সিলেট-সুনামগঞ্জে তৃতীয় দফা বন্যার শঙ্কা, ৯ উপজেলা প্লাবিত

সাম্প্রতিক সিলেট
শেয়ার করুন

হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী সিলেট থেকে

দুই দফা বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আবার বন্যার মুখোমুখি হয়েছেন সিলেট ও সুনামগঞ্জের বাসিন্দারা। গত দুই দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৪৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার, সিলেটের কানাইঘাটে ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন জনপদ প্লাবিত হয়েছে। বহু রাস্তাঘাট ডুবে স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইঘাট, জৈন্তা ও কানাইঘাট, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার এবং মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা প্লাবিত হয়েছে।

সোমবার বিকালের অঝোর ধারায় বৃষ্টি নানা আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকার বাসিন্দাদের। অনেকের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। সুরামার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত সিলেটের সবকটি নদী সুরমা, কুশিয়ারা, লোভা, গোয়াইন, সারি, ডাউকী, ধলাইয়ের সব পয়েন্টেই পানি বাড়ছে।

সোমবার সকাল ৬টায় কানাইঘাটে সুরমা যেখানে বিপত্সীমার ৮ সে.মিটার ওপরে ছিল সেখানে বিকাল ৩টায় ৯৮ সে.মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে সারি নদী অমলসিদে বিপত্সীমার ৬ সে.মিটার ও গোয়াইনঘাটে ২৫ সে.মিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার বললেন, আগামী তিন দিনে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়ে নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সমতলে কোথাও কোথাও নদীর পানি বিপত্সীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চলে ঢুকতে পারে।

সুরমাসহ বিভিন্ন নদী তীরবর্তী বসিন্দারা বাড়িঘর, গৃহপালিত পশু, জমি, ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে চোখে আঁধার দেখছেন। প্রায় এক মাস থেকে মারাত্মকভাবে ফুলে থাকা কুশিয়ারায় নতুন করে আবার পানি বৃদ্ধির আশঙ্কায় বাসিন্দারা মহাদুশ্চিন্তায়। এর আগে দ্বিতীয় দফা বন্যায় সিলেট অঞ্চলের প্রায় ২১ লাখ লোক পানিবন্দি হন। চার জেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয় অন্তত হাজার কোটি টাকা। গত সপ্তাহে বন্যার পানি কমতে না কমতে শুরু হয়েছে ঢলের তাণ্ডব। ‘এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’—বললেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের শাহ জামাল উদ্দিন। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, তার এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে চারদিকে পানি। সেখানে যেতে হলে নৌকা লাগে। মানুষ বাড়িঘর গরু বাছুর নিয়ে চরম বিপাকে।

জানা গেছে, রবিবার থেকেই সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় হুহু করে পানি ঢুকে রাস্তাঘাট ডুবছে। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক তলিয়ে সেখানে নৌকা চলছে। সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা গোয়াইনঘাটের জাফলং, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত নদনদীগুলোর পানি প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে।

পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, সিলেটের সীমান্ত এলাকায় প্রবাহিত নদনদীগুলোর পানি বাড়া বা কমার বিষয়টি ভারতে বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। আজ মঙ্গলবারও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি আভাস দিয়ে বলেন,‘ ভারতের বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঢল নামে।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৯০৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় ৬৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ২১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে লোক উঠেছেন। তবে এর আগে পানি কমায় সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজন বাড়ি ফিরে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *