অনুবাদ: মাসুম খলিলী
এক. দুর্ভাগ্যবশত, আজকে অনেক লোক মনে করে যে অস্বাস্থ্যকর কথাবার্তা গালমন্দ শান্তি আনে। বিষয়টি সে রকম নয়। অশ্লীল বক্তব্য, ফালতু কথা বা রুচিহীন কৌতুকের কোন মূল্য নেই। এতে কিছু যদি হয়, তা ক্ষতিকারক হতে পারে। আপনার জিহ্বায় শক্ত নিয়ন্ত্রণ রাখুন এবং সর্বদা এমন শব্দ ব্যবহার করুন যা অন্যদের গড়ে তোলে।
দুই. সর্বশক্তিমান। ফিলিস্তিন ও লেবাননে আমাদের ভাই ও বোনদের রক্ষা করুন। তাদের আঘাত এবং ক্ষতি থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করুন। যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন।
তিন. ভুল সাহচর্যের সাথে মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য জীবন খুব ছোট। নিজেকে তাদের সাথে রাখুন যারা আপনাকে সর্বশক্তিমানের নিকটবর্তী করবে। যারা আপনাকে চ্যালেঞ্জ করবে আরও উচ্চতায় উঠতে এবং ভালো মানুষ হওয়ার জন্য।
চার. সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আপনি কী নিয়ে যাচ্ছেন তা মনে রাখবেন। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবের উপর এটি নির্ভর করে, আপনি হয়তো একটি হাস্যকর, কাল্পনিক জীবন গড়ে তুলছেন যার মধ্যে অনেকে সময় শেষ করে ফেলে। সর্বশক্তিমান আমাদের সচেতনতা দান করুন এবং আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন।
পাঁচ. আপনার মনে নেতিবাচক চিন্তা জন্মাতে দেবেন না। প্রায়শই আমরা ‘যদি এটি হয়’ এবং এ ধরনের অন্যান্য পরিস্থিতির কথা চিন্তা করি। আমরা কোন আপাত কারণ ছাড়াই উদ্বিগ্ন হই। এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তা বাদ দিন। শয়তান ঠিক এটাই চায়। এর পরিবর্তে সর্বশক্তিমানকে বিশ্বাস করতে এবং তাঁর উপর আস্থা রাখতে শিখুন।
পূনশ্চঃ
এক. মনে রাখবেন যে অসম্ভব, অচেনা, অজানা, অদেখা, অচিন্তনীয় ও অপ্রত্যাশিত শব্দগুলির কোনও অর্থ নেই সর্বশক্তিমানের কাছে। মুহূর্তের মধ্যে তিনি সবকিছু ঘটাতে পারেন। আপনার সেরা কাজটি করা হলো আপনার দায়িত্ব পালন এবং তাঁকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করার সাথে আপনার জীবনকে তাঁর নির্দেশনায় একাত্ম করে ফেলা। এর পর কেউ থামাতে পারবে না আপনাকে!
দুই. আপনি জীবনে যা যা যাচ্ছেন, প্রার্থনা করুন। যখন আপনি মনে করেন যে আপনি চাওয়ার কাজ সম্পন্ন করেছেন, আবার প্রার্থনা করুন। পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন প্রার্থনা করুন। মনে রাখবেন, প্রার্থনা কেবল কোন জিনিসের পরিবর্তন করে না, এটি মানুষের হৃদয়কেও পরিবর্তন করে। আর এর ফলে আপনার পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। তাই প্রার্থনা করুন, তারপর কাজের জন্য প্রস্তুতি নিন।
তিন. মনে রাখবেন, এটি সব সময় কেবল আপনার সম্পর্কে নয়। প্রায়শই, সেখানে অন্য লোকেরা জড়িত থাকে এবং আপনার কাজগুলি তাদের প্রভাবিত করে। তাই আপনি যা বলছেন ও করছেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। আপনার উপর আর অন্যদের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে চিন্তা করুন। বাছ বিচার না করেই গুলি ছুড়ে বসবেন না! আপনার বিবেচনায় সহানুভূতি থাকতে হবে।
চার. সর্বদা সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করুন যেন তিনি আমাদের চোখকে আমাদের ভাল, ইতিবাচক এবং আশীর্বাদগুলি দেখতে সক্ষম করেন। আমাদের জীবনে যার অভাব রয়েছে তা থেকে তিনি আমাদের চোখ তুলে নিয়ে যেন নিবদ্ধ করেন আমাদের চারপাশের অগণিত আশীর্বাদগুলিতে। তিনি যেন আমাদের নম্র করেন এবং আমাদের কৃতজ্ঞদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন!
পাঁচ. হ্যাঁ বলা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাল জিনিস। তবে কীভাবে এর সীমানা নির্ধারণ করতে হবে তা জানুন এবং প্রয়োজনের সময় না বলতে শিখুন! এটি নিজের মধ্যেকার এবং অন্যদের সাথে সুসম্পর্কের মূল চাবিকাঠি। সব ক্ষেত্রে সবাইকে হ্যাঁ বললে চাপ বেড়ে যায় এবং আচ্ছন্ন ও দ্বগ্ধ হতে হয়। সুতরাং আপনার শরীরের কথা শুনুন এবং না বলায় নিজেকে অপরাধী মনে করবেন না!
ছয়. .আপনি মানুষের কাছে জনপ্রিয় ও আপন হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন? আপনি যদি সর্বশক্তিমানের সান্নিধ্য লাভ করতে চান এবং তাঁর পরিকল্পনা অনুসারে জীবনযাপন করতে চান, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনাকে একা চলতে দেখবেন। এটাই হলো বাস্তবতা। ভয় পাবেন না। উদ্বিগ্ন হবেন না। তাঁকে আপনার গাইড ও অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করুন!
সাত. সামনে যে রাস্তা রয়েছে তাতে ভয় পাবেন না। হ্যাঁ, এটি দীর্ঘ মনে হতে পারে। কিন্তু সর্বশক্তিমান আপনার জন্য পরিকল্পনা করেছেন। আপনার যাত্রাটি শিশুর পদক্ষেপের মতো ধীর হলেও যাওয়া শুরু করতে হবে। এরপর আপনি গতি বাড়িয়ে তুলবেন এবং আপনার গতি যত দ্রুত হবে তত আপনি এগিয়ে চলবেন। বিঘ্নতা দূরে সরে যাবে। আমরা সবাই গন্তব্য পেয়ে যাবো!
দ্রষ্টব্যঃ
জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহতায়ালা তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা আর রুম : ৪১)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যেদিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহতায়ালা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক, ২. যে যুবক আল্লাহর ইবাদতের ভেতর গড়ে উঠেছে, ৩. যার অন্তরের সম্পর্ক সর্বদা মসজিদের সঙ্গে থাকে, ৪. আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যে দুই ব্যক্তি পরস্পর ভালোবাসা রাখে, উভয়ে একত্র হয় সেই ভালোবাসার ওপর আর পৃথক হয় সেই ভালোবাসার ওপর, ৫. এমন ব্যক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী আহ্বান জানিয়েছে, তখন সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, ৬. যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে সদকা করে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাঁ হাত তা জানতে পারে না, ৭. যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাতে আল্লাহর ভয়ে তার চোখ থেকে অশ্রু বের হয়ে পড়ে। (সহিহ বোখারি : ১৪২৩)
* লেখক: মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি * অনুবাদ: মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট