সাঈদ চৌধুরী
আটক বন্দীদের মুক্তির জন্য হামাসকে রাজি করাতে ইসরায়েলি বন্দী-পরিবারের লোকজন কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। শনিবারের বৈঠকটি ছিল প্রথমবারের মতো কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দোহায় ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারের।
কাতারি প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা ছয় মার্কিন ও ইসরায়েলি জিম্মির পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন, বৈরুতে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সালেহ আল-আরুরির হত্যা একটি নতুন চুক্তি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে অনেক কঠিন করে তুলেছে।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল সানি বলেছেন, লেবাননে হামাসের শীর্ষ নেতাকে হত্যার পর গ্রুপটি বন্দী মুক্তি নিয়ে আর আলোচনা করতে রাজি হচ্ছে না। হামাসের হাতে আটক বন্দীদের মুক্তির জন্য তাদেরকে রাজি করাতে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বন্দীদের পরিবার সদস্যরা বিশেষ অনুরোধ করেছেন।
মোহাম্মদ আল সানির বার্তাটি বোঝায় মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল জুড়ে উত্তেজনা বাড়ার সাথে সাথে একটি নতুন জিম্মি চুক্তি সুরক্ষিত করার যে কোন প্রচেষ্টা বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ হামাস নেতা সালেহ আল-আরৌরি হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সালেহ আল আরৌরি হত্যার একদিন পর টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে হেজবোল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ বলেছেন, আরৌরির হত্যা একটা ভয়ংকর অপরাধ যা নিয়ে আমরা চুপ থাকতে পারি না। ইসরায়েলের জন্য ‘এটি খুব, খুব ব্যয়বহুল হতে চলেছে’।
হিজবুল্লাহ নেতা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানে কাসেম সুলেইমানির কবরে শোকাহতদের টার্গেট করার অভিযোগ করে বলেছেন, এটি হামাসের শীর্ষ নেতা সালেহ আল আরৌরির হত্যার সাথে যুক্ত।
বৈরুতে মঙ্গলবার হামাসের ডেপুটি লিডার সালেহ আল-আরৌরি সহ কয়েকজন সিনিয়র সদস্য ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন বলে ব্যাপকভাবে ইসরায়েলকে দায়ী করা হয়েছে। যদিও ইসরায়েল প্রকাশ্যে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি বা অস্বীকার করেনি।
আরৌরির হত্যার পর হামাস কাতার এবং মিশরের মাধ্যমে আলোচনা স্থগিত করেছে বলে জানা গেছে। যদিও মঙ্গলবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জিম্মিদের আত্মীয়দের কাছে দাবি করেছেন যে তাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য আলোচনা চলছে।
উল্লেখ্য, হামাসের হাতে বন্দী ছয় ইসরায়েলি জিম্মির পরিবার শুক্রবার কাতারের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের জন্য দোহায় গেছেন। তারা কাতারি আলোচক দলের প্রধান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ আল-খলিফার সাথেও আলোচনা করেন।
কাতারের মধ্যস্ততায় নভেম্বরের শেষ দিকে ১০৫ জন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। ৭ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে হামাস তাদেরকে আটক করেছিল। এখনো তাদের হাতে প্রায় ১৩২ জন বন্দী রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অপরদিকে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল গত তিন মাসে গাজায় ২২ হাজারেরো বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
কাতার এবং মিশর গাজায় কয়েক সপ্তাহ যুদ্ধ বিরতি এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে কমপক্ষে ৪০ জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য একটি নতুন চুক্তি নিয়ে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা পুনরায় চালু করার চেষ্টা করছে।
প্রায় এক সপ্তাহ আগে হামাস একটি নতুন চুক্তির প্রস্তাব দেয়, যার মধ্যে গাজা থেকে ইসরায়েলের প্রত্যাহারের দাবিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করে। ফলে উভয় পক্ষই আলোচনা থেকে দূরে সরে পড়ে।
সূত্র : কাতারি কর্মকর্তা, অ্যাক্সিও, টাইমস অব ইসরাইল