প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসির নামাজে জানাজায় জনতার ঢল নেমেছে। ইরানে ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি শহীদ রাষ্ট্রপতি এবং তার সফর সঙ্গীদের প্রার্থনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। লাখ লাখ ইরানি জানাজাপূর্ব শোক মিছিলে আইকনিক আজাদি স্কয়ারে মিলিত হয়েছেন।
ইব্রাহিম রায়িসিকে ‘রাষ্ট্রীয় সেবা দিতে গিয়ে শহীদ’ হিসেবে অভিহিত করে শহরের কেন্দ্রস্থলে বিশাল বিশাল ব্যানার টাঙানো হয়েছে। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন। রাজধানীর বাসিন্দাদের মোবাইল বার্তায় ‘শহীদের জানাজায় অংশ নেওয়ার’ আহ্বান জানানো হয়েছে।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো চিফ ইসমাইল হানিয়াহ, লেবানিজ হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল শেখ নাইম কাসেম-সহ বিশ্ব নেতা, রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রদূত এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি অ্যাক্সিস অফ রেজিস্ট্যান্সের উচ্চ-প্রোফাইল ব্যক্তিত্বরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, এই মহৎ ও নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি দায়িত্বের পুরো সময়কাল, রাষ্ট্রপতির স্বল্প মেয়াদে এবং তার আগে সম্পূর্ণরূপে জনগণ, দেশ ও ইসলামের সেবা করার জন্য অবিরাম প্রচেষ্টায় চালিয়েছেন। আয়াতুল্লাহ খামেনি জোর দিয়ে বলেন, প্রিয় রায়িসি ক্লান্তি জানতেন না, ইরানী জাতি এই দুঃখজনক ঘটনায় একজন আন্তরিক এবং মূল্যবান সেবককে হারিয়েছে।
ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ওয়াহদিদি বলেছেন, ইরান একজন প্রিয়, জনপ্রিয় এবং নম্র রাষ্ট্রপতিকে হারিয়ে শোকাহত। ইরানি জাতি একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুতেও শোকাহত, যিনি তার উত্তরাধিকার হিসাবে সকল সংকটময় মুহুর্তে সক্রিয় ও সফল ভূমিকা পালন করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের শহীদ গভর্নর এবং প্রদেশের জুমার নামাজের ইমামের গঠনমূলক প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন।
জানাজায় যোগ দিতে তেহরান গেছেন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া। তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত রায়িসির জানাজায় বলেন, আমি ফিলিস্তিনি জনগণের এবং গাজার প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের পক্ষ থেকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতি সমবেদনা জানাতে এসেছি। পবিত্র রমজান মাসে তেহরানে প্রেসিডেন্ট রায়িসির সাথে আমি সাক্ষাত করেছিলাম। তখন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন ফিলিস্তিন ইস্যুটি বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হামাস প্রধান আরো বলেন, ইব্রাহিম রায়িসি ফিলিস্তিনি জাতিকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের অটল অবস্থানের উপর জোর দিয়েছিলেন। ইসমাইল হানিয়া দৃঢ়ভাবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, প্রতিরোধ আন্দোলন আত্মবিশ্বাসী ইসলামী প্রজাতন্ত্র ও ইসলামী বিপ্লবের নেতা এবং তার কর্মকর্তাগণ ফিলিস্তিনি জাতিকে সমর্থন অব্যাহত রাখবেন। এরপর হানিয়া বলেন, ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করার জন্য মুসলিম বিশ্বকে এভাবেই তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
জানাজার আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বিদেশি অতিথিদের অংশগ্রহণে একটি শোকযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রওনা হয়ে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এনঘেলাব স্কয়ারের দিকে যাবে। তারপর তেহরান থেকে নিহতদের মরদেহ দক্ষিণ খোরাসান প্রদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে তা ইব্রাহিম রায়িসির নিজ শহর মাশহাদে স্থানান্তর করা হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইমাম রেজা মাজারে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, রোববার ভোরে আজারবাইজান সীমান্তে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সাথে একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন রায়িসি। সেখান থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান-সহ অন্যান্যরা দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় হেলিপকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। সূত্র: আল জাজিরা ও প্রেস টিভি