অনুবাদ : মাসুম খলিলী
এক. আপনি যদি সুখী হতে চান তবে একেবারে কম থেকে শূন্য প্রত্যাশা রাখুন। শুধুমাত্র আপনার সর্বশক্তিমান স্রষ্টার উপর নির্ভর করুন।
দুই. বছরের সেরা ১০টি দিনের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করুন। একটি জীবনকে বাঁচান। ক্ষুধার্তকে খাওয়ান। একটি মসজিদ নির্মাণ করুন। নির্যাতিতদের ক্ষমতায়ন করুন। একটি প্রভাব তৈরি করতে কাজ করুন। ১০ দিনের মধ্যে ১০টি কারণে দান করে আপনার জুল হিজ্জাকে সমৃদ্ধ করুন। launchgood.com/teammenk এ শুরু করুন। নবী মোহাম্মাদ সা: বলেন, “এই দশ দিনের চেয়ে সৎকাজ আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় এমন কোন দিন নেই।”
তিন. সত্য হল আপনি যতই একাকী থাকুন না কেন, আপনি কখনই একা নন। সর্বশক্তিমান সর্বদা কাছে আছেন। খুব কাছে। তিনি জানেন আপনি কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সবকিছু সম্পর্কে অবগত। তাই যখন সবাই আপনাকে পরিত্যাগ করেছে, তখন তাঁর কাছে সান্ত্বনা সন্ধান করুন, জেনে নিন যে তিনি সর্বদা সেখানে আছেন।
চার. জীবন কখনও কখনও কঠিন হতে পারে। চারপাশ কখনও কখনও শেষ না হওয়া দৌড়ের মতো হতে পারে এবং কাজগুলি করার জন্য চাপ থাকতে পারে। এ অবস্থাকে বিরক্ত করতে দেবেন না আপনার জীবনকে। যাদের আপনার চেয়ে কম আছে তাদের দিকে তাকাতে শিখুন। যারা আপনার সাথে তাদের স্থান বিনিময় করতে চাইবে। সব কিছুর জন্য সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ জানান।
পূনশ্চঃ
এক. সামনের রাস্তা দেখে হতাশ হবেন না। হ্যাঁ, এটি দীর্ঘ মনে হতে পারে। কিন্তু সর্বশক্তিমান আপনার জন্য সব পরিকল্পনা করেছেন। আপনাকে যাত্রা শুরু করতে হবে এমনকি এটি শিশুর পদক্ষেপের মতো হলেও। আপনি গতি বাড়াতে থাকবেন এবং আপনি এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে গতি দ্রুততর হবে। বিক্ষিপ্ততা একপাশে রয়ে যাবে, জান্নাত আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
দুই. জীবন আমাদের কাছে দ্রুত আসে আর অনেক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। মাঝে মধ্যে, এটি আমাদের এত শক্তভাবে আঘাত করে যে আমরা হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থা অনুভব করি। তবে সর্বশক্তিমানের এই প্রতিশ্রুতি মনে রাখবেন যে, কষ্টের পরই স্বাচ্ছন্দ্য আসে; সব সময়ই সমস্যা স্থায়ী হয় না। এটি কেবল একটি মওসুমের ব্যাপার; হাল ছেড়ে দেবেন না। এরপর অবস্থা কেবল আরও ভাল হতে পারে!
তিন. তারা আপনাকে বাছাই করবে। তারা আপনাকে বিচার করবে। তারা আপনার সম্পর্কে সবচেয়ে খারাপ ভাববে। তারা আপনাকে ঘৃণা করবে। তারা আপনার সম্পর্কে গুজব ছড়িয়ে দেবে। তারা আপনাকে গালি দেবে। তারা ইচ্ছে করবে আপনি নেই হয়ে যান! এই সমস্ত কিছুর মধ্য দিয়েও, সর্বশক্তিমান আপনাকে সব কিছুর ওপরে উচ্চকিত ও আলোকিত করে তুলবেন। সুতরাং আনন্দ, সন্তোষ- এসব বজায় রাখুন!
চার. আপনার জিহ্বাকে পাহারায় রাখুন। আমরা কেবল নিজের কথা শোনার জন্য কতবার অযথা কথা বলি? অনেকে নির্বোধের মতো নীরবতা ভাঙ্গার জন্য প্রয়োজনহীন কথা বলে প্রায়শই আরও ঝামেলা ডেকে আনে। আপনার কাছে বলার মতো সুন্দর কিছু না থাকলে চুপ থাকুন। এ জন্য আফসোস করবেন না আপনি!
পাঁচ. সর্বশক্তিমান এই জীবনে সংগ্রাম থাকবে না এমন কোন প্রতিশ্রুতি দেননি। পরীক্ষা করার জন্যই তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং নম্র হোন, ধৈর্যশীলতা ভালভাবে বজায় রাখুন এবং সব ক্ষেত্রে যতটা পারেন ভালো কিছু করতে চেষ্টা করুন। তিনি আপনার মর্যাদা উন্নীত করবেন। নেতিবাচক চিন্তা সাগরের অথৈ পানিতে ফেলে আসুন। এতে কল্যাণ পাবেন আপনি!
ছয়. তাঁর কাছে যা চাই তা না পেলে আমরা প্রায়ই হতাশ হয়ে পড়ি। আমরা প্রত্যাখ্যাত মনে করি এবং নির্বোধ চিন্তাগুলো আমাদের মনের মধ্যে চলে আসে। এরপর শয়তান কাজ করার সুযোগ পায়। মনে রাখবেন আপনি যত পথই অবলম্বন করুন না কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সর্বশক্তিমানের ওপর আস্থা রাখেন ততক্ষণ বড় বাধা বিপত্তির মুখে পড়লেও তিনি আপনাকে সঠিক ট্র্যাকে এনে দেবেন।
সাত. আপনি জীবনে যত উপরে ওঠেন, ততই আপনার পতনের সম্ভাবনা থাকে। তবে আপনার হৃদয়ে যদি নম্রতা থাকে তবে তা পতনকে ভেঙে দেয় এবং আপনার তাতে কষ্ট লাঘব হবে। দুর্বলতা, ভুল ও ব্যর্থতা স্থায়ী হয় না, যদি আপনি তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং দৃঢ়ভাবে চলতে থাকেন। সর্বশক্তিমান আমাদের কষ্টের পরে স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আট. সর্বশক্তিমান। আমরা আপনাকে আমাদের হৃদয়কে নরম রাখতে আকুতি জানাই এবং মন শক্ত হওয়া থেকে আপনার কাছে সুরক্ষা চাই। আমাদের প্রতি আপনার রহমত বর্ষণ করুন, যাতে আমরা যখন পাপ করি, তখন আমরা তার সাথে আসা অপরাধবোধ অনুভব করি। আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করবেন না যারা পাপ করে তবুও অনুতপ্ত হয় না। আমীন।
দ্রষ্টব্য
এমন কিছু লোক আছে যারা বলে আমরা আল্লাহকে এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস করি। প্রকৃতপক্ষে তারা বিশ্বাস করেনি, তারা আল্লাহকে ও মুমিন বান্দাদেরকে ধোঁকা দিতে চায়। (সত্য কথা এই যে) তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না। এবং তাদের এই বিষয়ে কোনো উপলব্ধি নেই। (সূরা বাকারা : ৮-৯)
মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, যার মধ্যে চারটি স্বভাব আছে, সে প্রকৃত মুনাফিক। আর যার মধ্যে এ চারটি থেকে কোনো একটি স্বভাব আছে, সেটি ত্যাগ করা পর্যন্ত তার মধ্যে কপটতার একটি স্বভাব বিদ্যমান। ওই চার স্বভাব হলো, যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, তখন সে তা খেয়ানত করে; যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে; যখন সে অঙ্গীকার করে, প্রতারণা করে, আর যখন সে বিবাদে জড়ায়, গালাগাল করে।’ (বুখারি : ৩৪, মুসলিম : ৫৮)
* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি
