‘হিটলারের দেহে ইহুদি রক্ত’ নিয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে ইসরায়েলে তীব্র ক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ধর্ম ও দর্শন সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বিবিসি বাংলা

“জার্মানির নাৎসী নেতা এডলফ হিটলারের দেহে ইহুদি রক্ত ছিল” রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভরভের এমন এক বক্তব্যের পর ইসরায়েলের নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এজন্য মি. লাভরভকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভরভকে ইতালিয়ান টিভির এক সাক্ষাতকারে প্রশ্ন করা হয় যে ইউক্রেনকে কেন রাশিয়া ‘নাৎসী’ হিসেবে চিত্রিত করছে – যেখানে দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি হচ্ছেন একজন ইহুদি।

জবাবে মি. লাভরভ বলেন, এতে কিছু আসে যায় না – ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইহুদি হলেই যে ইউক্রেনে নাৎসীরা নেই এটা প্রমাণ হয়না। তিনি বলেন, “আমার ভুল হতে পারে, কিন্তু হিটলারেরও দেহেও ইহুদি রক্ত ছিল।”

তিনি আরো বলেন, “জ্ঞানী ইহুদিরা বলেন যে সবচেয়ে কড়া ‘এ্যান্টি-সেমাইট’রাও সাধারণতঃ ইহুদি হয়ে থাকেন।”

সেরগেই লাভরভের এ বক্তব্যে ইসরায়েলে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াইর লাপিড এর কড়া নিন্দা করে মি. লাভরভকে এ জন্য ক্ষমা চাইতে বলেন।

এডলফ হিটলার এবং তার সঙ্গিনী ইভা ব্রাউন

হিটলারের বংশে কি আসলেই ‘ইহুদি রক্ত’ ছিল?

এমন একটি ঐতিহাসিক দাবি বহু দশক ধরেই চলছে যে হিটলারের পিতামহ – যাকে শনাক্ত করা যায়নি – হয়তো ইহুদি ছিলেন। এ দাবি প্রমাণিত নয়।

হিটলারের একজন আইনজীবী ছিলেন যার নাম হ্যান্স ফ্র্যাংক। তিনি একটি স্মৃতিকথা লিখেছিলেন যা প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালে। এতে তিনি লেখেন, হিটলার নিজেই তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ ইহুদি ছিলেন বলে যে গুজব আছে – তা তদন্ত করতে।

মি. ফ্র্যাংক বলেন, তিনি তথ্যপ্রমাণ উদ্ঘাটন করেছিলেন যে হিটলারের পিতামহ আসলেই ইহুদি ছিলেন। তার এই দাবি পরে ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পায় – কিন্তু মূলধারার ইতিহাসবিদদের মধ্যে এ দাবি নিয়ে সংশয় আছে।

জার্মানির নাৎসী নেতা এডলফ হিটলারের শাসনামলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ‘হলোকস্ট’ নামে ইহুদি-নিধনযজ্ঞ চালানো হয় – যাতে ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করা হয়।

‘ইউক্রেনকে নাৎসীমুক্ত করার’ রুশ অভিযান

রাশিয়া শুরু থেকেই বলছে, ইউক্রেনে তাদের অভিযান ওই দেশটিকে নাৎসীমুক্ত করার অভিযান। কারণ তাদের মতে ‘ইউক্রেনের রাজনীতি ও সামরিক বাহিনীর ভেতরে উগ্র-জাতীয়তাবাদী নাৎসী মতাদর্শের লোকজন ঘাঁটি গেড়ে বসেছে।’

এ প্রেক্ষাপটেই মি. লাভরভকে ইতালিয়ান টিভির জোনা বিয়াংকা অনুষ্ঠানে ওই সাক্ষাতকারে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু মি. লাভরভ এর যে জবাব দেন – তাতে ইসরায়েলের নেতারা চরম ক্ষুব্ধ হন। মাত্র কয়েকদিন আগেই ইসরায়েলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ইহুদি নিধনযজ্ঞের স্মারক দিবস পালিত হয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট বলেন, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই মন্তব্য একটি মিথ্যে কথা, এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হলোকস্টকে ব্যবহার করা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াইর লাপিড এ ব্যাপারে ইসরায়েলে রুশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ব্যাখ্যা দাবি করেন। মি. লাপিড বলেন, মি লাভরভের বক্তব্য নিন্দনীয় এবং ক্ষমার অযোগ্য – আর ঐতিহাসিকভাবেও এটা মারাত্মক ভুল। তিনি এ জন্য মি. লাভরভকে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি করেন।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, মি. লাভরভের মন্তব্যে প্রমাণ হয় যে রাশিয়ার ভেতরে গভীর ইহুদিবিদ্বেষ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *