নিউ ইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন জোহরান মামদানি

আমেরিকা সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

নিউ ইয়র্ক সিটির নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো মুসলমান ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত নেতা নিউ ইয়র্ক শহরের মেয়র নির্বাচিত হলেন। গত ১০০ বছরের মধ্যে নিউ ইয়র্কের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র হলেন ৩৪ বছর বয়সী মামদানি।

নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম ভাষণে মামদানি বলেছেন, নিউ ইয়র্কের মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছেন, সামথ্যের মধ্যে থাকা একটি শহরের পক্ষে রায় দিয়েছেন। ”বন্ধুরা, আমরা একটি রাজনৈতিক রাজবংশকে উৎখাত করেছি,” সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন। নিউইয়র্ক শহরের নতুন জন্ম হয়েছে বলে তিনি উলেV্খে করেন।

মামদানির বিজয়ের বিষয়টি অনেকটা আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। নির্বাচন উপলক্ষ্যে শহরের বিভিন্ন স্থানে আগেভাগেই উৎসবের আয়োজন শুরু করেছেন মামদানির সমর্থকরা। যেখানে বিপুল সংখ্যক সমর্থক আর ভোটারদের জড়ো হয়ে আনন্দ-উল্লাস করতে দেখা গেছে। ব্রুকলিন প্যারামাউন্ট থিয়েটার যেখানে নির্বাচন উপলক্ষ্যে রাতের পার্টির আয়োজন করেছেন জোহরান মামদানি। উৎসবের আমেজে অসংখ্য মানুষ সেখানে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন।

এদিকে মামদানির বিজয় পার্টিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান শত্রু হিসেবে পরিচিত নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসকে উপস্থিত হয়ে ভিড়ের সঙ্গে সেলফি তুলতে দেখা গেছে। এছাড়া এই নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী কার্টিস স্লিওয়া এরই মধ্যে মামদানিকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমাদের একজন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন,” মঙ্গলবার রাতে সমর্থকদের একটি দলকে স্লিওয়া বলেন। “অবশ্যই আমি তাকে শুভকামনা জানাই, কারণ তিনি যদি ভালো করেন, তাহলে আমরাও ভালো করব।”

নির্বাচন উপলক্ষ্যে শহরের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত ওয়াচ পার্টি এবং বারগুলোতেও ভিড় বাড়ছে। ম্যানহাটনের একটি ওয়াচ পার্টি, যারা কোনও নির্দিষ্ট প্রার্থীর সাথে সম্পর্কিত নয়, সেখানে মামদানির জয়ের আলোচনায় কয়েক দফা করতালি, চিৎকার এবং উল্লাস করতে দেখা গেছে। “এটা একটা বিরাট ব্যাপার,” একজন ব্যক্তি বললেন।

মধ্য ব্রুকলিনের একটি বারে, সাধারণ মানুষকে জোরে জোরে উল্লাস এবং হুররে বলতে শোনা গেছে। কারণ মার্কিন মিডিয়ার প্রাথমিক ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে মামদানি ৫১ শতাংশ এবং কুওমো ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। গত ১০০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে নিউ ইয়র্ক শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র নির্বাচিত হলেন জোহরান মামদানি। নিউ ইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ মেয়রের খেতাব রয়েছে হিউ জে গ্রান্টের, যিনি ১৮৮৯ সালে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এদিকে, সামাজিক মাধ্যম এক্স এ দেয়া এক পোস্টে সিটি বোর্ড অফ ইলেকশনস দাবি করেছে, পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এবার ভোটার উপস্থিতি ছিল সর্বোচ্চ।
“আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে দুই মিলিয়ন ভোট পেয়েছি – ১৯৬৯ সালের পর প্রথমবারের মতো!” পোস্টটিতে বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ঐতিহ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি ও বক্তব্যে কারণে এবারের নির্বাচন আরো বাড়তি আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। এছাড়া মাত্র চৌত্রিশ বছর বয়সে, নিউ ইয়র্ক সিটির সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র হওয়ার দৌড়ে থাকা বামপন্থি প্রার্থী জোহরান মামদানিকে ঘিরে বাড়তি আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। নির্বাচন পূর্ব বেশিরভাগ জরিপেও এগিয়ে ছিলেন এই প্রার্থী।

জোহরান মামদানিকে ঠেকাতে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে সক্রিয় ছিলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প। মামদানিকে নির্বাচিত না করতে ভোটারদের সরাসরি আহ্বানও জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এমনকি, মামদানি মেয়র নির্বাচিত হলে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ নিউ ইয়র্কে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প।

নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র হওয়া জোহরান মামদানির জন্য নানা দিক থেকে উল্লেখযোগ্য। ১৮৯২ সালের পর তিনি শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র হবেন। এছাড়া আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মুসলিম মেয়রও তিনি। শুধুমাত্র এই কারণেই প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এবং রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার বিরুদ্ধে তার জয় অসাধারণ।

কিন্তু তার চেয়েও বেশি, তিনি সেই ধরনের রাজনীতিবিদকে প্রতিনিধিত্ব করেন যা দলের বামপন্থীদের অনেকেই বছরের পর বছর ধরে খুঁজছেন। এদিকে এরই মধ্যে ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে রিপাবলিকান প্রার্থী উইনসোম আর্ল-সিয়ার্সকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট অ্যাবিগেল স্প্যানবার্গার। নিজের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর অ্যাবিগেল স্প্যানবার্গার তার সমর্থক এবং প্রতিপক্ষের উদ্দেশে বলেছেন, “আজ রাতে আমরা সমগ্র বিশ্বকে একটি বার্তা পাঠিয়েছি”। তিনি বলেন, তারা “বিশৃঙ্খলার বাইরে” তাদের কমনওয়েলথ ভার্জিনিয়া বেছে নিয়েছে।

ভার্জিনিয়ার গভর্নর পদে অ্যাবিগেল স্প্যানবার্গারের জয়ের পর ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি বলছে যে “এটি আরেকটি লক্ষণ যে ভোটাররা ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার রিপাবলিকান মিত্রদের উগ্র এজেন্ডাকে প্রত্যাখ্যান করছেন”। স্প্যানবার্গার ভার্জিনিয়ার প্রথম মহিলা গভর্নর হিসেবে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন এবং ডিএনসি তাকে “সমস্ত ভার্জিনিয়ানদের জন্য একজন নেত্রী” বলে উল্লেখ করেছে।

এছাড়া একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, নিউ জার্সির গভর্নর পদে জয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট মিকি শেরিল। তিনি কংগ্রেসওম্যান রিপাবলিকান জ্যাক সিয়াত্তারেলিকে পরাজিত করেছেন এমন একটি প্রতিযোগিতায় যা রাজ্যের জীবনযাত্রার ব্যয়ের উপর কেন্দ্রীভূত ছিল এবং এটিকে ব্যাপকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর একটি গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *