হুমায়ূন রশিদ চৗধূরী সিলেট থেকে :
সিলেটে বন্যায় মহানগর ও জেলাজুড়ে প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে সিলেট মহানগরে ১৫টি এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত। জেলা প্রশাসন জানায়, মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেটজুড়ে ৮৬৪টি গ্রাম ও এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রাম ও এলাকার কয়েক লাখ মানুষ বন্যা আক্রান্ত। সিলেট মহানগরের ৪টি ওয়ার্ড অধিক বন্যা কবলিত। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৮০টি।
২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যা
গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই শনিবার (১৫ জুন) আবার কবলিত সিলেট। ঈদের দিন সোমবার ভোররাত থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। সঙ্গে নেমে আসে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় মহানগরের অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থানেও অবনতি হয় বন্যা পরিস্থিতির। সোমবার বিকালে বৃষ্টি থামলেও মঙ্গলবার (১৮ জুন) ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় বৃষ্টি। উজানেও বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। ফলে হু হু করে পানি বাড়তে থাকে।
মঙ্গলবার বিকাল ৬টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে চলছিল। কুশিয়ারা আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার, সারি-গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ০.২৮ সে.মি সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
মহানগরের সব নিচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত।
এছাড়া মহানগরের মধ্যে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি রয়েছে। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান পানির নিচে।
গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেটে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি ৭৬ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পানিবন্দী লোকদের উদ্ধারের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
উজানের দেশ ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে পলিমাটি এসে প্রতি বছর সিলেট অঞ্চলে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। ভরাট হয়ে যওয়া নদী ও খালবিল খননের অভাবে পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করছে। এছাড়া কিশোরগঞ্জের চারটি উপজেলা হাওরবেষ্টিত নিকলী, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা সড়কের কারণে এই সমস্যা আরো জটিল হয়েছে। বন্যায় সিলেট বিভাগের চার জেলায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।