আমেরিকায় পিএইচডি গবেষক পুত্রের ফেসবুক স্ট্যাটাসের জেরে খুলনায় আটক মায়ের জামিন দেয়নি আদালত। মঙ্গলবার খুলনা সিএমএম তরিকুল ইসলামের আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। এরপর তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
এ বিষয়ে মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী এডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, আমেরিকা প্রবাসী পুত্রের ফেসবুকে লেখার কারণে তার মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক। পৃথিবীর কোনো সভ্যদেশে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটতে পারে না। আইনের শাসন না থাকায় সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। আমারা আশা করছি, অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেয়া হবে।
শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাজহারুল হান্নান বলেন, প্রবাসী গবেষক পুত্রের ফেসবুকে স্ট্যাটাসের কারণে মাকে কারাগারে যেতে হবে, এটা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। এসব ঘটনার কারণে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক বিশ্বে নষ্ট হচ্ছে। দেশের স্বার্থে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
তানজিলুর রহমানের পিতা আলমগীর শিকদার বলেন, আমার স্ত্রী আনিছা সিদ্দিকার গ্রেপ্তারের পর থেকে আমাদের পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বাসার আশেপাশে অপরিচিত লোকের আনাগোনা দেখছি।
উল্লেখ্য, জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদি’র মৃত্যুর পরে গত ১৭ই আগস্ট আমেরিকার মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির ম্যাটেরিয়াল সাইন্সের উপর পিএইচডি গবেষক তানজিলুর রহমানের ‘Tanzil D Metallist’ নামে ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসের জের ধরে মা আনিছা সিদ্দিকাকে খুলনার খালিশপুর থানার বয়রা হাজী ফয়েজ উদ্দীন সড়কের বাড়ি থেকে ২০শে আগস্ট আটক করে পুলিশ।
এদিকে তানজিল তার ফেসবুকে লিখেছেন, অনেকের মতো আমাদের দুই ভাইয়েরও মা দিবসে মায়ের সাথে ছবি ফেসবুকে শেয়ার করতে খুব ইচ্ছে করতো। সারাজীবন পর্দা-নেকাব করা মায়ের ছবি শেয়ার দিতে পারতাম না। বন্ধুদের মায়ের সাথে ছবিতে লাভ রিএক্ট দিয়েই ক্ষান্ত থাকতাম।
আমার বড় ভাই একবার মায়ের ছবি ফেসবুকে দেওয়ায় অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন আম্মু। আজকে সেই মাকে আসামীর মতো দাড় করিয়ে নেকাব খুলিয়ে ছবি ফেসবুকে দিয়েছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
অনেকেই যখন অনুরোধ করলেন মায়ের ছবিসহ পোস্ট করতে, তাদেরকেও বলেছি যে পর্দানশীন আমার মা এই ষাটের কোঠায় বয়স হওয়ার পরেও ছবি দেওয়া পছন্দ করতেন না। এত এত পুলিশি নির্যাতনে কষ্ট পাওয়া স্বত্ত্বেও আমি নিশ্চিত মা সবচেয়ে কষ্টটা পেয়েছেন ছবি তোলার মুহূর্তটায়।
আম্মুকে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার সময় নীচতলার ভাড়াটিয়া দুটো ছেলে এগিয়ে আসায় তাদেরকেও ধরে নিয়ে আসে পুলিশ। এখন গোপন বৈঠক করার অভিযোগে তাদের ৩ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করে দেওয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে খুলনা জেলা কারাগারে নিয়ে গেছে।
আমি আগেই বলেছি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের কাছে আমার আর কোন আবেদন নেই। আমি শুধু আমার কারণে এভাবে সারা দেশের মানুষ আমার মায়ের ছবি দেখায় তার কাছে ক্ষমা চাই।