সুনামগঞ্জে হাওর রক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু, সংস্কার ও পুন:নির্মাণ হবে ৫৯০ কি. মিটার বাঁধ

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সিলেট
শেয়ার করুন

* বোরো প্রধান সুনামগঞ্জে হাওর রক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু * ৫৯০ কি. মিটার বাঁধ সংস্কার ও পুন:নির্মাণ হবে * সম্ভাব্য ব্যয় ১২৪ কোটি টাকা * প্রাথমিক বরাদ্ধ ৫৭ কোটি টাকা * ভুয়া, অপ্রয়োজনীয় বাধ, অনিয়ম ও দুর্ণীতির বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান

হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী, সিলেট থেকে :

বহু প্রত্যাশিত সুনামগঞ্জের হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও পুন:নির্মাণ কাজ শনিবার শুরু হয়েছে জেলার ১২ টি উপজেলায়। নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর এ কাজ শুরু এবং শেষ হওয়ার কথা ২৮ ফেব্রুয়ারী। এবারই প্রথমবারের মত জেলার সব কটি উপজেলায় যথা সময়ে হাওর রক্ষা কাজ শুরু হয়। এর আগে কোন বছর যথা সময়ে কাজ শুরু এবং শেষও হয়নি। এমনকি বাঁধের কাজ সম্পন্ন করতে প্রজেক্ট ইমপ্লিমেশন কমিটি (পিআইসি) গঠনেও দলীয় পছন্দ ও স্বার্থের কারণে বিলম্ব হতো। এতে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢল নেমে বাধ ভেঙ্গে গিয়ে কৃষকের কপাল পুড়তো। এবার সময় মত কাজ শুরু হওয়ায়-এলাকার কৃষকেরা খুশি। তারা বলেন, যথা সময়ে সুষ্টু ভাবে বাঁধের কাজ শেষ হলে জেলায় ১৩ লক্ষ ৭৫ হাজার মে.টন বোরো ধান কৃষকের গেলায় উঠবে। চলতি মৌসুমে অকাল বন্যা ও পাহাড়ী ঢল থেকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এবার ৬৭৫ টি হাওর রক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এটি বাস্তবায়নে পিআইসি গঠন কাজ শেষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, এতে সম্ভাব্য ব্যয় ১২৪ কোটি টাকা, এবং প্রাথমিক বরাদ্ধ হয়েছে ৫৭ কোটি টাকা। তিনি জানান, বিদ্যমান ১ হাজার কি.মিটার হাওর রক্ষা বাঁধের জরিপ কাজ শেষ। মোট ৫৯০ কি. মিটার বাধ সংস্কার ও পুন: নিমাণ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১২৪ কোটি টাকা। প্রাথমিক ভাবে ৫৭ কোটি টাকা অনুমোদন পাওয়া গেছে। ২৮ ফেব্র“য়ারির মধ্যে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার বিষয়ে আশাবাদী তিনি। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৩৭টি হাওরের বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার করা হবে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ ও ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কমিটির জেলা সদস্যসচিব মামুন হাওলাদার বলেন, অনেক হাওর থেকে এখনো ধীরে পানি নামছে। পুরো শুকাতে জানুয়ারী মাস লাগবে। তবে শুকনো যায়গাহুলোতে কাজ শুরু হয়ে গেছে।

একসময় ঠিকাদারের মাধ্যমে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হতো। কাজ সুষ্টু হয়না বলে কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সাল থেকে কৃষকদের নেতৃত্বে পিআইসির মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ হচ্ছে। এ কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসক। সদস্য সচিব জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী। কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী হাওরের জমির নিকটবর্তী কৃষক হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে যুক্ত রাখা হয়।

এদিকে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরের কৃষকদের বরাদ্দ লোপাটের জন্য একটি শ্রেণি প্রতিবছর ততপর হয়ে উঠে। তারা ভুয়া, অপ্রয়োজনীয়, অল্প ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধেও পুরো বরাদ্দ দিয়ে সরকারের অর্থ লোপাট করে। তিনি বলেন, এসব অনিয়ম ও দুর্ণীতির বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, এবারের বোরো মৌসুমে জেলায় সরকার কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ ও সারের ব্যবস্থা করেছে। এ জেলায় এবার বোরো মৌসুমে দুই লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৭৫ শতাংশ জমির বীজতলা তৈরির কাজ শেষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *