অনুবাদ: মাসুম খলিলী
এক. আপনি যদি কষ্ট পান তবে সর্বশক্তিমান আপনাকে সুস্থ করবেন। যদি আপনি হারিয়ে যান, শুধুমাত্র তিনিই আপনাকে পথ দেখাতে পারেন। আপনি যদি আপনার জীবনে অন্ধকার দেখতে পান তবে একমাত্র তিনিই হতে পারেন আলোর বাতিঘর। আপনি যদি সন্তুষ্ট হন তবে শুধুমাত্র তিনিই আপনাকে আরও সুখ ও মঙ্গল দিতে পারেন। আপনার জীবনে তিনি থাকলে, আপনার সবকিছুই আছে।
দুই. আপনি আজ যেখানে আছেন সেখানেই আপনি থাকবেন না। কোন কিছুই টিকে থাকে না। মহান আল্লাহ আমাদের এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমনকি অন্ধকার রাতও শেষ হবে এবং প্রতিটি নতুন দিনের সাথে সূর্য উঠবে। আপনার হৃদয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখুন। তিনি ঠিক আপনার সাথেই আছেন।
পূনশ্চঃ
এক. এমনকি হয় সুন্দরতম আচরণের মানুষেরও একটি সীমা আছে। তাদের খুব বেশি দূরে ঠেলে দেবেন না; এই সীমা অতিক্রমের চেষ্টা করবেন না। একবার সীমানা অতিক্রম করা হলে, তারা কখনই সেই একই ব্যক্তি হবে না, যা আপনি জানতেন। যদি আপনি সদয় হতে না পারেন, চুপ থাকুন। মানুষকে কষ্ট দিবেন না।
দুই. আপনি অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন বলে হাল ছেড়ে দিতে উদ্যত হবেন না। কেন আপনি তা করবেন? আপনি কি সর্বশক্তিমানের প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছেন? তিনি আপনাকে এমন বোঝা দেবেন না যা আপনার সহ্য করার ক্ষমতা নেই। তার উপর আস্থা রাখুন। তিনি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছেন এবং আপনার উপর তিনি নজর রাখছেন। চলতে থাকুন, আপনার অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে।
তিন. অহংকারের খারাপ দিক হলো সব সময় বিশ্বাস করতে থাকেন যে, আপনি সর্বদা ঠিক আছেন। আপনি এমনভাবে থাকেন যেন চারপাশের সব কিছু জানেন। আত্মবিশ্বাস মানে হলো বিনয়, শান্ত থাকা এবং শোরগোল না করা। আপনি উপকারী জ্ঞানের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকবেন এবং আপনি এটি এমনভাবে শেয়ার করবেন যাতে অন্য ব্যক্তি অজ্ঞতা বোধ না করে!
চার. অব্যাহত বিভ্রান্তি ও ভঙ্গুরতার এই সময়ে সর্বশক্তিমানের সাথে আমাদের সম্পর্কের উপর ফোকাস অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই ফোকাসের অর্থ কেবল আমাদের প্রতিদিনের নামাজেই নয়, আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এটি প্রসারিত হওয়া উচিত। আপনি শয়তানের কৌশলের শিকার হবেন এমন কোন বিভ্রান্তিকর জীবনযাত্রার দিকে পা বাড়াবেন না!
পাঁচ. আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া অপ্রীতিকর বিষয়। আর তা যদি আপনার খুব কাছের কেউ অথবা আপনি দেখা শুনা করেন এমন কোনও ব্যক্তির দ্বারা হয় তাহলে আরো বেশি কষ্টকর। তবে এটি সত্যিকারভাবে অনিবার্য হয়ে দেখা দেয়। বাস্তবে, এটাই হলো জীবন। এ নিয়ে খুব বেশি ভাববেন না। সর্বশক্তিমান আপনাকে উপশম দিবেন। কেবল তিনিই তা পারেন। আপনার মনের অভ্যন্তরীণ শক্তি সংহত করুন। এগিয়ে যান এবং কষ্ট-ক্লেশের মধ্যেই অগ্রসর হোন!
ছয়. আপনি কি প্রায়শই অবাক হন যে, ‘‘কেন আমার সাথে এটি ঘটতে থাকে?” সম্ভবত এটি আত্ম-অনুধাবন করার সময়। সম্ভবত একই আচরণগত নিদর্শন আপনাকে সেই একই অবাঞ্ছিত ফলাফল দিচ্ছে। সম্ভবত, সর্বশক্তিমান চান তিনি আপনাকে পরবর্তী স্তরে উন্নীত করার আগে আপনি শিক্ষা নিন।
সাত. সর্বশক্তিমান। আমাদের চারপাশের পৃথিবীতে এখন অনেক কিছু চলছে। জীবনে যারা দুর্দশা এবং কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাদের সাহায্য করার জন্য আমরা আপনার প্রতি আকুতি জানাচ্ছি। অনেকেই এখন ভেঙ্গে পড়ছেন। আপনি তাদের স্বাচ্ছন্দ্য দান করুন, তাদের চলার পথের সব বাধা দূর করুন এবং আমাদের সবাইকে বৈরি অবস্থা থেকে মুক্তি দিন। আমাদেরকে সম্পূর্ণভাবে আপনার উপর এবং কেবলমাত্র আপনারই উপর নির্ভরশীল করুন।
দ্রষ্টব্যঃ
আল্লাহ তাদের অভিভাবক যারা বিশ্বাস করে (মু’মিন)। তিনি তাদেরকে (কুফরীর) অন্ধকার থেকে (ঈমানের) আলোকে নিয়ে যান। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে, তাদের অভিভাবক হল তাগূত (শয়তান সহ অন্যান্য উপাস্য)। এরা তাদেরকে (ঈমানের) আলোক থেকে (কুফরীর) অন্ধকারে নিয়ে যায়। এরাই দোযখের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
আপনি কি সে ব্যক্তির (নমরূদের) কথা ভেবে দেখেননি, যে ইব্রাহীমের সাথে তার প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল? যেহেতু আল্লাহ তাকে রাজত্ব দিয়েছিলেন। যখন ইব্রাহীম বললো, ‘তিনি আমার প্রতিপালক যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান।’ সে বলল, ‘আমিও জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই।’ ইব্রাহীম বললো, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন, তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর।’ তখন সে (নমরূদ) হতবুদ্ধি হয়ে গেল। আর আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা বাকারা: ২৫৭-২৫৮)
* লেখক: মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি * অনুবাদ: মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট