১৬ পাতার বয়ান, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার প্রয়োজন ছিল মনে করে হামাস

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালানোর ‘প্রয়োজন’ ছিল বলে মনে করে। তবে ওই হামলায় ‘কিছু ভুলত্রুটি’ হয়েছে বলেও সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। হামলায় শুধু ইসরায়েলি সেনা ও সশস্ত্র ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলে দাবি সংগঠনটির।

হামাসের পক্ষ থেকে রোববার (২১ জানুয়ারি ২০২৪) আরবি ও ইংরেজিতে প্রকাশ করা এক বয়ানে এসব কথা বলা হয়েছে। খবর প্রকাশ করেছে আল জাজিরা, এএফপি ও টাইম অব ইসরায়েল।

হামাসের ১৬ পাতার প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘আওয়ার ন্যারেটিভ’ বা ‘আমাদের বয়ান’। প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে চালানো ওই হামলার ব্যাপারে এই প্রথম লিখিত আকারে কিছু প্রকাশ করল হামাস।

প্রতিবেদনটিতে ‘আল-আকসা ফ্লাড’ নামে আকস্মিক ওই হামলার প্রেক্ষাপট ও গতি–প্রকৃতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে হামাস নিজেদের ‘অবস্থান পরিষ্কার’ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘এটি (হামলা) ছিল প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় স্বাভাবিক এক প্রতিক্রিয়া।’

ইসরায়েল সরকারের তথ্য অনুযায়ী, হামাসের ওই হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জনের প্রাণ গেছে। তাঁদের বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ। হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৪০ জন।

হামাসের হামলার জবাবে একই দিন ফিলিস্তিনের গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রায় তিন মাস হতে চলল, এখনো নির্বিচার হামলা অব্যাহত রয়েছে। হামাস–নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এরই মধ্যে গাজায় ২৫ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১৯ লাখের বেশি মানুষ।

গত নভেম্বরে সাত দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। সে সময় প্রায় ১০০ জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারগুলো আগে থেকে আটক কয়েক শ ফিলিস্তিনি মুক্তি পান।

ইসরায়েলের অভিযোগ, ৭ অক্টোবরের হামলার সময় ‘যুদ্ধাপরাধ’ করেছেন হামাস সদস্যরা। তাঁরা নির্যাতন, ধর্ষণ ও অঙ্গহানি করেছে। তবে হামাসের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

অন্যদিকে গাজায় চলমান হামলা এবং প্রাণহানির ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানি চলছে।

‘হয়তো কিছু ভুল হয়েছে’

হামাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হবে। আটক করা হবে ইসরায়েলি সেনাদের। ৭ অক্টোবরের হামলা নিয়ে এটাই ছিল পরিকল্পনা। সংগঠনটি মনে করেছিল, এর মধ্য দিয়ে চাপে পড়বে ইসরায়েল। আর এই সুযোগে দেশটির কারাগারে আটক থাকা হাজারো ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্ত করে আনা যাবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হামাসের কাসেম বিগ্রেডের সদস্যরা হামলার সময় বেসামরিক মানুষজনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চেয়েছিলেন। মূলত ধর্মীয় ও নীতিগত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই অবস্থান নিয়েছিলেন তাঁরা।

হামাসের দাবি, ওই দিন হামলার সময় যদি কোনো বেসামরিক ব্যক্তি আক্রান্ত হন, তাহলে সেটা দুর্ঘটনাবশত ঘটেছে। দখলদার বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে তেমনটা হয়েছে।

৭ অক্টোবর ‘হয়তো কিছু ভুল হয়েছে’—এ কথা উল্লেখ করে হামাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার সময় ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও সামরিক ব্যবস্থা দ্রুত ভেঙে পড়েছিল। সেই সঙ্গে গাজার নিকটবর্তী এলাকাগুলোয় বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। এসব কারণে হয়তো কিছু ভুল হয়েছে।

হামাসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবরের হামলার সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও পুলিশ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। তাই তাদের গুলিতে সেখানকার অনেকের মৃত্যু হয়েছে।

গাজায় চলমান হামলা বন্ধে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে। যদিও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় ‘পুরোপুরি বিজয় অর্জন’ না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান চলবে। সেই সঙ্গে গাজায় চলমান সংঘাত শেষে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর কোনো সমর্থন থাকবে না বলেও জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।

=প্রতিবেদনে হামাস বলেছে, ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের ভবিষ্যত সিদ্ধান্ত নেয়ার এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নির্ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। সে বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি, বিশ্বের অন্য কোনো পক্ষের তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার নেই।

এছাড়া হামাস গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধ, গাজার পুরো জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ এবং জাতিগত নিধন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *