পৃথিবীর তাবৎ অন্ধকার মিলেও একটিমাত্র মোমবাতির আলোকে নিভিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। এটিই প্রকৃতির অমোঘ বিধান যা আমরা প্রতিনিয়ত চর্মচক্ষে প্রত্যক্ষ করি, কিন্তু কদাচিৎই হৃদয়ের চোখে দেখতে পাই।
রাতের নিকষ কালো বিস্তৃত আঁধারের বুক চিরে অতি ক্ষুদ্র আলোর উৎসটি পৃথিবীর মানুষের জন্য অনেক বার্তা বহন করে। কোনো পরিস্থিতি যতই চ্যালেঞ্জিং বা অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হোক না কেন, সামান্য আশার ঝলক বা একটি শুভ কাজও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আনতে পারে। সামান্য পরিমাণ ইতিবাচকতা, নেতিবাচকতাকে প্রতিহত করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পারে।
মোমবাতির আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ শক্তি, বিশ্বাস বা নীতিমালার প্রতীক। প্রচণ্ড চাপ বা বিপদের মুখেও, নিজের মূল মান ও নীতিগুলোর প্রতি দৃঢ় থাকা আমাদের সততা এবং চারিত্রিক অখণ্ডতাকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
মোমবাতির আলো শুভ, সত্য বা ভালবাসার প্রতীক। এর অর্থ হলো যে এই গুণাবলী, যত ক্ষুদ্র বা ভঙ্গুর মনে হোক না কেন, একটি স্থায়ী প্রভাব রাখে যা দুষ্টতা বা মিথ্যা দ্বারা সহজেই ছায়াচ্ছন্ন করা যায় না।
মোমবাতি আরও প্রমাণ করে যে একজন ব্যক্তি, তার বিশ্বাস বা কর্মে দৃঢ় থাকলে, অন্যদের জন্য প্রেরণা হতে পারে। জাগতিক বা রাতের বাস্তব অন্ধকার যেমন একটি মোমবাতির শিখাকে নির্বাপিত করতে পারে না, তেমনই অজ্ঞতা, হতাশা বা ঘৃণার রূপক অন্ধকার জ্ঞান, আশা বা ভালবাসার আলোকিত শক্তিকে মুছে দিতে পারে না।
এ কারণে, আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত আলোর এই চিরন্তন শক্তির প্রতি বিশ্বাস রাখা। নিজ নিজ হৃদয় ও মনে এই আলোর স্ফুরণকে লালন করা এবং তা থেকে প্রাপ্ত অনুপ্রেরণা এবং শক্তিকে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে প্রতিফলিত করা। আল-কুরআনেও আলোর এই শক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে:
“আল্লাহু নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ” অর্থাৎ আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীর আলো। আলো ছাড়া কিছু দেখা যায় না। যখন কোনো বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের রেটিনাতে পড়ে, তখনই আমরা সেটাকে দেখতে পাই। আলো হচ্ছে “দেখার মাধ্যম” বা ‘Means’। আলো ছাড়া আমরা কিছুই দেখতে পেতাম না। দেখা এবং আলোর সম্পর্ক এতটাই নিবিড় যে আমাদের ভাষায়ও এটি প্রকাশ পায়— “তার চোখের আলো/জ্যোতি নিভে গেছে” মানে সে অন্ধ হয়ে গেছে।
জীবনের যাত্রায় যতই বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন, আমাদের এই আলো কখনোই নিভে যেতে দেওয়া উচিত নয়। বরং এই আলোক শক্তি যেন আমাদের পথপ্রদর্শক হয়, আমাদের উৎসাহিত করে, এবং সর্বদা আমাদের জীবনের অন্ধকারতম মুহূর্তগুলোতে আমাদের আশার দিশা দেখায়। আলোর এই আত্মাকে আমাদের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, কারণ এটি কেবল আমাদেরই নয়, বরং আশেপাশের সকলের জন্যও আশার এবং ভালোর আলোকবর্তিকা হয়ে উঠতে পারে। “Hope in the Language of Light”
* মুসতাক আহমদ ব্যারিস্টার অ্যাট ল, লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে কেবিনেট মেম্বার (জবস্, এন্টারপ্রাইজ, স্কিলস্ এন্ড গ্রোথ)