অনুবাদ: মাসুম খলিলী
এক. সর্বশক্তিমান আপনার জন্য যা রেখেছেন তা কেউই আটকাতে পারবে না। আপনি অপেক্ষা করার সময় সুন্দর ধৈর্য ধারণ করেছেন। সুতরাং প্রস্তুত থাকুন আপনার প্রতি অনুগ্রহ ও অসীম আশীর্বাদ হাজির হবে এবং আপনি যে হাল ছাড়েননি তার জন্য আপনি অনেক বেশি পাবেন এবং কৃতজ্ঞ হবেন।
দুই. আপনি কি সর্বশক্তিমানকে বিশ্বাস করেন? নাকি শুধু মুখের কথা বলছেন? তাঁর উপর বিশ্বাস করার মূল হলো আপনার চারপাশের পরিস্থিতির উপর সর্বময় বিশ্বাস বন্ধ করা এবং আপনি যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন সেটিকে তাঁর চেয়ে বেশি শক্তিশালী বলে ধারণা না করা। এসব কোনভাবেই শক্তিমান না। আল্লাহর চেয়ে বড় কিছুর অস্থিত্ব নেই।
পূনশ্চঃ
এক. মনে রাখবেন, সর্বশক্তিমান আপনার চেয়ে রাস্তার আরও নীচটাও দেখতে পারেন। অতএব যখন তিনি আপনার পরিকল্পনা ব্যাহত করবেন তখন তাঁর উপর আস্থা রাখুন। যখন তিনি সামনে আগাতে বলছেন তখন তার উপর বিশ্বাস রাখুন। আপনি যদি তার সংকেতগুলোর প্রতি গভীরভাবে মনোনিবেশ করেন তবে কী করবেন তা আপনি বুঝতে পারবেন। জিনিসগুলি ভাল হওয়ার আগে অস্বস্তিকরও হয়ে উঠতে পারে তবে আপনার কাজ হ’ল তাঁর উপর বিশ্বাস করা।
দুই. আপনি কি জানেন যে মৃত্যু আমাদের সেভাবে তাড়া করছে আমরা ঠিক যেভাবে এই অস্থায়ী পৃথিবীকে তাড়া করছি? আজ, অনেকে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন এবং আগামীকালও তাই হবে। সত্য হল আমাদের কার কখন সময় আসবে আমরা তা জানি না। আসুন আমরা এ জন্য প্রস্তুত থাকি এবং সর্বদা আমাদের প্রভুর আনুগত্যের অবস্থায় থাকি। তাঁর দিকেই ফিরে যাই।
তিন. সর্বশক্তিমান আপনার যাত্রা পথে একটি বাঁক সৃষ্টি করলে আপনি কি বিচলিত হন? আপনি কি তাঁকে প্রশ্ন করেন এবং জানতে চান যে,”কেন এবং কিভাবে এটি হলো”? সর্বদা মনে রাখবেন যে তিনি যা জানেন আপনি ও আমি তা জানি না। ইতিবাচক থাকুন এবং বিশ্বাস রাখুন যে তিনি আমাদের সকলের জন্য কাজ করবেন। আর ফলাফলটি আপনার নিজের কল্যাণেই আসবে!
চার. আপনার জীবনে এমন সময় আসবে যখন কিছুই বোঝা যায় না এবং আপনি গাছের জন্য কাঠও দেখতে পাচ্ছেন না। এসময় আপনার সর্বশক্তিমানকে বিশ্বাস করা এবং এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত রাখা দরকার। এটি সহজ কোন কাজ হবে না। তবে আপনার কাছে এর অন্য কোনও বিকল্প নেই। আপনার জন্য তাঁর পরিকল্পনাগুলি আপনি যা কল্পনাও করতে পারেন না তার চেয়েও বড়!
পাঁচ. আপনি এই পৃথিবীতে সর্বদা যা চান ঠিক তা পাবেন না। আপনি যদি আনন্দবোধে থাকতে চান তবে আপনাকে বাস্তবতাটি গ্রহণ করতে হবে। যারা সর্বশক্তিমানের নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ হয় না তাদের জন্য সুখ আসবে না; আর যারা এর মধ্যে যা আছে তার প্রশংসা করেন না তাদের জন্যও সুখ নয়। তাই কৃতজ্ঞ থাকুন!
ছয়. অন্যকে সহায়তা করা এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা খুব ভালো অনুশীলন। তবে আপনি তাদের জন্য কী করেছেন তা লোকদের কখনোই স্মরণ করাবেন না। আর মনে রাখবেন সর্বশক্তিমানের কাছে আমাদের সব সমস্যার সমাধান রয়েছে, তবে সবাই তার কাছে চায় না। আন্তরিকভাবে এবং দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এটি করুন। তিনি শুনেন এবং সাড়া দেন।
সাত. আপনার নিজের সিদ্ধান্তগুলোকে কারো কাছে যৌক্তিক প্রমাণ করা বা ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। আপনি জানেন আপনার উদ্দেশ্য কী। নিয়তকে পরিশুদ্ধ রাখুন। সর্বশক্তিমান সব জানেন। তাতেই চলবে।
আট. জীবন আপনাকে কোথায় নিয়ে যায় তা বিবেচ্য নয়, যারা আপনার পথটি অতিক্রমে সামনে এসেছেন তাদের সাথে ভালো আচরণ করুন। সর্বশক্তিমান তাদের কোনো কারণে সেখানে রেখেছেন। আর আপনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন হন। আন্তরিকতা বজায় রাখুন। শুধু মানুষকে খুশি করার জন্য কিছু করবেন না। অন্যের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে সর্বশক্তিমান আমাদের রক্ষা ও গাইড করবেন।
দ্রষ্টব্যঃ
তুমি কি দেখ না, আল্লাহ কীভাবে উপমা পেশ করেছেন? কালিমা তাইয়েবা, যা একটি ভাল বৃক্ষের ন্যায়, যার মূল সুস্থির আর শাখা-প্রশাখা আকাশে। সেটি তার রবের অনুমতিতে সব সময় ফল দান করে; আর আল্লাহ মানুষের জন্য নানা দৃষ্টান্ত প্রদান করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। মন্দ বাক্য মন্দ বৃক্ষের সঙ্গে তুলনীয়, ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগেই যাকে মূল থেকে উপড়ে ফেলা হয়েছে, যার কোন স্থায়িত্ব নেই। (সূরা ইব্রাহিম: ২৪-২৬)
* লেখক: মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি * অনুবাদ: মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট