হিজাব পরায় ভিকারুননিসার ২২ শিক্ষার্থীকে বের করে দিলেন শিক্ষিকা

বাংলাদেশ শিক্ষা সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখায় হিজাব পরার কারণে প্রায় ২২ জন শিক্ষার্থীকে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে প্রতিষ্ঠানটির প্রভাতী শাখার ষষ্ঠ শ্রেণিতে।

অভিভাবকদের অভিযোগ, রোববার (২৪ আগস্ট ২০২৫) তাদের সন্তানরা নিয়মিত ক্লাসে অংশ নেয়। প্রথমদিকে কোনো শিক্ষক আপত্তি না করলেও শেষ পিরিয়ডে ইংরেজি শিক্ষিকা ফজিলাতুন নাহার শিক্ষার্থীদের হিজাবের কারণে ক্লাস থেকে বের করে দেন এবং খারাপ ব্যবহার করেন। এমনকি তিনি নাকি মন্তব্য করেন, হিজাব পরে জঙ্গিদের মতো এসেছে।

তবে অভিযুক্ত শিক্ষিকা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, শিক্ষার্থীরা হিজাব নয়, বরং স্কুল অনুমোদিত সাদা স্কার্ফের পরিবর্তে ওড়না পরে এসেছিল। প্রতিষ্ঠানটির ড্রেস কোড অনুযায়ী এটা অনুমোদিত নয়। তাই নিয়ম মানাতে তিনি এই পদক্ষেপ নেন।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম জানিয়েছেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনার পর থেকে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও চলছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুলে হিজাব অবমাননায় ছাত্রীসংস্থার বিবৃতি

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার ইংরেজি শিক্ষিকা ফজিলাতুন নাহার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ২২ জন শিক্ষার্থীকে হিজাব পরিধান করার কারণে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

সোমবার (২৫ আগস্ট ) এক যৌথ বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় সভানেত্রী মুনজিয়া ও সেক্রেটারি জেনারেল উম্মে আরওয়া বলেন, এটি শুধু শিক্ষার্থীদের নয় বরং প্রতিটি ব্যক্তির স্বাধীনতা, ধর্মীয় অনুভূতি ও মৌলিক অধিকারের উপর সরাসরি আঘাত।

নেত্রীবৃন্দ বলেন, হিজাব কোনো প্রথাগত পোশাক নয় বরং মুসলিম নারীর বিশ্বাস, মর্যাদা ও ব্যক্তিত্বের প্রতীক। একজন শিক্ষার্থীর হিজাব পরিধান করা তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় অধিকার। অথচ একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা সেই অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করেছেন।

নেত্রীবৃন্দ আরও বলেন, অভিযুক্তের জানা উচিৎ হিজাবকে জঙ্গির সাথে তুলনা করার মতো ধৃষ্টতা ইতিপূর্বে যারাই দেখিয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের যথোপযুক্ত জবাব দিয়েছে।

বিবৃতিতে নেত্রীবৃন্দ জোর দিয়ে বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, হিজাব রক্ষার অধিকার কারও অনুকম্পা নয়, এটি প্রতিটি মুসলিম নারীর স্বাধীনতা। এ অধিকারে হস্তক্ষেপ এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি রূঢ় আচরণ শিক্ষাঙ্গনের মর্যাদা ও মানবিক মূল্যবোধকে কলঙ্কিত করেছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই ঘটনার ন্যায়সঙ্গত তদন্ত, দোষী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের হিজাব পরিধানের পূর্ণ স্বাধীনতা অবিলম্বে নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।

আমরা আশা করি, এই ঘটনার যথাযথ বিচার হবে এবং ভবিষ্যতে আর কোনো ছাত্রী যেন তার মুসলমান পরিচয় ও শালীনতার কারণে এমন অপমান ও বঞ্চনার শিকার না হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *