সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিরা ১০ হাজার কোটি টাকা সরিয়েছেন

আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমানো অর্থের পরিমাণ ব্যাপক হারে কমেছে। ২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১০ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা (১ সুইস ফ্রাঁ=১২০.৭২ টাকা হিসেবে)। এক বছরের ব্যবধানে এই অঙ্ক মাত্র ৫ কোটি ৫২ লাখ ৬৮ হাজার সুইস ফ্রাঁতে নেমে এসেছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ মাত্র ৬৬৭ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ৯৪ শতাংশ কমেছে বাংলাদেশিদের জমানো অর্থ।

গতকাল বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেশটিতে থাকা বিদেশিদের আমানতের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কোনো বাংলাদেশি যদি তার নাগরিকত্ব গোপন রেখে টাকা জমা করে থাকে, তার তথ্য এই প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। একইভাবে সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা মূল্যবান শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

তবে সার্বিকভাবে ২০২২ সালে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে আমানত কমছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি রাশিয়ার নাগরিকদের জমানো অর্থের পরিমাণ কমেছে। ডলারের বিপরীতে সুইস ফ্রাঁ দুর্বল হতে শুরু করায় জমানো অর্থের পরিমাণও কমতে শুরু করে। এক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে সুইস ফ্রাঁ দর হারিয়েছে ৮ শতাংশের বেশি। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত এক বছরে একমাত্র ডলার শক্তিশালী হয়েছে। ডলারের বিপরীতে বিশ্বের প্রায় সব মুদ্রাই মান হারিয়েছে। ২০২২ সালে সুইস ব্যাংকগুলো বড় ধরনের লোকসানে পড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদ হার বাড়ানোর প্রভাবে সুইজারল্যান্ডের মুদ্রার মানও কমেছে। যার প্রভাবে আমানতকারীরা নিরাপদ উৎস বিনিয়োগ বা জমা রাখছেন।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমানো অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ফ্রাঁ। ২০১৯ সালে ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁ। দীর্ঘকাল যাবত নাম পরিচয় গোপন রেখে অর্থ জমা রাখার জন্য ধনীদের আকর্ষণীয় গন্তব্য হলো সুইজারল্যান্ড। সুইস ব্যাংকে থাকা এই অর্থের একটি অংশ পাচার হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। নাম পরিচয় গোপন থাকায় সুইস ব্যাংকগুলোতে সারা বিশ্ব থেকেই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ রাখা হয়। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী সেখানে ব্যাংক গ্রাহকদের গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করা হয়। তবে ২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর হওয়ার পর বার্ষিক ভিত্তিতে জমা টাকার হিসাব দিচ্ছে সুইজারল্যান্ড। বছর ভিত্তিতে কোন দেশের কত টাকা জমা আছে সে তথ্য তারা প্রকাশ করছে। তবে কারো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা হয় না। এবার সুইস ব্যাংকগুলো আমানত আকর্ষণে পিছিয়ে পড়েছে। ২০২১ সালে সার্বিকভাবে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বিদেশি নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪০ লাখ ৭৪ হাজার ৭৮৬ কোটি সুইস ফ্রাঁ। ২০২২ সালে এর পরিমাণ নেমে এসেছে ১১৫ লাখ ৭৪ হাজার ০৬৪ কোটি ফ্রাঁতে। অর্থাৎ প্রায় ১৮ শতাংশ কমেছে তাদের আমানতের পরিমাণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, সুইস ব্যাংকগুলোতে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি অর্থ জমা রাখতে পারেন। তবে সরাসরি বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে সে দেশে জমা করার সুযোগ নেই। কঠোর গোপনীয়তার কারণে অর্থ গচ্ছিত রাখার নিরাপদ স্থান হিসেবে সুইজারল্যান্ড অর্থ পাচারকারীদেরও নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চাপের মুখে সুইস ব্যাংকগুলোর এই কঠোর গোপনীয়তার নীতি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। সেখানে গচ্ছিত অর্থ যদি কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, সেক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিচয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে তারা তথ্য দিতে বাধ্য। বর্তমান সময়ে সুইস মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় সেখান থেকে আমানত সরিয়ে ফেলার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *