এএনআই
জম্মু–কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারকে বৈধ ঘোষণার পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট ওই রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যাবতীয় অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কল তাঁর আলাদা রুলিংয়ে বলেছেন, ১৯৮০ সাল থেকে ওই রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব ঘটনা ঘটেছে, প্রতিটির নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।
বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কাশ্মীরি পন্ডিত। জম্মু–কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের আদি বাসিন্দা তাঁরা। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের সদস্যদের মধ্যে তিনিই একমাত্র কাশ্মীরি।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিলেও জম্মু–কাশ্মীরের প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রায় সবাই এই রায়কে ‘হতাশজনক’ বর্ণনা করেছেন।
মোদি বলেছেন, এই রায় ‘আশার আলো, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি এবং এক শক্তিশালী ও আরও ঐক্যবদ্ধ ভারত গঠনের ঘোষণাপত্র।’
জম্মু–কাশ্মীরের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতি এই রায়কে ‘হতাশজনক’ আখ্যা দিয়েছেন।
‘এক্স’ হ্যান্ডলে ওমর বলেছেন, ‘হতাশ কিন্তু হতোদ্যম নই। সংগ্রাম চলবে। আজকের এই দিনে পৌঁছাতে বিজেপির বহু বছর লেগেছে। আমরাও দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।’
মেহবুবা মুফতিও ‘এক্স’ হ্যান্ডলে এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘জম্মু–কাশ্মীরের জনগণ আশা ছাড়ছেন না। লড়াইও ছেড়ে দিচ্ছেন না। আমাদের সম্মান ও মর্যাদার সংগ্রাম চলবে। আমাদের পথ চলার ইতি এখানেই নয়। ভারত বলতে যা কিছু বোঝায়, এতে তারই ক্ষতি হলো। যে হাত তোমরা ধরেছিলে, তা আহত ও রক্তাক্ত।’
পিপলস কনফারেন্স নেতা সাজ্জাদ লোনও হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘জম্মু–কাশ্মীরের মানুষ আরও একবার ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হলো। অবৈধভাবে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হলো। কিন্তু সেটা আমাদের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা হিসেবে টিকে থাকবে। রাজ্যের মর্যাদা হরণ নিয়েও সুপ্রিম কোর্ট কোনো মন্তব্য করেননি। আশা করি, ভবিষ্যতে ন্যায়বিচার চোখ তুলে চাইবে।’
জম্মু–কাশ্মীরের সাবেক রাজা হরি সিংয়ের ছেলে ও কংগ্রেস নেতা করণ সিং এই রায় সম্পর্কে বলেছেন, ‘জম্মু–কাশ্মীরের জনগণ এই রায়ে খুশি হবেন না ঠিকই। কিন্তু তাঁদের প্রতি আমার পরামর্শ, এই রায়কে অনিবার্য হিসেবে মেনে নিন। অযথা দেয়ালে মাথা ঠুকে লাভ নেই। তাঁরা বরং পরবর্তী নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হোন।’
হায়দরাবাদভিত্তিক দল এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি সুপ্রিম কোর্টের রায় দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘কাশ্মীর চিরকালই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আজ তা ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত এলাকা করা হলো। জম্মু–কাশ্মীরের হয়ে কথা বলছে ভারতের সংসদ, তাদের বিধানসভা নয়। আগামী দিনে বিজেপি মুম্বাই, কলকাতা, চেন্নাই, হায়দরাবাদকেও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে দেবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না।’
বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথসহ বিজেপির সর্বস্তরীয় নেতৃত্ব এই রায়কে ঐতিহাসিক বর্ণনা করেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, গোটা তল্লাটে আজ সমধুর সংগীত ও সাংস্কৃতিক পর্যটনের মূর্ছনা। ঐক্যের বন্ধন আরও সুদৃঢ়। ভারতও আরও সুসংহত।