স্যান্ডওয়েল কাউন্সিলের নতুন মেয়র ব্রিটিশ-বাংলাদেশী আমিনা খাতুন এমবিই

প্রবাসী যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ব্রিটিশ-বাংলাদেশী মুসলিম মহিলা হিসেবে স্যান্ডওয়েল কাউন্সিলের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন কাউন্সিলর সৈয়দা আমিনা খাতুন এমবিইl ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস বার্মিংহামের পার্শ্ববর্তী স্যান্ডওয়েল কাউন্সিলের মেয়র হিসেবে তিনি আগামী এক বছরের জন্য দ্বায়িত্ব পালন করবেন।

সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৬৯ সালে ১০ জানুয়ারী জন্ম নেন সৈয়দা আমিনা খাতুন। পরিবারের সাথে বৃটেনে আসেন ১৯৭৫ সালের অক্টোবর মাসে। ব্রিটিশ পরিবেশে বড় হলেও আমিনা খাতুন ছিলেন পুরোদস্তুর একজন বাংলাদেশী। ছোটবেলা থেকেই মানুষের জন্য কাজ করার প্রেরণা তাকে পরিণত করেছে একজন নিবেদিতপ্রাণ সমাজকর্মী হিসেবে।

বার্মিংহামের স্যান্ডওয়েল সিটি কাউন্সিল থেকে লেবার পার্টির হয়ে নির্বাচন করে তিনি টানা ৬ষ্ঠ বারের মত কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। আর গত মঙ্গলবার স্যান্ডওয়েল সিটি কাউন্সিলের ৫০ বছরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মহিলা মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন মহিয়সি এই নারী।

সৈয়দা আমিনা খাতুন এমবিই, পরিবারের সম্মতিতে মাত্র ১৫ বছর বয়সে মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের উচারগাঁও গ্রামের সৈয়দ বাড়ির সৈয়দ রাজা মিয়া‘র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি দুই পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের গর্বিত জননী।

সৈয়দা আমিনা খাতুন গত মঙ্গলবার স্যান্ডওয়েল কাউন্সিল হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহনের পর তরুন প্রজন্মের উদ্যেশ্যে বলেন, আমাদের বিজয়ের ধারাকে অব্যাহত রাখতে ব্রিটেনের মূলধারার রাজনীতিতে ব্রিটিশ বাঙালী তরুণ প্রজন্মকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। তার এ অর্জনের জন্য তিনি সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে ধন্যবাদ জানান।

আমিনা খাতুন ১৯৮৬ সালে শিক্ষা বিভাগের একজন গবেষণা কর্মী হিসাবে তার প্রথম কার্মজীবন শুরু করেন। আশির দশক থেকেই তিনি কাজের পাশাপাশি সমাজ সংস্কারে মনোনিবেশ করেন, বিশেষ করে মহিলাদের সামাজিক মানউন্নয়নে তিনি এক এক করে গড়ে তোলেন বাংলাদেশি উইমেনস অ্যাসোসিয়েশন এবং ইয়ুথ গ্রুপ ফর লোকাল ইয়াং উইমেনস। সেইসাথে মা এবং টডলার গ্রুপের মতো মহিলা সংস্থাগুলো পরিচালনা ও সহায়তার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।

পরিবেশ উন্নয়নে তরুণ ও প্রবীণদের সমন্নয় সাধন করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন পরিচালনা করেন। ১৯৯৫ সালে একজন ইউথ ওয়ার্কার হিসেবে কাজ শুরুর পর তিনি “আশা প্রকল্প” নামে স্থানীয় একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ পরিচালনার দ্বায়িত্ব নেন। তিনি রাউলি রেজিস এবং টিপটন প্রাইমারি কেয়ার ট্রাস্টের অ-নির্বাহী পরিচালক।

সামাজিক এ সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করার পাশাপাশি তিনি লেবার পার্টির রাজনীতির সাথে যুক্ত হন এবং ১৯৯৯ সালে স্যান্ডওয়েল মেট্রোপলিটন কাউন্সিলের নির্বাচনে টিপটন গ্রিন এলাকা থেকে প্রথমবারের মত কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

সমাজ সংস্কার ও উন্নয়নে সৈয়দা আমিনা খাতুনের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ২০০৪ সালে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ আমিনা খাতুনের হাতে সম্মানজনক খেতাব অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার বা এমবিই তুলে দেন।

আমিনা খাতুন তার সকল অর্জনের পেছনে বাংলাদেশী কমিউনিটির অবদানকে স্বরণ করে তাদের প্রতি আরো বেশী দ্বায়িত্ব পালনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। – তৌহিদুল করিম মুজাহিদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *