ধানমন্ডি ৩২ নম্বর-সহ আওয়ামী স্থাপনায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সন্ধ্যার পর ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন, পলাতক প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বাসভবন ‘সুধাসদনে’ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রংপুরসহ দেশের আরো কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি এবং শেখ মুজিবের ম্যুরাল ও শেখ পরিবারের নামের প্রতিষ্ঠান সমূহের সাইনবোর্ড ভাঙচুর করেছে ক্ষুব্ধ জনতা।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ছয় মাস পর ছাত্র সমাজের উদ্দেশে শেখ হাসিনার ভাষণ দেয়ার কথা জানানো হয় গতকাল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সে খবর। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস, অন্যান্য উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলননের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম-সহ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবীদের কড়া সমালোচনা ও বিষোদগার শুরু হেয়।

এর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তীব্র সমালোচনা করতে দেখা যায় অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী কর্মকান্ডের নিন্দা শুরু হয়। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সামাজিক মাধ্যমে জানানো হয় ঠিক যে সময়ে শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়া শুরু করবেন, তখনই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ভবনে ভাঙচুর চালানো হবে। মূলত গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারকে ঘিরে ভাঙচুরের মুখে পড়েছে আওয়ামী আস্তানা।

বুধবার সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, “আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।” এরপর ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার অভিমুখে বুলডোজার মিছিল কর্মসূচি দিয়ে প্রচারণাও চালানো হয় বিভিন্ন আইডি থেকে। ‘বঙ্গবন্ধু জাদুঘর’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসা ৩২ নাম্বার বাড়িটি পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরপরই জনরোষের শিকার হয়েছিল। সেদিনও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ছিলেন বিক্ষোভকারীরা।

বুধবার রাতভর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীরা স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। বুলডোজার দিয়ে ভবনটির একাংশ ভেঙে দেয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালেও ভবনটিকে বুলডোজার দিয়ে ভাঙতে দেখা যায়। সর্বত্র ছাত্র-জনতা স্লোগান দিতে থাকে ‘স্বৈরাচারের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’।

ধানমন্ডিতে থাকা শেখ হাসিনার আরেকটি বাসভবন সুধাসদনেও হামলা চালানো হয়। ভবনের দুটি তলায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
খুলনা মহানগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত ‘শেখ বাড়ি’ নামে পরিচিত একটি স্থাপনাও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এটি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি। বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হয় কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়িও। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ভোলার বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালনো হয়।

চট্টগ্রাম ও সিলেটে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজে স্থাপিত শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয় ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ‘মুজিব ম্যুরাল’। এছাড়াও দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের নামফলক ভেঙে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে আছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

সিলেটেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা শেখ মুজিবের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের একটি বুলডোজার দিয়ে ম্যুরাল ভাঙা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।

কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়িও বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার রাত ১০টার দিকে শহরের পিটিআই সড়কে তিনতলা বাড়িটি ভাঙা শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে। এরপর সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খানের শহরের কদমতলা সাততলা বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর করেন।

খুলনা মহানগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত ‘শেখ বাড়ি’ নামে পরিচিত একটি স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই বাড়িটি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি। বাড়ি ভাঙার কাজে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের দু’টি বুলডোজার ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানান তারা। এই বাড়িতে শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সোহেল উদ্দিনসহ আরও অনেকে থাকতেন। গত পাঁচই অগাস্টের আগেই তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। গত চার ও পাঁচই অগাস্ট বাড়িটিতে দফায় দফায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। এরপর বাড়িটিতে শুধু কংক্রিটের অবকাঠামোই অবশিষ্ট ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *