সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে লেখক ও সংগঠক কেএম আবুতাহের চৌধুরীর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘রঙের দুনিয়া’। লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমিতে আজকের প্রকাশনা অনুষ্ঠান প্রবাসিদের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে।

‘রঙের দুনিয়া’ বলতে সাধারণত জগতের রঙ বোঝায়। তবে এখানে রূপক হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে। লেখক আমাদের চারপাশের দৃশ্যমান জগৎকে ছড়া ও কবিতার মাধ্যমে বিভিন্ন রঙে উপস্থাপন করেছেন। শুধুমাত্র বস্তুগত রংকেই তিনি উপস্থাপন করেন নি, বরং এটি মানুষের আবেগ, অনুভূতি এবং সংস্কৃতির সাথেও সম্পর্কিত। এর আগেও তিনি ‘গড়ে তুলি সুন্দর পৃথিবী’ নামে একটি চমৎকার কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন।

লেখক আবুতাহের চৌধুরী সাংবাদিক-কলামিস্ট হিসেবেই সুপরিচিত। একজন মানবতাবাদী সংগঠক হিসেবে তার জুড়ি মেলা ভার। তিনি একজন আত্মপ্রত্যয়ী কর্মবীর। প্রবাসিদের অধিকার আদায়ে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। কমিউনিটির প্রাত্যহিক ব্যথা-বেদনার সাথী, নিবেদতিপ্রাণ সমাজসেবী।
গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল (জিএসসি) ইউকে’র সাবেক চেয়ারপার্সন আবুতাহের চৌধুরী কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সংগঠনকে গণমানুষের কাছে নিয়ে গেছেন। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত জিএসসি’র প্রথম আহবায়ক কমিটির সদস্য আবুতাহের চৌধুরী শুরুতে সাইথ ইস্ট রিজিয়নের সাধারণ সম্পাদক, তারপর ৯৩ সালে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক, ৯৫ সালে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, ৯৭ সালে আবারো সাধারণ সম্পাদক, ২০০০ সালে চেয়ারপার্সন, ২০০২ সালে আবারো চেয়ারপার্সন ও পরে পেট্রন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জিএসসি’র জন্য আবুতাহের চৌধুরী গ্রেট বৃটেনের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ঘুরেন, উজানে সাঁতার কাটা যুদ্ধজয়ী সৈনিকের মত। বিলেতের বাংলা কমিউনিটিতে তিনি অসীম সাহস আর ধৈর্যের প্রতিচ্ছবি।
২০০০ সালে বিলেতে আসার পর যে কয়জন দৃঢ় প্রত্যয়ী, কর্মঠ ও ব্যক্তিত্ববান মানুষের সাথে আমি ঘনিষ্ট হই, আবু তাহের চৌধুরী তাদের অন্যতম।সাদামাটা ও সাংস্কৃতিক আবহে জীবন যাপনকারী এই মানুষটির চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সৃজনশীলতা তাকে আপন করে তুলে সকলের কাছে। জনসেবার ব্রত নিয়ে মানুষজনকে সহায়তা দিতে কাজ করেন অহর্নিষ।

বর্ণিল কর্মজীবনের অধিকারী আবুতাহের চৌধুরী ২০০০ সালের ২৫ অক্টোবর ‘বেস্ট কমিউনিটি লিডারশীপ এওয়ার্ড’ লাভ করেন। সমগ্র বৃটেনের কালো সম্প্রদায়ের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এথনিক বিজনেস ডেভলাপমেন্ট কর্পোরেশন (ইবিডিসি) এই এওয়ার্ড প্রদান করে। ব্লাক হিস্ট্রি মান্থ উপলক্ষে ‘দ্যা কমিউনিটি ডাইভার্সিটি এওয়ার্ড ২০০০’ এর আওতায় বৃটেনের কালো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতীয়ভাবে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল ধরে অবদান রাখছেন এবং কমিউনিটির উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদেরকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সম্মানিত করা হয়। এর অন্যতম হচ্ছে ‘কমিউনিটি লিডারশীপ এওয়ার্ড’। এওয়ার্ডটিতে ছিল ব্রোঞ্জের নির্মিত পদক ও নগদ অর্থ। এশিয়ানদের মধ্যে একমাত্র তিনিই এই সম্মাননা লাভ করেন।
ঐতিহাসিক মিলেনিয়াম ডোমের স্কাই স্কেপে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এতে এশিয়ান, আফ্রিকান ও ক্যারিবিয়ান কমিউনিটির প্রায় পাঁচ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিলেন। গ্রেটার লন্ডন অথরিটি অুনষ্ঠানটি স্পনসর করে। কমিউনিটি ডাইভার্সিটি এওয়ার্ড ২০০০ স্পনসর করে বার্ণেট বারা কাউন্সিল, ক্যামডেন বারা কাউন্সিল, ব্ল্যাকনেট, ব্ল্যাক ভেরাইটি টেলিভিশন, বিজনেস লিংক নেটওয়ার্ক কোম্পানী, চয়েস এফএম রেডিও, ই এম এফ, এথনিক মিডিয়া গ্রুপ, জিএলএ, লন্ডন আর্টস বোর্ড ও মানিগ্রাম।
এওয়ার্ড প্রদানের জন্য সমগ্র কালো সম্প্রদায় থেকে নমিনেশন আহবান করা হয়। কমিউনিটি লিডারশীপ এওয়ার্ডের জন্য ইবিডিসি কয়েকশ নমিনেশন গ্রহণ করে। প্রথমে এশিয়ান, আফ্রিকান ও ক্যারিবিয়ানদের মধ্য থেকে তিনজন কমিউনিটি নেতাকে শর্টলিষ্ট করা হয়। এরপর চূড়ান্ত পর্বে আবুতাহের চৌধুরী সম্মানজনক এই এওয়ার্ড লাভ করেন।
এওয়ার্ড বিতরণী অনুষ্ঠানে কো-অর্ডিনেটর ছিল আর্চ বিশপস কাউন্সিল অব দ্যা চার্চ অব ইংল্যান্ড, ব্ল্যাক ট্রেনিং এন্ড এন্টারপ্রাইজ গ্রুপ, চাইনিজ ইন বৃটেন ফোরাম, চার্চ আরবান ফান্ড, কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান অর্গানাইজেশন, কাউন্সিল ফর এথনিক মাইনরিটি, সেন্টারপ্রাইজ ট্রাস্ট লিমিটেড, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ভলান্টারী অর্গানাইজেশন, নর্থ ওয়েস্ট ওয়ান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সী, প্রগ্রেস ট্রাস্ট, ওয়াই ইন চাইনিজ, ওম্যান এসোসিয়েশন ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, আগের বছর কমিউনিটি ডাইভার্সিটি এওয়ার্ডের আওতায় কালো সম্প্রদায়ের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলাকে স্পেশিয়াল এওয়ার্ড ও এক হাজার পাউন্ডের চেক প্রদান করা হয়।
আমি যখন ২০০১ সালে সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা প্রকাশের উদ্যোগ নেই তখনও আবুতাহের চৌধুরীর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। আমরা একটি বোর্ড গঠন করি এবং তিনি চেয়ারম্যান ও প্রধান সম্পাদক মনোনীত হন। আমাদের প্রতিদিনের সংবাদ পরিকল্পনা ও কমিউনিটি নিউজে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তিনি।
আবুতাহের চৌধুরীর সাথে জিএসসি’র অনেক অনুষ্ঠানে এবং আমার সম্পাদিত ইউকে বাংলা ডাইরেক্টরি, ইউকে এশিয়ান রেষ্টুরেন্ট ডাইরেক্টরি, মুসলিম ইন্ডেক্স ও সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা প্রকাশের সময় প্রচার কর্মকান্ডে ইউকে এন্ড আয়ারল্যান্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরেছি। সর্বত্রই দেখেছি, তিনি ব্যাপক পরিচিত ও সমধিক জনপ্রিয়।
আবুতাহের চৌধুরী সাপ্তাহিক লণ্ডন বাংলা’র সম্পাদক ও বাংলা পোষ্টের প্রধান সম্পাদক হিসেবেও কমিউনিটির বিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি চ্যানেল এস টেলিভিশনে ‘ফেলে আসা স্মৃতি’ অনুষ্ঠানে আমাদের অগ্রজদের প্রবাস জীবনের ইতিহাস ও অবদান তুলে ধরেন। অর্ধ শতাধিক এপিসুড উপস্থানের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে তিনি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তিনি ২0১৫ সাল থেকে ইক্বরা বাংলা টিভিতে ‘অগ্রদূত’ অনষ্ঠান উপস্থাপন করে বিশেষ অবদান রাখছেন।
আমি বিলেত এসেই দেশের আদলে সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের কার্যক্রম এখানে চালু করেছিলাম। আবুতাহের চৌধুরী শুরু থেকেই আমাদের সাথে ছিলেন। সংলাপের মাসিক সাহিত্য আসরে নবীন-প্রবীণ লেখিয়েরা অংশ গ্রহণ করতেন। তিনি সংলাপ ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম মেম্বার হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রেনেসাঁ সাহিত্য মজলিস ইউকে’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আবুতাহের চৌধুরী টাওয়ার হ্যামলেটস এসপায়ার পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে বৃটেনের রাজনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে ২০২২ সালে নির্বাহী মেয়র ও ২৪জন কাউন্সিলর এসপায়ার পার্টি থেকে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন। মেয়র লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে উন্নয়ন ক্ষেত্রে এই কাউন্সিল গ্রেট বৃটেনে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে।
আবুতাহের চৌধুরী বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ইউকের সভাপতি, ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি, ভয়েস ফর জাস্টিস ইউকের সেক্রেটারী সহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত। তিনি ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশিজ এর মিডিয়া ডাইরেক্টর, অর্গানাইজেশন ফর দ্য রিকগনিশন অব বাংলা অ্যাজ এন অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনস্- এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, বঙ্গবীর ওসমানী মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন ইউকে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, বৃটিশ বাংলাদেশী হিস্ট্রি এন্ড হেরিটেজ কাউন্সিল ইউকের আহবায়ক, গরীব এন্ড ইয়াতিম ট্রাস্ট ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট, আল হেরা ফাউন্ডেশন ইউকের ট্রাস্টি, পিস বিল্ডার চ্যারিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
তিনি সিলেট বিভাগ বাস্তবায়ন আন্দোলন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বিরোধী আন্দোলন, প্রবাসিদের ভোটাধিকার ও দ্বৈত নাগরিকত্ব রক্ষার আন্দোলন, প্রবাসী সুরত মিয়া ও মোগল কোরোশীকে হত্যার এবং ব্যারিষ্টার রেজওয়ানকে বিমান বন্দরে নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, মনিকা আলীর সমাজ বিরোধী ব্রিকলেন উপন্যাস ও ফিল্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ওসমানী স্কুলের নাম রক্ষার সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। তিনি রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধেও ব্যাপক ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেন ।
জীবনভর সমাজসেবী আবুতাহের চৌধুরী সমাজ হিতকর কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেছেন। ১৯৯৭ সালে প্রিন্স চার্লসের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত হয়ে সেন্ট জেমস প্যালেসে অনুষ্ঠিত রাজ পরিবারের নৈশভোজে অংশ গ্রহন করেছেন। ১৯৯৯ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বাইলিংগুয়াল ইন্সটিটিউট কর্তৃক তাকে ‘কমিউনিটি লিডারশীপ এওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। একই সালে তিনি বিলেতের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল এস এ্ওয়ার্ড লাভ করেন। সমাজ সেবায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্যে টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিল তাকে সিভিক এ্ওয়ার্ড প্রদান করে।
আবু তাহের চৌধুরী বাংলাদেশ থেকে সিলেট রত্ন এওয়ার্ড লাভ করেন। তিনি বৃটিশ বাংলাদেশী হু‘জ হু এওয়ার্ড, বৃটেনের হাউজিং ফেডারেশন থেকে স্টার ইন দ্যা কমিউনিটি এওয়ার্ড এবং সোয়াস কমিউনিটি লিডারশিপ ফাউণ্ডেশন থেকে কমিউনিটি লিডারশিপ এওয়ার্ড লাভ করেন ।
আবু তাহের চৌধুরীর আসল নাম কালাম মাহমুদ আবু তাহের চৌধুরী। ১৯৫৬ সালে বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার থানার অন্তর্গত ইটা সিংকাপনের এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে তিনি জন্ম গ্রহন করেন। পিতা হাফেজ মাওলানা আব্দুল কাদের চৌধুরী সিংকাপনী ছিলেন একজন প্রখ্যাত আলেম, পীরে কামেল ও বহু ইসলামিক গ্রন্থ প্রণেতা। ইলমে লাদুনী ও তাসাউফের সাধক ছিলেন তিনি।
আবুতাহের চৌধুরীর বড় চাচা প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও খেলাফত নেতা, সাংবাদিক ও বাগ্মী মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী সিংকাপনী, মেঝো চাচা মাওলানা আব্দুল খালেক চৌধুরী সিংকাপনী ও ছোট চাচা মাওলানা আব্দুল আজিজ চৌধুরী সিংকাপনী সমাজে ব্যাপক ভাবে পরিচিত ও সমাদৃত। সর্ব সাধারনের কাছে ইটার মাওলানা বা সিংকাপনী ব্রাদার্স হিসাবে সুপরিচিত।
আবুতাহের চৌধুরী মৌলভী বাজার শহরের কাশিনাথ আলাউদ্দিন হাই স্কুল থেকে ১৯৭১ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৩ সালে মৌলভী বাজার কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং (পাওয়ার ) সার্টিফিকেট অর্জন করেন। বাংলাদেশের কর্ম জীবনে তিনি ইলেকট্রিকেল সাব ইন্জিনিয়ার হিসাবে মনু রিভার প্রজেক্টে কাজ করেছেন। পরে চট্টগ্রামে করিম পাইপস লিমিটেডে ইন্জিনিয়ার হিসাবে কিছুদিন ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী সাগরিকা রোডে আরো তিনজন সাথী নিয়ে ‘সুরমা মটরস লিমিটেড‘ নামে সিলেটী মালিকানাধীন প্রথম স্টিল বডি বিল্ডার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন ।
আবুতাহের চৌধুরী ছেলেবেলা থেকেই প্রতিবাদী ও সংগ্রাম মুখর ছিলেন। তিনি কাশিনাথ আলাউদ্দিন হাই স্কুল শাখা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ও শ্যামরার বাজার আঞ্চলিক শাখার সেক্রেটারী ছিলেন। ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি মুজিববাদী ছাত্রলীগ থেকে মৌলভীবাজার কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাহিত্য সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তিনি বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র পরিষদ সিলেট জেলা শাখার সেক্রেটারী এবং পলিটেকনিক ছাত্র সংসদে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছাত্র সংসদে সাধারন সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন।
আবুতাহের চৌধুরী পাকিস্তান আমলে ‘দেশ ও কৃষ্টি‘ নামের বিতর্কিত বই বাতিলের আন্দোলনে ও স্কুল ধর্মঘট করে চিলড্রেন পার্কে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখেন। এসময় সাবেক ছাত্র নেতা ও সাবেক এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর তাঁর সাথে ছিলেন।
১৯৭১ সালে তরুণ বয়সে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কাজ করেছেন। ২৭ মার্চ একাটুনা ইউনিয়ন থেকে ছাত্র-জনতার মিছিল নিয়ে পাক বাহিনীকে প্রতিহত করার দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা চালান। ১০ হাজার মানুষের মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি।
আবুতাহের চৌধুরী বৃটেনে প্রিন্স ফিলিপ্সের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ এ্যাপেক্স ক্লাবের সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যোগ দেবার জন্য ৪ মে ১৯৮৪ সালে গ্রুপ ডেলিগেশনের নেতৃত্ব দিয়ে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্সে যোগ দিতে ইংল্যান্ডে আসেন। তারপর এখানে তিনি সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতা পেশায় জড়িয়ে পড়েন। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে শিক্ষক হিসেবে গত ৩২ বছরে তিনি বহু মানুষকে বাংলা ভাষা শিক্ষা দিয়ে দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহি করে তুলেছেন।
* সাঈদ চৌধুরী দৈনিক সময় ও মানব টিভি সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক