আলহামরাকে ইংলিশে দেখলাম এখানে সবজায়গায় লেখা বা ওরা বলে Alhambra. প্রশ্ন হলো কেনো এই প্রাসাদকে আরবীতে আলহামরাঃ الْحَمْرَاء বলে? ইতিহাস ঘাঁটলে অনেকগুলো মত পাবেন, তারমধ্যে দুইটা প্রসিদ্ধ: এক- একজন রাজার নাম ছিলো, দুই – প্যালেস কমপ্লেক্সের নামই ছিলো ক্বালা আল হামরা (লাল প্রাসাদ)। আমি শিউর হতে পারছিলাম না, কোনটা ঠিক।
তারপর উত্তরটা পেয়ে গেছি একদম আশাতীতভাবে, পুরাই সারপ্রাইজিংলি! আপনি যদি উত্তরটা নিজের চোখে দেখতে চান, আপনাকে আলহামরা কমপ্লেক্সে যেতে হবে একদম সূর্য অস্তের সময়! যখন সূর্য ডুবে যাওয়ার আগের রশ্মিটা ডাইরেক্ট এসে পড়ে পাহাড়ের অনেক অনেক উপরে বিশাল এলাকা জুড়ে বানানো প্রাসাদের কমপ্লেক্সে।
সারপ্রাইজিংলি বললাম, কারণ আমি জানতামই না শেষ বিকেলের আলোয় প্রাসাদের রং দেখতে পুরাই হালকা হলদে-লাল দেখায়!
আমি তো ইনফ্যাক্ট আল হামরা প্রাসাদ দেখাই মিস করে ফেলতেছিলাম! কেঁদে ফেলার অবস্থা আমার যখন মাদ্রিদ থেকে গ্রানাডার বিভিন্ন জায়গার টিকেট কাটতে গিয়ে দেখলাম দুই/তিন দিন আগে টিকেট নাই কোনো, টিকেট কাটতে হয় মিনিমাম মাসখানেক আগে!!
স্পেইন আসার আগে থিসিসের একটা চ্যাপ্টারের কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম, এই টুকিটাকি এগুলো আর খেয়াল করা হয়নি।
যখন নিজের মাথার চুল নিজেই ছিঁড়বো এমন অবস্থা, আলহামরায় ফোন দিলাম, ফোনের ওপাশে ভদ্রলোক আমার কাঁদো কাঁদো কথা শুনে শেষে আশ্বাস দিয়ে বললেন ‘তুমি একদম মিডনাইটে ট্রাই করবা, রাত ১/২ টার দিকে, তখন হঠাৎ হঠাৎ টিকেট ক্যানসেল হয়।
আমি তো ঘুম হারাম করে বসে থাকলাম সেই রাতে ওদের অফিশিয়াল ওয়েবপেইজ খুলে! মিডনাইটে আর টিকেট পাইনা! ঢুলতে ঢুলতে ঘুমিয়েই গেলাম। ভোরে ঘুম ভাঙ্গতেই চোখ খুলেই হুড়মুড় করে ওদের ওয়েবপেইজ রিফ্রেশ দিতেই দেখি, আল্লাহ’র কী অশেষ দয়া, একটা টিকেট পাওয়া গিয়েছে একদম লাস্ট স্লটে! আমি সেকেন্ডের মধ্যে দেরী না করে টিকেট কেটে ফেললাম!
অথচ সেই সিডনী থেকে প্ল্যান করে করে আসছিলাম আলহামরায় একদম সকালে যাবো একদিন যেন সারাদিন ঘুরতে পারি। কিন্তু তক্বদির, আল্লাহ্ ঠিক করে রেখেছিলেন আমি শেষ বিকেলের ডুবন্ত সূর্যের আলোয় আলহামরা দেখবো!
তক্বদীর! তক্বদীর! আলহামদুলিল্লাহ। এখন আপাততঃ শেষ বিকেলের আলোয় দেখুন, কেমন যেন রাস্তাগুলো, গাছপালাগুলো পর্যন্ত যেন, বাগান, বিল্ডিং সবকিছু কেমন অদ্ভুত হলদে-লাল আলোর আভায় ফুটে উঠে! আলহামরা- লাল দূর্গ। আসলেই তাই।