ইসরায়েলি হামলায় গুড়িয়ে গেছে গাজার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বহুতল ভবন

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

গাজা সিটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বহুতল ভবনটি গুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ। চলমান যুদ্ধে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে প্রথম বড় কোনো টাওয়ারকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করলো আইডিএফ।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ তার এক্স একাউন্টে ভবনটি ধসে পড়ার একটি ভিডিও প্রকাশ করে তার ক্যাপশনে লিখেছে- “আমরা হামলা চালিয়ে যাচ্ছি।”

সম্প্রতি গাজায় সামরিক অভিযান আরো বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের দাবি, হামলায় ধংস হয়ে যাওয়া সুসি টাওয়ারটি হামাস ব্যবহার করছিল।

যদিও, এ দাবি অস্বীকার করেছে হামাস। তবে, হামলায় হতাহতের সংখ্যা এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শনিবারের ওই হামলার আগে ইসরায়েল লিফলেট ছড়িয়ে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণের একটি ‘মানবিক জোনে’ সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।

সোশ্যাল মিডিয়ার এক পোস্টে আইডিএফ–এর আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিখাই আদ্রেয়ি স্থানীয়দের খান ইউনিস এবং উপকূলরেখার মধ্যবর্তী এলাকা আল-মাওয়াসিতে সরে যাওয়ার আহবান জানান।

আইডিএফ এর আগেও অনেকবার বেসামরিক নাগরিকদের সেখানে যেতে উৎসাহিত করেছে। তাদের দাবি, সেখানে চিকিৎসা সেবা, পানি ও খাদ্য সরবরাহ করা হবে।

তবে, জাতিসংঘ বলছে, আল-মাওয়াসির ক্যাম্পগুলোতে উপচে পড়া ভিড়, অনিরাপদ এবং দক্ষিণের হাসপাতালগুলো ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত চাপের মুখে।

মঙ্গলবার, আল-মাওয়াসিতে পানি আনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পাঁচজন শিশু নিহত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা ইসরায়েলি ড্রোন হামলার শিকার হন। এ বিষয়ে ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, তারা ওই ঘটনা পর্যালোচনা করছে।

এদিকে, সুসি টাওয়ারটি হলো টানা দুই দিনে ধ্বংস হওয়া দ্বিতীয় বহুতল ভবন।

এর আগে শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শহরের আল-রিমাল এলাকায় অবস্থিত মুশতাহা টাওয়ারের নিচতলায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর ভবনটি ধসে পড়ে।

আইডিএফ জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি কমাতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে ছিল ‘আগাম সতর্কতা ও ‘সুনির্দিষ্ট যুদ্ধাস্ত্রের’ ব্যবহার।

তবে ফিলিস্তিনিদের দাবি, মুশতাহা টাওয়ারে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছিল। গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েল ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার নীতি’ অবলম্বন করছে।

স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, গত এক মাসে ইসরায়েলি হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞে শহরের বেশ কিছু অংশের কিছু এলাকা একেবারে ধংস হয়ে গেছে।

গাজা সিটির আবাসিক ও বাণিজ্যিক টাওয়ারগুলো শহরের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রতীক ছিল। যেখানে জড়িয়ে ছিল ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ও একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ার আশা।

১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে গাজায় পাঁচ তলারও বেশি বহুতল ভবন গড়ে উঠতে শুরু করে। যার ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নির্বাসন থেকে গাজা এবং পশ্চিম তীরের কিছু অংশে ফিরে আসতে শুরু করেন।

১৯৯৪ সালে ইসরায়েল গাজার বেশিরভাগ এলাকা থেকে সরে যাওয়ার পর গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাবাসন বাড়তে থাকে। ফলে তখন শহরটি আরো সম্প্রসারিত হয়।

তখন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নির্মাণ খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে। এমনকি, তখন ওই এলাকার পুরো পাড়াগুলোর নামকরণও করা হয় টাওয়ারগুলোর নামে।

গত জুলাই মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েল পুরো গাজা উপত্যকা দখল করবে।

জাতিসংঘের হিসাব বলছে, গাজা সিটিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এখনো রয়ে গেছেন। যেখানে গত মাসে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছিল।

সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, হামলা চলমান থাকলে খুব দ্রুত আরো বড় ‘বিপর্যয়’ নেমে আসতে পারে।

২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় নতুন ভাবে সামরিক অভিযান শুরু করে। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৬৩,৭৪৬ জন নিহত হয়েছেন।

এছাড়া গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ চলাকালে অপুষ্টি ও অনাহারে এখন পর্যন্ত ৩৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *