সিলেটের ১৪ আসনে বিএনপির বেশীরভাগই নতুন মুখ

আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

নূর আহমদ সিলেট থেকে :

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছে বিএনপি। এর মধ্যে সিলেট বিভাগের ১৯ আসনের ১৪টি রয়েছে। সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলটির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর থেকে সারা দেশের মতো সিলেট বিভাগের নির্বাচনী এলাকাগুলোতেও উৎসবে মেতেছেন কর্মী সমর্থকরা। অবশ্য সুনামগঞ্জ-২ ও ৪, সিলেট-৪ ও ৫, হবিগঞ্জ-১ এই আসনের ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। ফলে এসব আসনে বিএনপির প্রার্থীরা এখনো আশায় বুক বেধে আছেন।

প্রার্থী ঘোষণার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত নির্বাচনী ট্রেনে চললো বিএনপি। সিলেট বিভাগে ১৪ প্রার্থীর মধ্যে দু’জন সাবেক সংসদ সদস্যও রয়েছেন। রয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। সিলেটের ঘোষিত ৪টি আসনের মধ্যে একমাত্র মুক্তাদির ছাড়া বাকী ৩ জনই এবার প্রথম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন।

ঘোষিত তালিকায় সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে ১৪টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। এরমধ্যে সিলেট-১ (মহানগরের একাংশ ও সদর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। ফলে মুক্তাদির বলয়ে উৎসব বিরাজ করছে। এই আসন থেকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের দু’বারের নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসীনা রুশদীর লুনা মনোনয়ন পেয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ডেপুটি রেজিস্ট্রার তাহসিনা রুশদীর লুনাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। পরে বিএনপি এই আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে গণফোরামকে ছেড়ে দেয়। বিএনপির সমর্থনে গণফোরামের মোকাব্বির হোসেন খান এ আসনে বিজয়ী হন।

আলোচিত সিলেট-২ থেকে গত কয়েক মাস আগে তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা লন্ডনপ্রবাসী হুমায়ুন কবির নির্বাচন করার উদ্দেশ্যে প্রচারণা শুরু করেছিলেন। তবে লুনা অনুসারীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে মাঠ ছাড়েন হুমায়ুন কবির। সবশেষে ইলিয়াস পত্নী লুনাই মনোনয়ন পান বিএনপির। অবশ্য, হুমায়ুন কবিরকে দলের যুগ্ম মহাসচিব (আন্তর্জাতিক) পদে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

সিলেট-৩ (মহানগরের একাংশ, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক মনোনয়ন পেয়েছেন। এই আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীদের সংখ্যা ছিলো বেশি। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন- জেলা সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম, সিলেট মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম হক আদনান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামাল। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিকই মনোনয়ন পান।

সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার) জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন। ছাত্রদল থেকে উঠে আসা এমরান চৌধুরীর মনোনয়ন লাভ ছিল বিএনপির জন্য অনেকটাই চমক। এই আসনেও বিএনপির একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন। এই আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যে রয়েছেন ২০১৮ সালে দলের মনোনীত প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফয়সল আহমদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী, সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, সাবেক এমপি ড. সৈয়দ মকবুল হোসেনের কন্যা সৈয়দা আদিবা হোসেন অন্যতম। শেষ পর্যন্ত এমরান চৌধুরী মনোনয়ন পান।

সিলেট জেলার সিলেট-৪ ও ৫ আসনে এখনো কাউকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। এর মধ্যে সিলেট ৪ এ মনোনয়ন প্রত্যশীরা প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা মিফতাহ্ সিদ্দিকী, মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও গোয়াইনঘাটের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী।

সিলেট-৫ আসনে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন), জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী ও হারিছ চৌধুরীর কন্যা যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন।

অন্যদিকে, সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা, মধ্যনগর, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ) আসনে সাবেক তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুল হক, সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ) আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ ও সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক ও দোয়ারাবাজার) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন। সুনামগঞ্জ-৫ আসনে ২০১৮ সালে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান। এবার তিনি এ আসনের জন্য দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। সুনামগঞ্জ-২ ও ৪ আসন কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি।

মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ি) আসনে নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু, মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে সওকত হোসেন সকু (যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী), মৌলভীবাজার-৩ (সদর ও রাজনগর) আসনে নাসের রহমান ও মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ) আসনে মোঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী।

হবিগঞ্জ-২ (আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং) আসনে ডা: সাখাওয়াত হাসান জীবন, হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে মোঃ জি কে গৌছ ও হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট ও মাধবপুর) আসনে এস এম ফয়সাল। হবিগঞ্জ-১ আসনটিতে এখনো প্রার্থী ঘোষণা হয়নি।

এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জি. কে. গৌছ বলেন, এটা চূড়ান্ত মনোনয়ন। এর বাইরে যাওয়ার কারো সুযোগ নেই। কারণ আমরা সব প্রার্থীগণ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছি। সবমিলিয়েই আমরা ঐক্যবদ্ধ বিএনপি পরিবার। দেশ ও জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করতে সবাই একযোগে কাজ করবো।

তিনি বলেন, বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে ১৪ টি তে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকীগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। কয়েকটি আসন জোটকেও ছাড় দেয়া হতে পারে। সবাইকে মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *