংশ সমীক্ষার কাজে ডাক পাওয়ার পরে বেঁকে বসেছেন। এমন ৬০০ জনকে শোকজ করে নির্বাচন কমিশন। তা সত্ত্বেও কাজে যোগ দিতে অনিচ্ছুক ১৪৩ জনকে বৃহস্পতিবার বেলা বারোটার মধ্যে কাজ শুরু করতে বলা হয়। কতজন এই হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও কাজে যোগ দেননি, সেই সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য কমিশনের কাছে এদিন রাতেও আসেনি।

রাজ্যের ৮১ হাজারের বেশি বুথের অনুপাতে এই সংখ্যা নগণ্য হলেও সমীক্ষার মূল কর্মীরা যে রাজনৈতিক শিবিরের সাঁড়াশি চাপের মুখে রয়েছেন, সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, এই চাপের মুখে বিএলওদের একাংশ কাজে যোগ দেবেন না, বরং তারা শাস্তির মুখে পড়তেও রাজি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *