অনুবাদ: মাসুম খলিলী
এক. শুনতে শিখুন। মানুষ শুনাতে চায়। তাদের ভয়েস যে গুরুত্বপূর্ণ সেটি অনুভব করতে চায়। তাদের কথা শোনার কান উপহার দিন। তাদের দেখান যে এই বিশৃঙ্খল উদ্বোগাকুল বিশ্বে কেউ তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করতে পারে, অকারণ বিচার থেকে মুক্ত থাকুন। কারো জন্য সেই ধরনের মানুষ হোন। আপনার যত্নশীল হবার ক্ষমতার প্রকাশ ঘটান।
দুই. অন্যদের সাথে নিজেকে তুলনা করা বন্ধ করুন। আপনার নিজের দৌড় নিজে শুরু করুন। যদি সর্বশক্তিমান চান, অন্যের কাছে যা আছে, তিনি আপনাকে তা দেবেন, যদি এখন না হয় তবে পরবর্তীতে কোনো এক পর্যায়ে। তাঁর ব্যবস্থায় খুশি হোন। কৃতজ্ঞতা দেখান। আপনি যদি কৃতজ্ঞ হন তবে তিনি অবশ্যই আপনাকে আরও দান করবেন।
পুনশ্চঃ
এক. ইহকাল ও পরকালে সাফল্যের চাবিকাঠি হলো কৃতজ্ঞতা। একটি কৃতজ্ঞ হৃদয় সবকিছু। মনে রাখবেন, আপনি অকৃতজ্ঞ হলে তাতে সর্বশক্তিমানের কোন ক্ষতি নেই। আমাদের নিজেদের সুবিধার জন্য তাকে আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। শুধুমাত্র আন্তরিক কৃতজ্ঞতার মাধ্যমেই আমরা সবকিছুতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারি।
দুই. কখনও বিশ্বাস করবেন না যে আপনিই একমাত্র ব্যক্তি যে সমস্যার পরে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। এর সবটাই উপলব্ধি ও দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। অন্য লোকেরা এর আগে আপনি যেখানে আছেন সেখানে ছিলেন বা এর চেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছে তাদের। টানেলের শেষে আলো আছে। সেখানে পথও আছে। আপনার যাত্রায় সর্বশক্তিমানের উপর পুরোপুরি আস্থা রাখুন।
তিন .সবসময় মানুষের প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়াতে প্রস্তুত থাকুন। কারও সাফল্যের জন্য হাজার হাতে তালি দেওয়ার চেয়ে এটি অনেক ভাল। যখন আপনি অন্য ব্যক্তির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবেন, সর্বশক্তিমান নিশ্চয়ই দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার জন্য একই কাজ করবেন।
চার. আপনার জীবনে যা ঘটুক না কেন, ভাল কাজ করার অভ্যাস করুন। যখন আপনি ভাল বীজ বপন করবেন, তখন আপনি এর ফসল কাটবেন এবং পরে ভাল ফসল উপভোগ করবেন। তাই এমন কোন নেতিবাচকতা এবং বন্ধুদের স্বাগত জানাবেন না যারা আপনাকে ভাল কাজ থেকে বের করার জন্য কথা বলার চেষ্টা করে। স্বার্থপরতাকে দূরে ঠেলে দিন।
পাঁচ. সবকিছু তাঁর ঐশ্বরিক নির্দেশ অনুসারে চলে। এই কারণেই জীবন সর্বদা কার্যকরী হয় কারণ তিনি আপনার জন্য সেরাটি চান। এমনকি এটি আপনার মূল পরিকল্পনা অনুসারে না হলেও তা আপনার পক্ষেই যাবে। এটি জেনে স্বস্তি অনুভব করুন যে আপনি যে সব বৈরিতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তা টিকে থাকবে না। চলমান প্রক্রিয়ার উপর আস্থা রাখুন!
ছয়. প্রায়শই যখন আপনি খারাপ দিন কাটাচ্ছেন বলে মনে করেন, সেটি আসলে আপনার মানসিকতার কারণেই হয়। আপনি আরও বেশি কিছু চান বলে আপনি যতক্ষণ জিনিসগুলি পেতে চান আর তা না পান ততক্ষণ আপনি সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না। কোন কিছুই যথেষ্ট মনে হয় না। কৃতজ্ঞতার মনোভাব পোষণ করুন। আপনি বুঝতে পারবেন জীবনে যা আছে তাই যথেষ্ট। কৃতজ্ঞ হতে শিখুন!
সাত. সব সময় আপনার সেরাটি করুন তবে নিখুঁত ফলাফলের আশা করবেন না। মনে রাখবেন, আপনি মানুষ। আপনি একটি চলমান কাজে আছেন। আপনার ভুলগুলির অংশীদারিত্ব নিন। তাদের কাছ থেকে শিখুন। অন্যরাও ভুল করলে ক্ষমা করুন। জীবনের প্রতি ভিন্ন এক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই আপনি একজন অনেক বেশি সুখী ব্যক্তি হবেন।
দ্রষ্টব্যঃ
যখন আমলনামাকে উন্মোচিত করা হবে। যখন আকাশের আবরণকে অপসারিত করা হবে। জাহান্নামের আগুনকে যখন প্রজ্বলিত করা হবে। আর জান্নাতকে যখন নিকটবর্তী করা হবে। তখন প্রত্যেক ব্যক্তিই জানবে, সে কি নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। (সূরা আত তাকভির: ১০-১৪)
রসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, যে অন্যের ক্ষতি করে আল্লাহ তার ক্ষতি করেন এবং যে অন্যের শত্রুতা করে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৩৬৩৫)
* লেখক: মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি * অনুবাদ: মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট