হাউস অফ কমন্সে বিতর্কিত রুয়ান্ডা বিল পাস!

যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

ব্রিট্রেনে অভিবাসন প্রত্যাশীদের রুয়ান্ডা পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা সংক্রান্ত বিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাউস অফ কমন্সে ৩১৩-২৬৯ ভোটে জয়ী হয়েছে। এতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বিতর্কিত রুয়ান্ডা বিলে রক্ষণশীল এমপিদের একটি বড় বিদ্রোহ দারুণভাবে এড়িয়ে গেছেন।

তবে, আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় নির্বাসনে পাঠানোর ক্ষেত্রে সেফটি অফ রুয়ান্ডা (আশ্রয় ও অভিবাসন) বিলে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান সহ দুই ডজনেরও বেশি টোরি ডানপন্থী ভোট দানে বিরত ছিলেন।

অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায পাঠানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার ইতিমধ্যেই পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডাকে কয়েক হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী অভিবাসন প্রত্যাশীদের  রুয়ান্ডাতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সেখানেই তারা বসবাস করবেন।

এই বিলের পক্ষের সংসদ সদস্যরা সতর্ক করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই আইনটি শক্তিশালী করতে হবে, না হয় জানুয়ারির শুরুতে কমন্সে ফিরে আসার সময় এটি বাতিলের মুখোমুখি হবে।

সামাজিক মাধ্যম এক্সে সুনাক লিখেছেন, ব্রিটিশ নাগরিকরাই ঠিক করবেন, এদেশে কারা আসবেন, কারা নয়। কোনো অপরাধী চক্র বা বিদেশি কোর্ট এটা ঠিক করবে না।

ভোটাভুটির আগে সুনাক পর্লামেন্টের সদস্যদের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ভোট দিতে বলেন। তার দাবি, বেআইনি অভিবাসন রুখতে এটা সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ। অভিবাসীদের নৌকাগুলিকে থামানোর জন্য এই বিল পাস করাটা জরুরি।

মূলত অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী নৌকাগুলি ইউরোপ হয়ে আসে। চলতি বছরেই  প্রায় ২৯ হাজার লোক নৌকায় ব্রিটেনে এসেছেন। ঋষি সুনাক বলেন, এই বিল পাস হলে কে ব্রিটেনে ঢুকতে পারবে, তা আমরা ঠিক করতে পারব।

সুনাক সপ্তাহব্যাপী বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি ছিলেন। পার্লামেন্টে তার দলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও দলীয় বিদ্রোহীদের একত্রিত করার জন্য তিনি সংগ্রাম করছেন। ডানপন্থীরা প্রকাশ্যে তার ফ্ল্যাগশিপ বিলকে আক্রমণ করছে।

বিরোধীদের মতে, যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার আইন ১৯৯৮ এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইনের ধারাগুলিকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করা হচ্ছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি বলেছে, এই পরিকল্পনা অনৈতিক। কোনভাবেই এটা কার্যকরই করা যাবে না।

গত নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের রায়েও ঘোষণা করেছিল যে সরকারের নির্বাসন পরিকল্পনা বেআইনি এবং রুয়ান্ডা একটি নিরাপদ দেশ নয়।

লেবার দল আগে থেকেই জানিয়েছে, তারা এই সিদ্ধান্তের সমর্থক নয়। ভোটাভুটিতে হেরে গেলে ঋষি সুনাককে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হত।

অনুগত মন্ত্রীরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, বিদ্রোহীরা সরকারকে পতনের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিতে পারে। কারণ, সুনাকের নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই ভঙ্গুর এবং লেবার নেতা কেয়ার স্টারমার রুয়ান্ডা বিলে হারলে অবিলম্বে সাধারণ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।

যাইহোক, ডাউনিং স্ট্রিট কিছুটা সান্ত্বনা পাবে যে কেউ কেউ ভোট দােন বিরত থাকলেও রক্ষণশীল একজনও এমপি বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেননি।

টোরি বিদ্রোহী সূত্র মতে, বিলটি আগামী মাসে আটকে ফেলা হবে। অবশ্য বিলটিকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করতে ২৯ জন টোরি এমপির বিপক্ষে ভোট দিতে হবে।

বিলের পরবর্তী পর্যায় হল বিশেষ কমিটির পর্যালোচনা, যেখানে সাংসদরা বিষয়বস্তু আরও বিশদভাবে যাচাই করবেন। এটি যদি কমিটির পর্যায় অতিক্রম করে তবে প্রতিবেদন পর্যায়ে চলে যাবে। তারপরে হাউস অফ কমন্সে পাঠানো হবে৷ এই সমস্ত পর্যায় অতিক্রম করলে এটি হাউস অফ লর্ডসে যাবে এবং উভয় হাউস সম্মত হলে বিলটি রাজকীয় সম্মতি পাবে এবং আইনে পরিণত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *