সাঈদ চৌধুরী
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার এক মাস পূর্তি উপলক্ষে বুধবার (৪ আগস্ট ২০২৪) লন্ডনে ছিল এক ব্যতিক্রমী আলোচনা সভা ও মিষ্টি মুখের আয়োজন। হোয়াইটচ্যাপেল বারাকা ইটারিতে ‘আমরা স্বাধীন’ পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স লিমিটেডের সিনিয়র পার্টনার ও প্রিন্সিপাল সলিসিটর ব্যারিষ্টার মোঃ আসাদুজ্জামান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কেবিনেট মেম্বার (জবস্, এন্টারপ্রাইজ, স্কিলস্ এন্ড গ্রোথ) কাউন্সিলর ব্যারিস্টার মোস্তাক আহমদ।
আয়োজকদের মধ্যে ব্যারিষ্টার আবু সাদাত সোহেল, ব্যারিস্টার আব্দুর রউফ রুবেল ও লিগ্যাল কনসালটেন্ট বি এম ইসলাম শিমুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন ব্যরিস্টার ফখরুল ইসলাম, ব্যরিস্টার সাঈদ হাসান, ব্যারিষ্টার সালাহ উদ্দিন (সুমন), সময় সম্পাদক সাঈদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার এবিএম রাজিউর রহমান, ব্যারিস্টার আরিফ চৌধুরী, ব্যারিস্টার ফয়সাল জামিল, সলিসিটর মামুন আহসানুল মজিদ, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, ব্যরিস্টার ইত্তেহাদুল ইসলাম, লিগ্যাল কনসালটেন্ট মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, ব্যারিস্টার সৈয়দ তাছবির হাসান, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ তামজিদ, ব্যারিস্টার তুষার, ট্রেইনি সলিসিটর হাসানুল বান্না, ট্রেইনি সলিসিটর মোহাম্মদ ইকবাল, ট্রেইনি সলিসিটর জাহিদুল আবেদীন, লিগ্যাল কনসালটেন্ট হাসিব সিদ্দিক, লিগ্যাল কনসালটেন্ট তাসমিয়া ইসলাম, লিগ্যাল কনসালটেন্ট আমীর, লিগ্যাল কনসালটেন্ট অনিক ইসলাম, লিগ্যাল কনসালটেন্ট মাহফুজ আহমদ, লিগ্যাল কনসালটেন্ট আমিনুল ইসলাম ফাহাদ, প্যারালিগাল সাবিনা রশিদ, প্যারালিগাল সাদিদ খান, কেইস ওয়ার্কার এবাদুর রহমান সুফিয়ান, কেইস ওয়ার্কার খায়রুল ইসলাম, কেইস ওয়ার্কার নুমান, কেইস ওয়ার্কার সুহাগ, কেইস ওয়ার্কার সাফরাজ হোসাইন, কেইস ওয়ার্কার মোস্তফা জামিল, অফিস ম্যানেজার ফজলে রাব্বি, হিসাবরক্ষক মোঃ মাহাদী হাসান, আইন সহকারী রবিউল ইসলাম, রিসেপশনিস্ট জান্নাহ হোসেন, সাংবাদিক আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফলতা জনতারই বিজয়, জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। ২০০৯ থেকে ২০২৪-এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনকালে প্রতিটি নির্বাচনই ত্রুটিপূর্ণ ছিল। সাধারণ মানুষ এটাকে অনির্বাচিত সরকার বলেই বিচেনা করেছে। প্রজাতন্ত্রের মানুষ রাষ্ট্রের উপর নিজেদের মালিকানা হারিয়েছিল। জালিয়াতি ছিল এই সরকারের টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন। প্রতিবেশী দেশ ভারতের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে জালিম সরকার ১৫ বছর ধরে জনগণের ওপর অত্যাচার করেছে। ফলে সরকার পতনের পর জনগণের রোষ লীগের ওপর হামলে পড়েছে।
বক্তারা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেন, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার জুলম, দাম্ভিকতা ও অহমিকার বিরুদ্ধে এমন বিজয় বাংলাদেশের মানুষ আগে দেখেনি, কোন সরকারের এমন লজ্জাজনক পতনও কেউ কখনো দেখেনি। ক্ষমতায় বসে আওয়ামী লীগ বেপরোয়া ও ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল। শেষ দিককার কর্মকাণ্ড দেশের সব মানুষকে চরমভাবে বিক্ষুব্ধ করে এক কাতারে নিয়ে এসেছিল। তখন শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন স্বৈরাচারী-স্বেচ্ছাচারী শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অবসান এবং তার বিদায়ের এক দফা দাবিতে পরিণত হয়। জালিমশাহী যত বেশি সংখ্যক মানুষ হত্যা করেছে, তত বেশি মানুষ এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। নারীরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। ছাত্রীরা আরও বেশি এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। যার চূড়ান্ত পরিণতি হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশে ছেড়ে পলায়ন।
আলোচনা কালে বিশিষ্ট আইনজীবীগণ বলেন, আওয়ামী শাসনামলে উচ্চ আদালতে সুবিচারের মাধ্যমে মানুষের মর্যাদা সমুন্নত ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিচারকগণ কতটুকু সচেষ্ট ছিলেন তা সবাই জানেন। মানুষের শেষ ভরসাস্থল বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থেকে বিচার কার্য পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। স্বেচ্ছাচারী লোকদের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে সরকারের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছিল। আদালতকে ব্যবহার করা হয়েছে মানুষের অধিকার হরণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে। এ ধরনের অশুভ কার্যকলাপ বন্ধ করে বিচার বিভাগকে স্বীয় মর্যাদা ও মহিমায় সমুন্নত করতে হবে। বিলেতে বসবাসরত বাংলাদেশী আইনজীবীগন এক্ষেত্রে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সর্বাত্বক সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
দেশের রাজনৈতিক নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বক্তারা বলেন, আগামী দিনে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, তাদের এই ভয়াবহতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সারা দুনিয়া জেনে গেছে, আমাদের ছাত্ররা অজেয়। স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে ছাত্ররা পুরো রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার বৈকল্যকে তুলে ধরে তা বদলে দেয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। যে আন্দোলনের প্রভাব অনেক গভীর ও ব্যাপক। আশা করা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সমৃদ্ধ জাতিগঠনের লক্ষ্য অর্জনেও সফল হবেন।
* সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথা সাহিত্যিক