সাঈদ চৌধুরী
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আবারো ‘আমীর’ নির্বাচিত হয়েছেন জননেতা ডা: শফিকুর রহমান। ইসলামী ঐক্য ও সামাজিক সংহতির পক্ষে এবং দূর্নীতি বিরোধী সংগ্রামে বাংলাদেশে এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত রাজনীতিক ডা: শফিকুর রহমান তৃতীয়বারের মতো আমীর নির্বাচিত হলেন।
জামায়াতে ইসলামীর অভ্যন্তরীণ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে সংগঠনের ‘আমীর’ ঘোষণা করেন। ৯ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশের রুকনদের (সদস্য) কাছ থেকে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়। সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়ে ২০২৬-২০২৮ কার্যকালের জন্য ‘আমীর’ নির্বাচিত হয়েছেন ডা: শফিকুর রহমান।
জামায়াতের তৃণমূল নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জামায়াত-শিবিরের অবিস্মরণীয় অবদান, সারাদেশে সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দানবীয় সরকার পতনে কৌশলী ও কার্যকর ভূমিকা পালনে ডা: শফিকুর রহমানের অনন্য অবদানের স্বীকৃতি মিলেছে দলীয় নির্বাচনের ফলাফলে।
রাষ্ট্রের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আধুনিক ও প্রাসঙ্গিক নীতিমালা গ্রহণ, জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং যুগ জিজ্ঞাসার জবাব দেওয়ার মতো যোগ্য নেতা হিসেবে ডা: শফিকুর রহমান ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছেন। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলাপকালে তা প্রতীয়মান হয়েছে যে, জামায়াতের সাথে অপরাপর ইসলামী দল সমূহ এবং মুক্ত চিন্তার অন্যান্য রাজনৈতিক দল মিলে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্টে পরিণত করার স্বপ্ন জাগাতে ডা: শফিকুর রহমান বেশ সফল ভাবে এগোচ্ছেন।
আমেরিকা ও ইউরোপ-সহ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশী প্রতিনিধি দল গত চার মাসে ডা: শফিকুর রহমানে সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠক সমূহে তিনি আমাদের রাষ্ট্রের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা, সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বিদেশী কূটনীতিকগণ আমীরে জামায়াতের কথায় ও আচরণে এবং দলীয় কর্মকাণ্ডে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন।
বিগত সরকার ১৬ বছর ধরে সংবাদমাধ্যমে এবং বিভিন্ন ধর্ম ও শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে জামায়াত বিরোধী যে ভুল ধারণার জন্ম দিয়েছে, ডা: শফিকুর রহমান তা নিরসনে দ্রুততম সময়ে বেশ সফলতা দেখিয়েছেন। কর্মজীবী নারীদের বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা সম্পর্কে জঘন্যভাবে মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে জামায়াতের মহিলা নেতৃত্বকে সামনে এনে আমীরে জামায়াত উচ্চ শিক্ষিত নারী সমাজের ধারণা পাল্টে দিতে সক্ষম হয়েছেন। ডাকসু, জাকসু, রাকসু ও চাকসু নির্বাচনে তার প্রতিফলন ঘটেছে।
সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার এবং সভা-সমাবেশের আলোচনায় রাষ্ট্র সংস্কার ও আধুনিক যুগ জিজ্ঞাসার জবাব প্রদানে ডা: শফিকুর রহমানের সক্ষমতা সর্ব মহলে হচ্ছে প্রশংসিত। রাষ্ট্র ক্ষমতায় নৈতিকতা, জনআস্থা এবং প্রজ্ঞার ভিত্তিতে পরিচালনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটি দ্রুত বিকশিত জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণার মাধ্যমে রাজনীতিতে তিনি রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা পালনকারী নেতা হিসেবে তার ও দলের সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে বেশ সফল হয়েছেন।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে আমাদের ঐতিহ্য বিনাশে একটি কুচক্রী মহল সর্বদা সক্রিয় রয়েছে। তারা হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্র করছে। এর মোকাবেলায় আমীরে জামায়াত মুক্ত কন্ঠে ঐক্যের ডাক দিয়ে চৈতন্যের সৃষ্টি করেছেন। বক্তব্যে ও আচরণে তিনি ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা অন্য সকল ভেদাভেদ দূর করে দেশের অভ্যন্তরীণ ঐক্য, বৈষম্যহীন সমাজ, ন্যায়ভিত্তিক শাসন এবং সকল নাগরিকের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার বিষয়ে জনগণকে আশাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত করে চলেছেন। বাংলাদেশের হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা এই প্রথম দেশের বিভিন্ন শহরে ব্যাপকতর আয়োজনের মাধ্যমে জামায়াতের সমাবেশে অংশ নিয়ে তাদের সমর্থন জানাচ্ছে।
ডা. শফিকুর রহমান ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে স্থানীয় বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৬ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৮৩ সালে এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ইসলামী আন্দোলন ও বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে বিস্তর অধ্যয়ন করেন। দেশ-বিদেশে সভা ও সেমিনারের অংশ নিয়ে তিনি চিন্তাশীল, গভীর এবং গঠনমূলক আলোচনায় জ্ঞান ভিত্তিক মতামত উপস্থাপন ও যুক্তির মাধ্যমে মতবিনিময় করেন।
* সাঈদ চৌধুরী দৈনিক সময় ও মানব টিভি সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক

