মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের গযল

প্রবন্ধ-কলাম সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অনুবাদ: আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

“না কিসি কি আঁখ কা নূর হুঁ, না কিসি কে দিল কা কারার হুঁ,
জো কিসি কে কাম না আ সাকে, ম্যায় ও এক মুশত-এ-গুবার হুঁ।

ম্যায় নেহি হু নাগমা-এ-জান ফেজা, কোঈ সুনকে মুঝকো কারেগা কিয়া,
ম্যায় বড়ে বিকরোগ কি হুঁ সদা, ম্যায় বড়ে দুখু কি পুকার হুঁ।

মেরা রঙ রূপ বিগড় গেয়া, মেরা ইয়ার মুঝসে বিছড় গেয়া,
জো চমন খিজান সে উজাড় গেয়া, ম্যায় উসি কি ফাসলে বাহার হুঁ।

না তো ম্যায় কিসি কা হাবিব হুঁ, না তো ম্যায় কিসি রাকিব হুঁ
জো বিগড় গেয়া ও নসীব হুঁ, জো উজাড় গেয়া ও দায়ার হুঁ
পয়ে ফাতিহা কোঈ আয়ে কিউ, কোঈ চার ফুল চড়ায়ে কিউ,
কোঈ আকে শামা জ্বালায়ে কিউ, ম্যায় ও বেকাসি কা মাজার হুঁ।

বাংলা অনুবাদ:

আমি কারো চোখের আলো, অথবা কারো হৃদয়ের সান্তনা নই,
যে কারো কোনো কাজের নয়, আমি তেমন এক মুঠি ধূলির মতো।

আমি আর প্রাণ সঞ্চারী সঙ্গীত নই, কে আমার গান শুনতে চাইবে?
আমি এখন বিচ্ছেদের প্রতিধ্বনি, আমি এখন অতি-দুর্দশার বিলাপ।

আমার চেহারা সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়েছে, আমার বন্ধু আমাকে ছেড়ে গেছে,
যে বাগান শরতে ধ্বংস হয়েছে, আমি সেই উদ্যানের বসন্তের ফসল।

আমি এখন আর কারো বন্ধু নই, আমি কারো প্রতিপক্ষও নই,
যা ধ্বংস হয়েছে, আমি সেই দুর্ভাগ, আমি সেই স্থান যা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত।

আমার জন্য কেউ ফাতেহা পড়তে বা ক’টি ফুল দিতে আসবে কেন?
কেউ এসে বাতি জ্বালাবে কেন, আমি তো অসহায়ত্বের এক মাজার।)

বাহাদুর শাহ জাফর (জন্ম:১৭৭৫-মৃত্যু ১৮৬২)

শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর যদিও নামে মাত্র সম্রাট ছিলেন, কিন্তু ১৮৫৭ সালে উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম, যা ‘সিপাহি বিদ্রোহ’ নামেই বেশি পরিচিত, সেই বিদ্রোহ তাঁকে গৌরবের আসনে বসিয়েছে। চার মাস স্থায়ী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ বাহিনী সম্রাটকে তার পূর্ব পুরুষ দ্বিতীয় মোগল সম্রাট হুমায়ুনের দুর্গ সদৃশ মাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। ব্রিটিশ সামরিক আদালত তার বিচার করে এবং নির্বাসনের রায় দেয়। ১৮৫৮ সালের ৭ অক্টোবর তাকে দিল্লি থেকে বের করে রেঙ্গুনের (ইয়াঙ্গন) উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। তিনি রেঙ্গুন পৌছেন ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর। পাঁচ বছর নির্বািসিত জীবন কাটানোর পর ১৮৬২ সালের ৭ নভেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।

১৮৫৮ সালের ৭ অক্টোবর দিল্লি থেকে রেঙ্গুনে নির্বাসনে পাঠানোর আগে বাহাদুর শাহ জাফরের ছবি

বাহাদুর শাহ জাফরের কবিতা চর্চার জন্যও খ্যাতির অধিকারী। সিপাহি বিদ্রোহের আগে তার দরবার মূলত কবি ও সঙ্গীত শিল্পীদের উপস্থিতিতে সমৃদ্ধ ছিল। তিনি স্বয়ং তার সময়ের বিখ্যাত কবি ইব্রাহিম জওকের শিষ্য ছিলেন। তিনি মির্জা গালিবসহ দিল্লির সকল কবির পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। নির্বাসিত জীবনেও তিনি কবিতা লিখেছেন। সবই তার বিড়ম্বিত ভাগ্য ও জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসার প্রতিধ্বনি। তার একটি কবিতায় উল্লেখ করেছেন:

“উমর দরাজ মাঁঙ্গকে লায়ে থে চার দিন,
দো আরজু মে কাট গায়ে, দো ইন্তেজার মেঁ।”

(চার দিনের আয়ু চেয়ে এনেছিলাম,
দু’দিন কাটলো আকাঙ্ক্ষায়, দু’দিন প্রতীক্ষায়।)

জন্মভূমিতে কবরস্থ হতে পারবেন না, সেই দু:খে তিনি লিখেছেন:

“কিতনা হ্যায় বদনসিব জাফর,
দাফন কে লিয়ে. দো গজ জমিন ভি না মিলি কুয়ে্ ইয়ার মেঁ।”

(জাফর, তুমি কত ভাগ্যহত যে,
কবরের জন্য জন্মভূমিতে দু’গজ মাটিও পেলে না।)

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু উপদেষ্টা সম্পাদক- উইকলি বাংলাদেশ, নিউ ইয়র্ক এবং সাবেক সম্পাদক- মাসিক নতুন ঢাকা ডাইজেস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *