সিলেটে বন্যা : বহু সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত, কাদাপানিতে চরম দুর্ভোগ

সাম্প্রতিক সিলেট
শেয়ার করুন

হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী সিলেট থেকে

নদনদীর পানি হ্রাস পাওয়ায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের ১৭ উপজেলার বন্যা পরিস্হিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে সিলেট শহরের নিকট সুরমার পানি খুব ধীরে নামছে। হাওর এলাকার বাড়ির নিচে এখনো পানি।

মঙ্গলবার গোয়াইনঘাট উপজেলার বারো হাল খাস মৌজার অনেক বাড়ির চারপাশে পানি দেখা যায়। বাড়ি থেকে পানি নামলেও ঘর থেকে বের হতে কাদা-পানিতে সৃষ্টি হয়েছে চরম দুর্ভোগ। বন্যার কারণে প্রায় ১০ দিন কৃষকেরা পাকা ধান ও গোখাদ্য শুকাতে পারেনি। বন্যায় ফসল, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন অবকাঠামো তছনছ করে দিয়েছে।

ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে সিলেট জেলা ও মহানগর মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার সড়কে এখন বন্যার ক্ষত। সড়ক ও জনপথের (সওজ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত বলেন, চলমান বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে সওজের ১৩৫ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এগুলো নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ করতে ১০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। তবে জরুরি ভিত্তিতে সড়ক চালু করতে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছেন।

অপরদিকে, এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবির বলেন, সড়কে এখনো পানি। তবে এখন পর্যন্ত ১১১টি সড়কের প্রায় ২৬৭ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সংস্কারে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।

এদিকে, গত সোমবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’ কমিটির সভায় বিভাগের সকল পর্যায়ের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা শেষে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিজ দপ্তরের ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট প্রদানের জন্য বলা হয়। বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিলেটের চার জেলার জেলা প্রশাসক, সেনাবাহিনী ও বিজিবির প্রতিনিধি, পুলিশের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেটের প্রধান নদী সুরমার ২৯৫ কিলোমিটার ও কুশিয়ারার ১৬১ কিলোমিটার নদীসহ আরো কয়েকটি নদী ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এসএম শহীদুল ইসলাম বলেন, ৬ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা ড্রেজিংয়ের জন্য দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে সিলেটের বন্যা সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে। ‘নদী খনন ছাড়া সিলেট অঞ্চলের জীবন-জীবিকা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সব কিছু স্থবির হয়ে যাবে,’ এমন মন্তব্য করে সুনামগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন বলেন, মেঘালয়ের পাদদেশে এই জনপদে প্রতি বছর হাজার হাজার টন বালি ও পলি নেমে আসছে। তাই এখানকার নদী-খালে সব সময় নাব্য ধরে রাখতে হবে।’সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধূরী বলেন,‘ আমাদের সৌভাগ্য। নগরীর মধ্য দিয়ে একটি নদী প্রবাহমান। যা অন্য কোন শহরে নাই। কিন্তু দূষণ ও ভরাটের কারণে আজ আমরা বিপর্যয়ের সম্মুখীন।’ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট বিভাগীয় আহ্বায়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে কোনভাবেই হোক সুরমা-কুশিয়ারা ড্রেজিং করতে হবে।

সূত্র মতে, সুরমা নদী খননে ২০১২ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে পাউবো। ঐ প্রকল্প প্রস্তাবের পর নদী খননে সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষার পর নদী খননে উদ্যোগ নেওয়ার কথা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হলেও আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ২০১৭ সালেও আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করে পাউবো। ২০১৯ সালে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী খনন, বাঁধ নির্মাণ ও নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি ডিপিপি গ্রহণ করে পাউবো। কিন্তু ঐ প্রকল্পেরও অগ্রগতি হয়নি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, সুরমা নদী ড্রেজিংয়ে এ পর্যন্ত ৪ বার সমীক্ষা হয়েছে। কিন্তু নদী আর ড্রেজিং করা হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *