‘ইন্টারনেট চালু ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যাহারেই সমাধান’

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ইন্টারনেট খুলে দেয়া ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রত্যাহার করার মাধ্যমেই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট নাশকতা ও সহিংসতা বন্ধে তাৎক্ষিণক সমাধান দেখছেন পররাষ্ট্র বিশ্লেষক আলী রীয়াজ ও সাংবাদিক সরাফ আহমেদ৷ ইউটিউবে ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশো-তে অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন তারা৷

ডয়েচে ভেলে বাংলার প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীনের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্ত ছিলেন দেশটির ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ ও জার্মানি প্রবাসী সাংবাদিক সরাফ আহমেদ৷

কোটা আন্দোলনকে ঘিরে চলমান সহিংসতায় শুক্রবার তখন পর্যন্ত অন্তত ৩৬ জন মারা গেছেন৷ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সংঘর্ষ৷ এমন বাস্তবাতায় তাৎক্ষণিক সমাধান কী হতে পারে, জানতে চাওয়া হয় অতিথিদের কাছে৷

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘‘ইমিডিয়েট স্টেপগুলোর মধ্যে প্রথম যে জিনিসটা, সেটা হলো ইন্টারনেটের যে ব্ল্যাকআউট, সেটা খুলে দিতে হবে৷ কারণ আমরা যাতে বুঝতে পারি, গত তিন চার দিনে ব্যাপকভাবে যে প্রাণহানি ঘটেছে সেটার সংখ্যাটা কত, কারা, কিভাবে দায়ী৷ এটা বুঝতে পারবেন ইন্টারনেট খুলে দিলে৷ পুলিশ উইথড্র (প্রত্যাহার) করেন সমস্ত জায়গা থেকে৷ পুলিশ, বিজিবি, সশস্ত্র যান ব্যবহার করে ভীতি তৈরি করে…”

তিনি আরো বলেন, ‘‘পুলিশ উইথড্র করুন, শক্তি প্রয়োগের জায়গা দিয়ে হবে না৷ বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খুলে দিক৷ শিক্ষার্থীদের আসতে দিন৷… যারা এই সমস্ত ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক৷”

সারাদেশে সহিংসতা, বিটিভিতে আগুন দেয়ার মতো ঘটনার পরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তুলে নিয়ে তাৎক্ষণিক সমাধান কীভাবে সম্ভব?-এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, ‘‘রোববার-সোমবার হত্যাকাণ্ডের পর এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে৷” এর আগে আন্দোলনের সময় কোনো সহিংসতা হয়নি উল্লেখ করেন তিনি৷

তাৎক্ষিণক সমাধান প্রসঙ্গে সাংবাদিক সরাফ আহমেদ বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে যে ঘটনা ঘটেছে সরকারের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত৷ দুঃখ প্রকাশ করে তাদের কাছে মাফ চেয়ে রাস্তা থেকে পুলিশ নামিয়ে নেয়া উচিত৷ এই যে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে, এতে যে গুজব ছড়াচ্ছে, মিরপুরে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হচ্ছে জনতার উপরে এই যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, এইগুলো যারা করছে, তারা খুবই শিশু সুলভ আচরণ করছে৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘তারা বুঝতে পারছে না, ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে কোনোদিন এইভাবে মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করা যায় না৷ মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করতে হলে, মানুষের কাছে যেতে হবে, কথা বলতে হবে৷ সেই শক্তি আওয়ামী লীগের এই মুহূর্তে নেই৷”

অধ্যাপক আলী রীয়াজের মতে কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী তার শপথ ভঙ্গ করেছিলেন৷ বলেন, ‘‘কারণ শপথে আছে অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে শাসন করার কথা৷…এখন তিনি বলছেন, ক্ষুব্ধ হয়ে, বিরাগের বশবর্তী হয়ে তিনি এটা করেছিলেন৷ সেটাই হলো শপথ ভঙ্গ করা৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘কথিত ছাত্রলীগকর্মী, যুবলীগকর্মী যারা অস্ত্র উঁচিয়ে… তাদের আটক করুন, বিচার করুন৷ এটার জন্য কোনো রকম আলোচনার দরকার হয় না৷”

এই অধ্যাপক বলেন, ‘‘যে প্রশ্নটা উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের, অতীত অভিজ্ঞতাগুলো দেখুন, ২০১৮ সালের আন্দোলনের পরে, ওই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো করা হয়েছে, সেগুলোর ভার তাদের বহন করতে হয়েছে৷ এই হচ্ছে পরিস্থিতি৷”

চলমান আন্দোলনে বিরোধীদলের ভূমিকা নিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘‘এই আন্দোলনের সূচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর না থাকাটাই সঠিক ছিল৷ কারণ এটা রাজনৈতিক দলের দাবি ছিল না৷ এটা শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল৷”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *