মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম সিলেট থেকে :
অবশেষে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) দুইবারের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী নিজে। তার মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেইজেও তার প্রার্থিতার বিষয়টি প্রচার করা হচ্ছে।
আরিফুল হক চৌধুরী জানান, চেয়ারপারসনের নির্দেশে তিনি ওই আসনে নির্বাচন করতে সম্মত হন। তিনি এও বলেন, “চেয়ারপারসন আমাদের জাতীয় মুরুব্বি। তাঁর নির্দেশে আমি সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করতে সম্মত হয়েছি। দলের প্রয়োজনে আমি বারবার নির্দেশ পালন করে আসছি। সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার আদেশ মাথা পেতে মেনে নিয়েছি’- যোগ করেন তিনি।
আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, তিনি ৪ নভেম্বর কেন্দ্রের জরুরি তলবে ঢাকায় যান। সেখানে তাঁকে নিয়ে একাধিক দফায় বৈঠক হয়। সবশেষ বুধবার রাত ৮টায় বিএনপি চেয়ারপারসন তাঁকে ডেকে পাঠান এবং এ সিদ্ধান্ত দেন।
বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন জানান, এ আসনে আরিফুল হক চৌধুরীর মনোনয়ন দেয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর বাইরে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এর আগে আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট-১ আসনে দলের মনোনয়ন চান। তবে, এ আসনে দলের পক্ষ থেকে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
সিলেট-৪ আসনে বিএনপি’র দলীয় মনোনয়ন পেতে বেশ কয়েকজন প্রার্থী প্রচারণা চালান। তাদের মধ্যে ছিলেন-বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলাকে নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসন একটি বড় নির্বাচনী এলাকা। এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ২ হাজার ৬৫২ জন। এ উপজেলায় ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, প্রকৃতি কন্যা জাফলং, রাতারগুলসহ বেশ কয়েকটি পাথর কোয়ারির অবস্থান।
এ আসনে এরই মধ্যে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দলের জেলা সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের এডভোকেট মোহাম্মদ আলী ও খেলাফত মজলিসের মুফতি মাওলানা আলী হাসান উসামা মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সিলেট জেলায় মোট ৬টি সংসদীয় আসন রয়েছে। গত রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ জেলার চারটি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে, সিলেট-৪ ও সিলেট-৫ আসন খালি রাখা হয়। এর মধ্য থেকে সিলেট-৪ এ মনোনয়ন পেলেন আরিফুল হক চৌধুরী।
সিলেট-৫ আসনটি এখনো খালি রাখা হয়েছে। আসন সমঝোতা হলে এ আসনটি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুককে ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। তবে, স্থানীয় বিএনপি এ আসনে বিএনপি’র কাউকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি তুলেছে।
আরিফুল হক চৌধুরী ১৯৫৯ সালের ২৩ নভেম্বর সিলেটের কুমারপাড়ায় বিখ্যাত চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুহাম্মদ শফিকুল হক চৌধুরী এবং মাতা আমিনা বেগম। তিনি ছোটবেলা থেকেই সিলেট শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পারিবারিক প্রথা ও রাজনৈতিক পরিবেশ তাঁর মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে তোলে।
২০১৩ সালের জুনে তিনি বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানকে পরাজিত করে সিলেট সিটির মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচনে তিনি ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন।
২০১৮ সালে আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে পুন: জয়লাভ করেন, যেখানে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানকে ৬১৯৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।

