ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতী নদীর ওপর ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ কোনো ধরনের সতর্কবার্তা ছাড়াই খুলে দেয় ভারত। যে কারণে সৃষ্ট স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এই বন্যায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। রোববার (২৫ আগস্ট ২০২৪) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে বন্যায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধারার লক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগে ১২টি জেলার ৮৬টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়। ভয়াবহ এ বন্যায় জানমালের ক্ষতিসহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। এর ফলে অনেক গবাদিপশুর মৃত্যু এবং ভেসে যাওয়াসহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাছাড়া, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খাদ্য এবং অন্যান্য পশুখাদ্য বিনষ্ট হয়। এই খাতে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ দুধ, ডিমসহ প্রায় ৪শ ১১ কোটি টাকা। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে জরুরি পশুখাদ্য সরবরাহ ও বিতরণ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধে টিকা প্রদান এবং ঘাসের কাটিং বিতরণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, একইভাবে মৎস্য খাতেও চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগে ১২টি জেলার ৮৬টি উপজেলায় অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর/দিঘি/খামারের সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার ৮শ ৯৯টি, ক্ষতিগ্রস্ত মাছ ও চিংড়ির পরিমাণ ৯০ হাজার ৭শ ৬৮ মেট্রিক টন, ক্ষতিগ্রস্ত মাছের পোনা ও চিংড়ির পোস্ট লার্ভা ৩ হাজার ৭শ ৪৬ লাখ। এতে অবকাঠামোগতসহ মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে মৎস্য খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্ব অপরিসীম।
ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষীদের পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে জানিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কতা ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং মৎস্যচাষীদের জন্য বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কার্যক্রম চালানো দরকার। এছাড়াও মৎস্য খামারগুলো সুরক্ষিত করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তা দেওয়া মুক্ত জলাশয়ে পোনা অবমুক্ত কার্যক্রমের অব্যয়িত অর্থ ব্যয়ে বন্যাকবলিত এলাকার চাষীদের মাঝে পোনা বিতরণ করা যেতে পারে। -বাসস