হামাসের হাতে আটকে থাকা জিম্মিদের মুক্তি দিতে চার দিনের যুক্তবিরতির একটি চুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছেন ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা।ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের ছয় সপ্তাহের মাথায় এসে হামাসের সাথে এই চুক্তি হয়েছে।
বুধবার এ নিয়ে ইসরাইলি মন্ত্রিসভায় একটি ভোট হয়। এতে হামাসের সঙ্গে চুক্তির পক্ষে ভোট দেন বেশিরভাগ মন্ত্রী। মন্ত্রিসভার ৩৮ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র তিনজন এর বিরোধিতা করেছেন। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী, শিন বেইত, মোশাদও এই চুক্তি সমর্থন করেছে বলে জানা গেছে। প্রথমে বিরোধিতা করলেও দেশটির অতি ডানপন্থি ইহুদিবাদী দলও চুক্তির পক্ষে ভোট দিয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন গভিরের দল ‘ওতজমা ইয়েহুদিত’ চুক্তির বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে আগামী চার দিনের মধ্যে ৫০ জন জিম্মি মুক্তি পাবে এবং এ সময়টিতে লড়াই স্থগিত থাকবে। “এরপর অতিরিক্ত প্রতি দশজন জিম্মির মুক্তির জন্য এক দিন করে যুদ্ধবিরতি বাড়বে,” ওই বিবৃতিতে বলা হয়। তবে সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা এবং হামাসকে নিমূর্ল না করা পর্যন্ত ইসরায়েলি অভিযান চলবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে হামাস একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ৫০ জিম্মিকে ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ১৫০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু মুক্তি পাবে। সেই সঙ্গে ওই চুক্তির অংশ হিসাবে মানবিক সহায়তা, ওষুধ ও জ্বালানি নিয়ে শতাধিক ট্রাককে গাজায় প্রবেশ করার সুযোগ দেয়া হবে বলে হামাস তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ধারণা করছে, ৫০ জনের বেশি জিম্মি মুক্তি পেতে পারে। জিম্মিদের মধ্যে তিনজন মার্কিন নাগরিক মুক্তি পেতে পারেন, যাদের মধ্যে তিন বছরের একটি শিশুও রয়েছে।
হামাস এক টেলিগ্রাম বার্তায় চুক্তির বিবরণ পোস্ট করেছে। এতে বলা হয়েছে-
* ইসরাইল এ সময়ে গাজা উপত্যকার সকল এলাকায় সামরিক তৎপরতা বন্ধ রাখবে, এমনকি সামরিক যানবাহনও নড়াচড়া করবে না। * চিকিৎসা এবং জ্বালানি নিয়ে শত শত মানবিক সহায়তাবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে। * দক্ষিণ গাজায় চার দিন পর্যন্ত কোনো ড্রোন উড়বে না। উত্তর গাজায় প্রতিদিন স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা ড্রোন উড়া বন্ধ থাকবে। * যুদ্ধবিরতির সময়ে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় কোনো হামলা চালাতে পারবে না বা কাউকে কোনো এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে পারবে না। * সালাহউদ্দিন স্ট্রিটে চলাচলের স্বাধীনতা থাকবে।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলি অব্যাহত বর্বরতার বিরুদ্ধে গত সাতই অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালালে অন্তত বারশো মানুষ মারা যায় এবং দুশোরও বেশি মানুষকে হামাস জিম্মি করে নিয়ে যায়। এরপর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক হামলার মাধ্যমে যুদ্ধ ঘোষনা করে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ এ পর্যন্ত মারা গেছেন, যাদের মধ্যে পাঁচ হাজার শিশু রয়েছেন। সূত্র : আল জাজিরা, আরব নিউজ, বিবিসি এবং অন্যান্য