সেন্টার ফর ন্যাশনাল কালচার (সিএনসি) কর্তৃক ‘আল মাহমুদ সিএনসি পদক ২০২৩’ লাভ করেছেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক, কবি ও কথাসাহিত্যিক সাঈদ চৌধুরী। একই সাথে সৈয়দ আলী আহসান পদক পেয়েছেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী সৈয়দা নাজ কমর এবং হুমায়ুন আহমদ পদক লাভ করেছেন বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক হাসান হাফিজ।
২৩ জুলাই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এই পদক প্রদান করা হয়। সিএনসি’র নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান ছিলেন সিএনসি’র সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম বদরুদ্দোজা। প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সচিব ড.আব্দুল মজিদ এবং প্রধান আলোচক হিসেবে অংশনেন দৈনিক নয়া দিগন্ত’র সাহিত্য সম্পাদক কবি ও কথাশিল্পী জাকির আবু জাফর। অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন সিএনসি’র মিডিয়া এক্সিকিউটিভ ইসমাইল হোসেন।
কবি আল মাহমুদের অবদানকে চির স্মরণীয় করে রাখার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন আল মাহমুদ ফাউন্ডেশন ও সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের চেয়ারম্যান, রোটারি ক্লাব অব সিলেট সিটির চাটার প্রেসিডেন্ট, সময় সম্পাদক সাঈদ চৌধুরী। তাই, তাকে ‘আল মাহমুদ সিএনসি পদক’ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক কবি জাকির আবু জাফর বলেন, কবি আল মাহমুদ নিখাদ মাটি আর মানুষের গন্ধ কবিতায় তুলে এনেছেন। তার কবিতার শরীরে নাড়া দিলে নদীর ঢেউ, বৃষ্টির পানি, ফুলের গন্ধ আর পাখির ডাক আমরা শুনতে পাই। তিনি জীবনানন্দ দাশ ও জসিম উদ্দিনের বলয় থেকে আমাদেরকে নতুন এক বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। আজ আল মাহমুদ পদক পেলেন কবি ও গবেষক সাঈদ চৌধুরী। তাকে অভিনন্দন।
কবি হাসান হাফিজ বলেন, আমাদের উত্তরসূরী যারা আমাদের অহংকার, সিএনসি কর্তৃক তাদেরকে স্মরণ করার আয়োজন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তাদের আদর্শকে, চিন্তাকে, দর্শনকে আমরা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো এবং নিজেরাও হৃদ্য হব। এই সংগঠনের সাথে সৈয়দ আলী আহসানের মত মনীষী ব্যক্তিত্বের স্মৃতি জড়িত। আশাকরি এর ব্যাপ্তি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে এবং বাংলাদেশী সাহিত্য ও ঐতিহ্য আরো বিকশিত হবে।
আল মাহমুদ ফাউন্ডেশনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কবি হাসান হাফিজ বলেন, আমি সাঈদ চৌধুরীকে অনুরোধ করবো, শুধু ইংরেজিতে নয়, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভাষায়ও যেন আল মাহমুদ অনুদিত হয়। আরেকটি বিশেষ অনুরোধ থাকবে, আল মাহমুদের সোনালী কাবিন যেন ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষনা করে, সে লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। বিশ্ব কবিতার লোকজ ঐতিহ্যের শৈল্পীক রূপায়ণ আল মাহমুদের কবিতায় রয়েছে।
সিএনসি’র নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, ব্রিটেন প্রবাসী বিশিষ্ট লেখক কবি সাঈদ চৌধুরী বহু গুণে গুনান্বিত। আল মাহমুদ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে তিনি ব্যাপক কাজ করছেন। তার নিজেরও অনেক বই আছে। আমরা তাকে আল মাহমুদ সিএনসি পদকে মনোনীত করেছি।
ড. আব্দুল মজিদ সকলকে অভিবাদন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আজকে যারা পদকপ্রাপ্ত হলেন, তারা আমার পরিচিত বিশেষ গুণীজন। সকলের সাফল্য কামনা করি।
সভাপতির বক্তব্যে একেএম বদরুদ্দোজা বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানে যে তিনজনকে কেন্দ্র করে পদক দেয়া হচ্ছে, তারা (সৈয়দ আলী আহসান, আল মাহমুদ ও হুমায়ুন আহমদ) আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। আমাদের সাহিত্যের রত্নভান্ডারে তারা যা দিয়ে গেছেন, তা বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার দিয়ে পরিমাপ করা যাবেনা। সৈয়দ আলী আহসান বাংলা সাহিত্যের দিকপাল, হুমায়ুন আহমদ ঢাকা কেন্দ্রীক বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার গড়ে তুলেছেন। আর কবি আল মাহমুদ সবচেয়ে আধুনিক কবি। কথা সাহিত্যেও তিনি সৃষ্টি করেছেন নতুন মাইল ফলক।
একেএম বদরুদ্দোজা আরো বলন, সাঈদ চৌধুরী আল মাহমুদকে নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তার অনেক লেখা আমার নজর কেড়েছে। তাছাড়া যে কোন বহমান লেখকের সাহিত্য আলোচনা করেন তিনি। এজন্য তাকে অনেক ধন্যবাদ। আজকে যারা পদক পেলেন, তারা জীবনে অনেক ভাল কাজ করেছেন। আশাকরি এই পদক তাদের কাজে আরো উৎসাহ যোগাবে।
সাঈদ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, কবি ও কথা সাহিত্যিক আল মাহমুদের রচনা সম্ভার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আল মাহমুদ ফাউন্ডেশন। ২০১৪ সালের ১১ জুলাই কবির ৭৯তম জন্মদিনে ফাউন্ডেশনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। একই সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আল মাহমুদ ফাউন্ডেশন আয়োজিত শরৎকালীন কবিতা উৎসবের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শতাধিক লেখক-সাহিত্যিকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত উৎসবে কবি আল মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ গ্রহণ করেন।
বাংলা ভাষার সাহিত্য সম্ভার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য বিশ্বমানের অনুবাদ, একাডেমিক আলোচনা, সাংগঠনিক সংযোগ ও পেশাদারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে আল মাহমুদ ফাউন্ডেশন। বিশেষ করে কবি আল মাহমুদকে নতুন প্রজন্ম ও আন্তর্জাতিক লেখকদের সামনে যথার্থভাবে উপস্থাপন করতে এবং তার সাহিত্যকে উপভোগ, শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য করে তুলতে আমরা সামগ্রিকভাবে কাজ করছি। ধারাবাহিক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ব্রিটিশ লাইব্রেরিসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের লাইব্রেরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগে আল মাহমুদের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া আল মাহমুদকে নিয়ে আলোচনা ও গবেষণামূলক লেখাসমূহ ফাউন্ডেশনের অনলাইন প্লাটফর্মে এবং হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমেইলের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিদের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রয়াস অব্যাহত আছে। এজন্য দেশ-বিদেশের লক্ষাধিক ডাটা আপডেট করা হয়েছে।
‘কালজয়ী কবিতার স্র্রষ্টা আল মাহমুদ’ গ্রন্থ সম্পর্কে সাঈদ চৌধুরী বলেন, কবি ও কথা সাহিত্যিক আল মাহমুদের রচনাসম্ভার বিপুল, বহুবর্ণিল ও স্বতন্ত্র। অসংখ্য কালজয়ী কবিতার স্র্রষ্টা আল মাহমুদ বাংলা কবিতাকে গৌরবোজ্জ্বল অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। আমাদের কবিতায় যে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার উন্মেষ ঘটেছে, তিনিই তার নায়ক। দুই বাংলার অপরাজেয় এই কবির লেখা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। দেশ-বিদেশে তাকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। বইয়ের সংখ্যা শতাধিক। চল্লিশের বেশী কাব্যগ্রন্থ, বিশের অধিক উপন্যাস এবং দশটির মতো গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার শিশু সাহিত্য কিংবা কিশোর কবিতা বাংলা সাহিত্যে দুর্লভ। তের খন্ডের রচনা সমগ্রও পাঠকের হৃদয় ছুঁয়েছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং আল মাহমুদ যেন এক ও অভিন্ন। এমন একজন কবির চোখে দেখা জীবন ও জগতের অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে হয়। তার সাধনা ও ভাবনাগুলো একত্রিত করতে পারলে আগামীতে লেখক-গবেষকদের কাজ সহজ হবে। আর এই প্রত্যাশা থেকে তিন যুগ ধরে কাছে থেকে দেখা আল মাহমুদকে পাঠকের সামনে তুলে ধরার প্রয়াসে এক ভিন্ন রকম আলাপচারিতা। ১৯৮৯ থেকে ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে কবির ষোলটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছি। এর চুম্বক অংশ গ্রন্থ আকারে বেরিয়েছে।
একজন সব্যসাচী লেখক হিসেবে গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, স্মৃতিচারণ কিংবা ভ্রমণকাহিনী সকল ক্ষেত্রেই সাঈদ চৌধুরী সমান পারদর্শী। দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়েও তিনি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- কবিতা ‘আত্মার অলিন্দে’, উপন্যাস ‘ছায়াপ্রিয়া’, গল্প ‘আলোক ঝরনাধারা’, প্রবন্ধ ‘সুনিকেত’, সাক্ষাৎকার ‘কালজয়ী কবিতার স্রষ্টা আল মাহমুদ’, আরব জাহান নিয়ে স্মৃতিময় লেখা ‘ধূসর মরুর বুকে’, বিলেত নিয়ে লেখা ‘লন্ডনে যাপিত জীবন’, সাহিত্য আলোচনা ‘সমকালীন সাহিত্য ভুবন’ এবং ‘বিশ্ব সাহিত্যের চিরকুট’।
পান্ডুলিপি: দেশ-বিদেশের সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত সাঈদ চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য পান্ডুলিপি হচ্ছে ‘এডওয়ার্ড হিথের স্মৃতিতে বঙ্গবন্ধু’, ‘নৈঃশব্দ্যে বিলেত যাপন’, ‘আলাপচারিতা’, ‘স্মরণীয়-বরণীয়’, ‘কোভিড ১৯‘, ‘বিলেতে বাংলা চর্চা ও বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন‘, ‘বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ ও ইউরোপে নজরুল চর্চা’, ‘সাত সাগরের মাঝি ফররুখ’ ইত্যাদি।
গীতিকবিতা: সাঈদ চৌধুরী একজন স্বনামধন্য গীতিকবি। তার বিপুল পরিমান গান ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। সাঈদ চৌধুরীর ‘আল্লাহু আল্লাহু’ মোনাজাতে কন্ঠ দিয়েছেন সংগীত সম্রাট মশিউর রহমান। সমাজের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের অধিকার নিয়ে সচেতনতামূলক ‘প্রতিবন্ধী মানুষ’ গানটি জিটিভি ও বাংলাভিশনে গেয়েছেন শিল্পী ফাহিম ফয়সাল। ‘অন্বেষণ’ এবং ‘সুবর্ণজয়ন্তীর কলতানে’ তার সুর ও কণ্ঠ মুগ্ধতা ছড়িয়েছে।
সংলাপ ফ্রন্ট: সাঈদ চৌধুরী সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের বর্তমান চেয়ারম্যান। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, ১৯৯২ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সেক্রেটারি জেনারেল এবং ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডিয়াম মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কবি আফজাল চৌধুরী চেয়ারম্যান ও সাঈদ চৌধুরী সেক্রেটারি জেনারেল থাকাকালে সংলাপ ফ্রন্ট অনিকেত বৃত্তির বিপক্ষে এক নবতর ধারার সৃষ্টি করে। বিশ্বাসের স্বপক্ষে সংলাপের নিয়মিত সাপ্তাহিক কর্মশালা রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়।
এওয়ার্ড ও সম্মাননা: সৃজনশীল কর্মকান্ড এবং মানব সেবার জন্য সাঈদ চৌধুরী লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র কর্তৃক ‘সিভিক এওয়ার্ড ২০০৭’
এবং নিউহাম ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট কর্তৃক ‘কমিউনিটি এওয়ার্ড ২০১০’ সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন।
কারি লাইফ এওয়ার্ড: বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশেষ করে এনআরবি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে অনন্য অবদানের জন্য সাঈদ চৌধুরী কারি লাইফ বিজনেস এচিভমেন্ট এওয়ার্ড লাভ করেছেন। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর লন্ডনের অভিজাত হিলটন হোটেলে ৭শত আমন্ত্রিত অতিথির এক জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে এই এওয়ার্ড ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ব্রিটিশ হাউজ অব কমন্সের হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ও প্রভাবশালী রাজনীতিক কিথ ভাজ এমপির কাছ থেকে তিনি এওয়ার্ড গ্রহন করেন।
ক্যাডেট কলেজ সম্মাননা পুরষ্কার: ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যায়তন বিবিআইএস প্রতিষ্ঠা এবং অত্যাধুনিক কারিকুলাম তৈরীর মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে সাঈদ চৌধুরী সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে বিশেষ সম্মাননা পুরষ্কার লাভ করেন। অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ রুহুল আমিন এবং অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নৌবাহিনী প্রধানের কাছ থেকে পুরষ্কারটি গ্রহন করেন।
এক্সিম ব্যাংক সম্মাননা পুরষ্কার: ব্যাংকিং ও শিল্পখাতের প্রচার ও প্রসারে অনন্য অবদান এবং এক্সিম এক্সচেঞ্জ ইউকে থেকে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য সাঈদ চৌধুরী ২০০৯ সালে এক্সিম ব্যাংক সম্মাননা পুরষ্কার লাভ করেন। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি ব্যাংক এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার লন্ডনে পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে এই বিশেষ সম্মাননা ‘স্বর্ণমুদ্রা’ প্রদান করেন।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: লন্ডনের সাফুক ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন সাঈদ চৌধুরী। বর্তমানে সেখানে উচ্চতর গবেষণা করছেন। এছাড়া তিনি একজন হাফেজ ও আলেম। বাংলাদেশে কওমী ও আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেছেন। লন্ডনে টিভি ও রেডিও সাংবাদিকতায় ট্রেনিং প্রভাইডার প্রতিষ্ঠান এসভিটি’তে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ওপর প্রফেশনাল কোর্সে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর দ্যা ট্রেইনিং অব জার্ণালিজম (এনসিটিজে) থেকে সাংবাদিকতা কোর্স এবং গিল্ডহল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার কোর্স সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেছেন।
সাংবাদিকতা: সাঈদ চৌধুরী সিলেট সরকারী আলিয়ায় অধ্যয়নকালেই পেশাগত সাংবাদিকতা শুরু করেন। জাতীয় দৈনিকে প্রতিনিধি হয়েছেন দাখিল নবম শ্রেণির ছাত্র হিসেবে। দৈনিক সংগ্রামের সিলেট ব্যুরো চীফ হিসেবে তিনি সাড়া জাগিয়েছেন। এরপর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পাঁচটি বিশেষ জোন। বৃহত্তর সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণা নিয়ে গঠিত জোনের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৮৯ সাল থেকে প্রায় একযুগ সুনামের সাথে সংগ্রামে কাজ করেছেন। তখন স্থানীয় রাজনীতিক থেকে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি।
এছাড়া দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকায় জন্মলগ্ন থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত স্টাফ রিপোর্টার ও ১৯৯৮ থেকে বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯৪ সালে ত্রৈমাসিক সুনিকেত ও ১৯৯৮ সালে সাপ্তাহিক সুনিকেত সম্পাদনা করেছেন। ২০০০ সালের জানুয়ারি থেকে সাপ্তাহিক নতুন দিনে এসিস্ট্যান্ট এডিটর এবং দৈনিক ইনকিলাবের লন্ডন প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ২১ আগস্ট থেকে সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা প্রতিষ্ঠা ও সম্পাদনা করেন। ২০০৪ সালে প্রকাশ করেন মাসিক সময়। ২০০৫ সাল থেকে সময় প্রবাসে সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন দৈনিক।
জালালাবাদ মিডিয়া: ১৯৯৫ সালে তিন বন্ধুকে নিয়ে সাঈদ চৌধুরী সিলেটে বেসরকারি সংবাদ সংস্থা ‘জালালাবাদ মিডিয়া’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাথমিকভাবে বাসস এবং ইউএনবি’র আদলে মিডিয়া সার্ভিস চালু হয়। সরকারী ও বেসরকারী গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ/প্রতিবেদন দ্রুত সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার ফলে সুধীজনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়।
ইত্তেফাকের সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি ব্যরিস্টার মঈনুল হোসেন, ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ-ইউএনবির এডিটর-ইন-চিফ এনায়েতউল্লাহ খান জালালাবাদ মিডিয়ার কার্যক্রম অবহিত হয়ে মুগ্ধ হন।
বরেণ্য আরো অনেক সাংবাদিক জালালাবাদ মিডিয়া পরিদর্শর করেন। সাঈদ চৌধুরী জালালাবাদ মিডিয়ায় প্রথমে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এবং পরে চেয়াম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিবিআইএস: সিলেটে ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও চলমান বাস্তবতার আলোকে ১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসে সাঈদ চৌধুরী ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষায়তন চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শিক্ষা কার্যক্রম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি অবহিত হয়ে বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন এপেক্স বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট কাজী এনাম উদ্দিন আহমদ ও ব্যবসায়ী কয়সর জাহান। আস্তে আস্তে আরো ক’জন বন্ধুও সম্পৃক্ত হন। প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (বিবিআইএস)। সাঈদ চৌধুরী পরিচালনা পরিষদে রেক্টর ও নির্বাহী প্রধান মনোনীত হন। শহরের হাউজিং এস্টেটে চার তলা বিশিষ্ট ৯৩-৯৪ নং বাসাটি নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। প্রথম বছরেই (১৯৯৭) নার্সারী থেকে জিসিএসই (ও-লেভেল) পর্যন্ত ক্লাস চালু হয় এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলে জিসিএসই পরীক্ষায় বিবিআইএস শিক্ষার্থিদের সাফল্য সবাইকে চমকে দেয়। বর্তমানে শহরের পাঠানটুলায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে কলেজে উন্নীত হয়েছে।
ব্রিটিশ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (বিবিআইএস) প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটিশ হাইকমিশনার ডেভিড সি ওয়াকার সহ দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও কুটনীতিকগণ বিবিআইএস পরিদর্শন করেছেন।
উল্লেখযোগ্য অনেকের মধ্যে রয়েছেন, বিবিসির সাংবাদিক ফ্রান্সেস হরিসন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র জে আর রামানুপ, বাংলাদেশের প্রধান কবি ও কথা সাহিত্যিক আল মাহমুদ, স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক ইনস্টিটিউট ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি গিয়াস কামাল চৌধুরী, বেসরকারি সংস্থা ডেমোক্রেসি ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক তালেয়া রেহমান, বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল প্রমুখ।
সাপ্তাহিক ইউরোবাংলা: ২০০১ সালে লন্ডনের কয়েকজন মহৎ ব্যক্তিকে নিয়ে সাঈদ চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেন ‘সাপ্তাহিক ইউরোবাংলা’। সেবছর অর্থাৎ ২০০১ সালের ২৩ নভেম্বর একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের বর্তমান রাজা (তৎকালীন প্রিন্স) চার্লসকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোবাংলা প্রদান করেন ম্যানেজিং এডিটর সাঈদ চৌধুরী। বাইলিঙ্গুয়াল হবার কারণে প্রিন্স সময় নিয়ে দেখলেন। এতে মুসলিম আর্ট এন্ড কালচার সম্পর্কিত তার নিজের বক্তব্য আছে দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রশংসা করলেন। এটি ছিল বিলেতে বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা।
মিডিয়া মহল: সাঈদ চৌধুরী ২০০২ সালে লন্ডনে প্রতিষ্ঠা করেন সংবাদ সংস্থা ‘মিডিয়া মহল’। এলএমসি বিজনেস উইংয়ে মিডিয়া মহলের অফিস নেয়া হয়। কমিউনিটি মিডিয়া সার্ভিস সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় সেখান থেকে। নিজস্ব প্রকাশনা এবং টিভি ডকুমেন্টরি তৈরী ছাড়াও রেস্টুরেন্ট সমূহের অত্যাধুনিক মেনু এবং ওয়েবসাইট করে দেওয়ার মাধ্যমে কারি ইন্ডাস্ট্রিতে নান্দনিকতা সৃষ্টির জন্য মিডিয়া মহলের প্রয়াস ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
ইউকে বাংলা ডাইরেক্টরি : ২০০৩ সালে সাঈদ চৌধুরীর সম্পাদনায় মিডিয়া মহল থেকে প্রকাশিত হয় ব্রিটেনে বাংলাদেশী ব্যবসা বিষয়ক তত্ত্ব ও তথ্য সমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ গাইড ‘ইউকে বাংলা ডাইরেক্টরি’। ২০০৪ সালে আরো সমৃদ্ধ কলেবরে ‘ইউকে বাংলা ডাইরেক্টরি’ প্রকাশিত হয়। এই ডাইরেক্টরিতে আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছে। আরো আছে রেস্টুরেন্ট সহ কয়েক হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা। এছাড়া রয়েছে প্রবাসী বহুল সিলেট সহ বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য বর্ণনা। ব্যাপক তথ্যের সমাহারে ভরপুর ইউকে বাংলা ডাইরেক্টরি প্রবাসিদের কাছে প্রাত্যহিক ডাইরির মতো সহায়ক।
২০০৩ সালের ১৯ মে মেয়র কেন্ লিভিষ্টন লন্ডনের পর্যটন শিল্প বিকাশে বাংলা টাউনে ব্যবসা প্রমোশনের অংশ হিসেবে ‘টোটালি বাংলা টাউন-টোটালি লন্ডন’ শীর্ষক প্রচার অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এরই অংশ হিসেবে ইউকে বাংলা ডাইরেক্টরি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করে মেয়র বলেন, ‘এটা অবশ্যই অপূর্ব। একটি ছোট্ট ডাইরিতে বাংলা টাউনের এমনকি বাংলাদেশী কমিউনিটির সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা ও ফোন নাম্বার স্থান পেয়েছে’। ব্রিটেনের মুলধারার মিডিয়ায় এই সংবাদ গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছে।
রেস্টুরেন্ট ডাইরেক্টরি: ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয় ব্রিটেনের সকল এশিয়ান রেস্টুরেন্ট নিয়ে সাঈদ চৌধুরী সম্পাদিত ‘ইউকে এশিয়ান রেস্টুরেন্ট ডাইরেক্টরি’। এতে রেষ্টুরেন্টের নাম-ঠিকানার পোস্ট কোড এরিয়া ভিত্তিক প্রকাশ করা হয়। এশিয়ান ১৮ হাজার রেষ্টুরেন্টের মধ্যে সাড়ে নয় হাজার অর্থাৎ অর্ধেকের বেশী বাংলাদেশী মালিকানাধীন। ইন্ডিয়ান বা পাকিস্তানীদের সাথে বাংলাদেশী মালকানায় আরো কয়েশ ছিল। সবমিলে প্রায় দশহাজার রেস্টুরেন্ট আমাদের। ইতিপূর্বে এই তালিকা নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি ছিল। সঠিক হিসেব না থাকায় কমিউনিটি নেতারা অনুমান নির্ভর তথ্য দিতেন। ‘ইউকে এশিয়ান রেস্টুরেন্ট ডাইরেক্টরি’র মাধ্যমে সঠিক তথ্য প্রমাণ সম্ভব হয়েছে। ব্রিটেনের মূল ধারায় ডকুমেন্ট হিসেবে এখন তা প্রযোজ্য।
লন্ডনের তৎকালীন মেয়র ও পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, তার আগের মেয়র কেন্ লিভিংস্টন সহ অনেক মন্ত্রী-এমপি রেস্টুরেন্ট ডাইরেক্টরির প্রশংসা করেছেন।
মুসলিম ইন্ডেক্স: ২০১০ সালে সাঈদ চৌধুরীর সবচেয়ে ফ্লাগশিপ প্রকাশনা হচ্ছে ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা-ওআইসি’র ৫৭টি দেশের তত্ত্ব ও তথ্য সমৃদ্ধ ডাইরেক্টরি ‘মুসলিম ইন্ডেক্স’। এটি প্রকাশের জন্য ২০০৯ সালের ২৯ এপ্রিল ওআইসি মহাসচিব প্রফেসর ড. একমেলেদ্দিন ইহসানগ্লর সাথে তিনি মতবিনিময় করেছেন। এরপর ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আইডিবি’র কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় স্কলারদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। লন্ডনে বিভিন্ন দেশের এম্বাসি ও হাইকমিশন তাদের দেশের তথ্য সরবরাহে বিশেষ সহায়তা করেছে। মুসলিম বিশ্বের অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই ইনডেক্স অনন্য।
ব্রিটেনের ফাইন্যান্সিয়াল সেক্রেটারি ও ডিজিটাল মিনিস্টার স্টিফান টিমস এমপি ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাউজ অব কমন্সে মুসলিম ইনডেক্স এর মোড়ক উন্মোচন করেন। তার মতে সমগ্র বিশ্বের মুসলিম এবং নন মুসলিমরা এই প্রকাশনা থেকে উপকৃত হবেন।
প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী: ১৯৯৩-৯৪ এবং ১৯৯৫-৯৬ সালে দুই দফায় সিলেট প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হয়ে সরব ভূমিকা পালন করেছেন।
২০০৩-৫ সালে সাঈদ চৌধুরী লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে নির্বাহী সদস্য হিসেবে ক্লাবের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
বেতার ও টেলিভিশন: ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সাঈদ চৌধুরীর রয়েছে সরব পদচারণা। দেশে অবস্থানকালে বেতার বাংলাদেশে অসংখ্য কথিকা ও প্রবন্ধ প্রচারিত হয়েছে।
লন্ডনে বেতার বাংলা, এমসিআর রেডিও, বাংলা টিভি, চ্যানেল এস, এটিএন বাংলা ইত্যাদিতে অনেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় রয়েছে তার বিশেষ প্রশিক্ষণ, নান্দনিক অভিজ্ঞতা ও খ্যাতি ।
এনটিভি’র ‘হল্ড দ্যা ফ্রন্ট পেইজ’ উপস্থাপনা: সাঈদ চৌধুরীর উপস্থাপনায় এনটিভি লন্ডন থেকে প্রচারিত ‘হল্ড দ্যা ফ্রন্ট পেইজ’ অনুষ্ঠানটি ইউরোপ জুড়ে খ্যাতি ছড়িয়েছে। সংবাদপত্র পর্যালোচনার পাশাপাশি চলমান সংবাদ বিশ্লেষনে রাজনীতি ও অর্থনীতির জটিল ও খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তৃতীয় অ্যাঙ্গেল থেকে মূল্যায়ন বহুদিন দর্শকের মনে থাকবে।
চ্যানেল নাইন কর্তৃক বিশেষ সাক্ষাৎকার: ২০১৩ সালের ২০ আগস্ট চ্যানেল নাইনের সাড়া জাগানো ‘সিম্পলি বিজনেস টক’ অনুষ্ঠানে সাঈদ চৌধুরীর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়। তিন পর্বের অনুষ্ঠানটি মুগ্ধচিত্তে উপস্থাপন করেন প্রাজ্ঞ উপস্থাপক কাউন্সিলর আব্দাল উল্লাহ।
চ্যানেল আই ইউরোপ কর্তৃক ‘আওয়ার প্রাইড’ সম্মাননা: ২০১৫ সালের ২ আগস্ট চ্যানেল আই ইউরোপের জনপ্রিয় ‘আওয়ার প্রাইড’ অনুষ্ঠানে সাঈদ চৌধুরীকে নিয়ে অসাধারণ ডকুমেন্টরি প্রকাশ করা হয়। সাংবাদিক মোহাম্মদ জাকারিয়ার উপস্থাপনা ছিল খুবই প্রাণবন্ত।
আইঅন টিভি: ২০১৯ সালে লন্ডনের জনপ্রিয় আইঅন টিভিতে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স উপস্থাপনা সহ হেড অব নিউজ এন্ড মার্কেটিংয়ের দায়িত্ব পালনে সাঈদ চৌধুরী বিশেষ প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
বিট্স এন্ড বাইট্স : ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ চ্যানেল এস টিভির ‘বিট্স এন্ড বাইট্স’ অনুষ্ঠানে সাঈদ চৌধুরী সম্পাদিত ইউকে এশিয়ান রেস্টুরেন্ট ডাইরেক্টরি নিয়ে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রচার করেন খ্যাতিমান উপস্থাপক আব্দুল হক।
সম্পাদনা ও প্রকাশনা জগতের সূচনা: ছোটবেলা থেকে লেখালেখির সাথে জড়িত থাকার কারনে সাঈদ চৌধুরী স্কুল, মাদ্রাসা এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিকী বা বিশেষ প্রকাশনায় সম্পৃক্ত ছিলেন। সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় দাখিল বিভাগে অধ্যয়নকালে ১৯৮৭ সালে ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে দেয়ালিকা প্রকাশের দায়িত্ব তার উপর অর্পিত হয়। ‘তাহরিক’ নামের এই দেয়ালিকা ছিল প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সাঈদ চৌধুরী সম্পাদিত প্রথম সাহিত্য কাগজ বা সাময়িকপত্র। আলিম ও ফাজিল শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে ছাত্র সংসদের ম্যাগাজিন প্রকাশের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে সাঈদ চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য সম্পাদনা ও প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে- সুরভি (১৯৮৯), স্বপ্নের সাথুয়া (১৯৯৭), দূর্বার (১৯৮৯- যৌথ সম্পাদনা) সিলেট গাইড (১৯৯৩ যৌথ সম্পাদনা), ত্রৈমাসিক সুনিকেত (১৯৯৪), ইসলামিক রিলিফ এজেন্সির স্মারক ‘ইসরা’ (১৯৯৫), সাপ্তাহিক সুনিকেত (১৯৯৮-), সাপ্তাহিক ইউরোবাংলা (২০০১-), ইউকে বাংলা ডাইরেক্টরি (২০০৩), ইউকে এশিয়ান রেষ্টুরেন্ট ডাইরেক্টরি (২০০৪), লন্ডনস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনার কবি মোফাজ্জল করিম সংবর্ধনা স্মারক ‘সায়ন্তন’ (২০০৪), মাসিক সময় (২০০৪-), সময় অনলাইন দৈনিক (২০০৫-), এক্সপো বাংলাদেশ (২০০৫), নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংবর্ধনা স্মারক (২০০৬), ইউকে এশিয়ান রেস্টুরেন্ট ডাইরেক্টরি (২০০৭), বিবিসিসি বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ম্যাগাজিন (২০১০), বিবিসি খ্যাত সাংবাদিক সিরাজুর রহমানের নাগরিক সম্বর্ধনা স্মারক (২০১০) ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডাইরেক্টরি ‘মুসলিম ইন্ডেক্স’ (২০১০)।
বিবিসিসি’র ডাইরেক্টর ও এক্সপো বাংলাদেশ: সাঈদ চৌধুরী ২০১২ সালে বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের (বিবিসিসি) ডাইরেক্টর নির্বাচিত হন এবং ২০১৩-১৪ সালে বিবিসিসির প্রেস ও পাবলিসি ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্যের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্যে ব্যাপক গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যে আয়োজন করা হয় এক্সপো বাংলাদেশ। বিবিসিসির উদ্যোগে ও বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনের সহায়তায় অনুষ্ঠিত এই এক্সপোর অর্গানাইজিং কমিটির একজন দায়িত্বশীল হিসেবে সাঈদ চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ও সিলেট প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত প্রেস কন্ফারেন্সে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন। বাণিজ্য মন্ত্রনালয়, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সঙ্গে বৈঠকেও তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন।
নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের গণসম্বর্ধনা: ড. মুহাম্মদ ইউনুস নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর নরওয়ে থেকে দেশে ফেরার সময় লন্ডনে বিশাল সম্বর্ধনা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান আয়োজনে সাঈদ চৌধুরী মুখ্য ভুমিকা পালন করেন। গণসম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সুভ্যিনির সম্পাদনার কাজটিও করেন তিনি। ২০০৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর লন্ডনের আলেক্সজান্ডার প্যালেসে ড. ইউনুসকে এই সম্বর্ধনা দেয়া হয়েছিল। এতে ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় এমপিসহ দুই সহস্রাধিক জনতা উপস্থিত ছিলেন।
দুর্বার ও সিলেট গাইড: ১৯৮৯ সালে সাঈদ চৌধুরী এবং ওদুদ আনসারী ‘দুর্বার’ নামে ৩৩২ পৃষ্ঠার সাহিত্য সংকলন প্রকাশ করেন। ব্যতিক্রমী এই প্রকাশনায় কবি আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান, সুফিয়া কামাল, আফজাল চৌধুরী, দিলওয়ারসহ দেশের প্রায় সব প্রধান কবিদের কবিতা, দার্শনিক দেওয়ান আজরফ ও ড. কালিপদ সেনের সাক্ষাৎকার, সৈয়দ আলী আহসান ও মাওলানা মুহিউদ্দিন খান সহ জাতীয় লেখকদের প্রবন্ধ এবং দেশ বরেণ্য ব্যক্তিদের জীবনী প্রকাশিত হয়। ১৯৯৩ সালে সিলেটের প্রবীন সাংবাদিক আবদুল হামিদ মানিক, অধ্যাপক কাজী আব্দুর রউফ প্রমুখ ব্যক্তিত্বদের নিয়ে সাঈদ চৌধুরী সম্পাদনা করেন ২৯৪ পৃষ্ঠার প্রামাণ্য গ্রন্থ ‘সিলেট গাইড’। ১৯৯৪ সালে সাঈদ চৌধুরী সম্পাদিত ত্রৈমাসিক ‘সুনিকেত’ও সহসা সিলেটের মানুষ ভুলে যাবে না।
হৃদয়ের জানালা: সাঈদ চৌধুরীর বিয়ে স্মরণিকা ‘হৃদয়ের জানালা’ দেখলেই তার তারুণ্য সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। বিশিষ্ট লেখক-সাহিত্যিক, রাজনীতিক ও সরকারী কর্মকর্তা তাকে নিয়ে চমৎকার মন্তব্য করেছেন এবং শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে লিখেছেন জাতীয় অধ্যাপক দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, কবি ও কথাসাহিত্যিক আল মাহমুদ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর এম হাবিবুর রহমান, গবেষক ও সাহিত্যিক ড. আশরাফ সিদ্দিকী, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক শাহেদ আলী, নাট্যকার ও চলচিত্র অভিনেতা আরিফুল হক, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ও ভয়েস অব আমেরিকার সংবাদদাতা গিয়াস কামাল চৌধুরী, নজরুল গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদ, দক্ষিণ এশিয়া প্রেসক্লাব সভাপতি হাসান শাহরিয়ার, গণতান্ত্রিক পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি পীর হাবিবুর রহমান, সাবেক মন্ত্রী ও ভাষা সৈনিক দেওয়ান ফরিদ গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন গাজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সুলতান মনসুর প্রমুখ। ‘হৃদয়ের জানালা’ সম্পাদনা করেছেন কবি আশরাফ হাসান, এডভোকেট রফিক চৌধুরী ও অধ্যাপক চৌধুরী মুহাম্মদ যুননুরাইন।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা: সাঈদ চৌধুরী ষাটের দশকে সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের নোয়াগাও গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ডা. এম এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী পাকিস্তান আমলে কয়েকবার সিলেট সার্কেল আট-এ স্যারপঞ্চ এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্যারপঞ্চ এসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট নিয়ে ছিল এই বিভাগ। মি. চৌধুরী অত্যন্ত মেধাবী ও দূরদর্শী সালিশ ব্যক্তিত্ব হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। তিনি রাজারগাও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসা ও রাজারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন। উত্তর সিলেটের শিক্ষা ও সংস্কৃতির মুখ্য পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও তার অবদান অনস্বীকার্য। তার সন্তানেরা নিজ এলাকায় ‘সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একাডেমি’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পিতার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে শিক্ষার আলো বিতরণ করে চলেছেন।
সৃজনতরঙ্গ সাঈদ চৌধুরী সংখ্যা: ২০২৩ সালের একুশে বই মেলায় ‘সৃজনতরঙ্গ সাঈদ চৌধুরী সংখ্যা’ পাঠকের নজর কেড়েছে। সময় সম্পাদক কবি ও কথাসাহিত্যিক সাঈদ চৌধুরীকে নিয়ে অসাধারণ এই গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ সমন্বয়ে শিল্পবোদ্ধা ব্যক্তিত্বগণ। সৃজনতরঙ্গ’র উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি আসাদ চৌধুরী, দৈনিক ইত্তেফাকের দীর্ঘকালীন সাহিত্য সম্পাদক কবি আল মুজাহিদী ও দৈনিক সংগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কবি ও ছড়াকার সাজজাদ হোসাইন খান। সৃজনতরঙ্গ’র প্রধান সম্পাদক কবি ও কথাশিল্পী জাকির আবু জাফর, নির্বাহী সম্পাদক কবি ও গবেষক ড. ফজলুল হক তুহিন, সম্পাদনা পরিষদ সদস্য কবি ও প্রাবন্ধিক আশরাফ হাসান, কবি ও গীতিকার আজরা পারভীন সাঈদ, লেখক ও প্রকাশক নাজমুস সায়াদাত, কবি ও ছড়াকার মালেক ইমতিয়াজ, সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার ফাহিম ফয়সাল, লেখক ও ব্যাঙ্কার আমিনুল ইসলাম, লেখক ও প্রকাশক বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল, কবি ও আবৃত্তিকার মামুন সুলতান এবং সাংবাদিক ও কন্ঠশিল্পী আবিদ আজম।
৮৬৪ পৃষ্ঠার ব্যতিক্রমী এই প্রকাশনায় রয়েছে বাংলাদেশের শীর্ষ লেখক-বুদ্ধজীবী এবং সমকালের অনেক শক্তিমান কবি-সাহিত্যিকের মূল্যায়ন। আছে লন্ডনের আলোকিত প্রবাসী ব্যক্তিত্ব এবং বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স নেতৃবৃন্ধের হৃদয়প্রসারী মতামত ও স্মৃতিচারণ। আরো আছে সাঈদ চৌধুরীকে নিবেদিত কবিতা ও ছড়া এবং তার বিশেষ সাক্ষাৎকার।
– রোটারিয়ান রফিক আহমদ চৌধুরী এমএ, এমএম, এলএলবি