মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ, একাত্তরের রণাঙ্গনের কমান্ডার-ইন-চিফ, বঙ্গবীর জেনারেল এম এ জি ওসমানী আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অনন্য কৃতি পুরুষ, বিরাট মহীরুহ। নিখাদ দেশপ্রেম, সততা, নীতিনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা এবং সময়ানুবর্তিতার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। তাঁর চর্চিত মানবিক গুণাবলী বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রেরণার অনন্ত উৎস।
বিশিষ্ট সাংবাদিক, সুলেখক ও গবেষক মুহাম্মদ ফয়জুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং সম্পাদনায় বাংলাদেশ সহ ৮টি দেশের কবিদের ওসমানী বিষয়ক সেরা কবিতা নিয়ে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘বঙ্গবীরকে নিবেদিত পঙক্তিমালা’র প্রকাশনা এবং ‘বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানীর অনুকরণীয় জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় সংসদের উদ্যোগে এবং বঙ্গবীর ওসমানী মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন যুক্তরাজ্য ও বন্ধু লাইব্রেরী এন্ড পাবলিকেশনের (জিন্দাবাজার, সিলেট) সহযোগিতায় বিপুলসংখ্যক কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও আইনজীবীসহ সূধীজনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান ছিল প্রাণবন্ত ও উৎসব মুখর।
গত শনিবার সিলেটে অনুষ্ঠিত আলোচনা ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় সংসদের মহাসচিব ও প্রধান সম্বন্বয়ক, সাংবাদিক ও গবেষক মুহম্মদ ফয়জুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বায়ান্ন’র ভাষা সৈনিক ও প্রবীণ শিক্ষাবিদ প্রিন্সিপাল মসউদ খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অবিভক্ত ভারতবর্ষে আসামের স্বনামধন্য মন্ত্রী মরহুম আব্দুল মতিন চৌধুরীর (কলামিয়া) সুযোগ্য পুত্র বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও সমাজ চিন্তক জুনেদ আহমদ চৌধুরী এবং ভারত থেকে আগত ইন্দো-বাংলা মৈত্রী শিলচর, আসাম-এর সাধারণ সম্পাদক, লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শুভদ্বীপ দত্ত (মলয়)।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বরেণ্য কবি অধ্যক্ষ কালাম আজাদ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজ চিন্তক লে. কর্ণেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. নজরুল হক চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রিন্সিপাল প্রফেসর মো. সিরাজুল ইসলাম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক সিলেট এমসি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর নন্দলাল শর্মা এবং শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর সৈয়দ মোহাম্মদ মহসিন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে আজীবন নিবেদিতপ্রাণ মহম্মদ আতাউল গনী ওসমানী ছিলেন একজন নিখাদ দেশপ্রেমিক এবং পরীক্ষিত জাতীয়তাবাদী। অতুলনীয় দেশপ্রেম, সততা, নীতিনিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণতা এবং দেশ ও জাতির জন্যে অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষার বিচারে গোটা জাতির কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে কাব্যগ্রন্থের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক- প্রকাশক বায়োজিদ মাহমুদ ফয়সল। প্রবন্ধটি অনুষ্ঠানে পাঠ করেন কবি- ঔপন্যাসিক নজরুল ইসলাম সবুর। আলোচনায় অংশ নেন বঙ্গবীর ওসমানী জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী, কবি ও নারীসংগঠক নূরুন্নেছা চৌধুরী এবং কবি ও সাহিত্য সমালোচক মুহিবুর রহমান কিরণ প্রমুখ।
কাব্যগ্রন্থ ‘বঙ্গবীরকে নিবেদিত পঙক্তিমালা’ থেকে আবৃত্তি করেন কবি মাছুমা টফি একা এবং আবৃত্তিশিল্পী শর্মিলা দে পূরবী। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত ও তরজমা পেশ করেন মুফতি আব্দুর রহমান চৌধুরী এডভোকেট। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন শাইনিং স্টেপ স্কুলের প্রিন্সিপাল কবি সেনুয়ারা আক্তার চিনু।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ বঙ্গবীর জেনারেল এম এ জি ওসমানীর রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়। মুনাজাত পরিচালনা করেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা ইসহাক আল-মাদানী।
অনুষ্ঠানে সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ”বঙ্গবীরকে নিবেদিত পঙক্তিমালা”র মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ। সব শেষে চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, বিশিষ্ট গীতিকার ও সংগীতশিল্পী ডা. মো. জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী কর্তৃক বঙ্গবীর ওসমানীকে নিয়ে রচিত চমৎকার সংগীত পরিবেশন করা হয়। অচিনপুরীর সাথে সমবেত কন্ঠে সংগীত পরিবেশন করেন তাঁর সহযোগী শিল্পীবৃন্দ।