সিরিয়ায় বিমান হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের চার সদস্য নিহত

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ইরানে বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর চারজন জ্যেষ্ঠ সদস্য সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে একটি বিমান হামলায় নিহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ড।

তারা জানিয়েছে, তাদের চারজন সামরিক উপদেষ্টার পাশাপাশি সিরিয়ার বেশ কয়েকজন সৈন্য ওই হামলায় নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল এই বিষয়ে এখনো কোন মন্তব্য করেনি। তবে ইরানের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে, বহু বছর ধরে সিরিয়ায় এমন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল।

গত বছরের সাতই অক্টোবর থেকে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এরকম হামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড বাহিনীর সামরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ সরকারকে সহায়তা করতে কাজ করে আসছেন।

শনিবারের হামলা ঘটেছে দামেস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমের মাজ্জেহ এলাকায়, যেখানে একটি সামরিক বিমানবন্দর রয়েছে এবং জাতিসংঘ সদর দপ্তর, বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও রেস্তোরা রয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেছেন, তিনি বড় ধরনের ‘বিস্ফোরণ’ দেখতে পেয়েছেন এবং সেখানে ‘বিশাল ধোঁয়ায়’ ঢেকে যেতে দেখেছেন। ‘শব্দটা শুনে আমার কাছে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের মতো মনে হয়েছে। কয়েক মিনিট পরেই আমি অ্যাম্বুলেন্স ছুটে যাওয়ার আওয়াজ শুনতে পাই,’ তিনি বলেছেন।

ইরানের আধা-সরকারি মেহের বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ওই হামলায় সিরিয়ায় রেভ্যুলশনারি গার্ডের গোয়েন্দা প্রধান, উপ-প্রধান এবং আরও দুইজন গার্ড কমান্ডার নিহত হয়েছেন।

একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ধোঁয়ার বিশাল স্তরের তৈরি হয়েছে এবং ভবন বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছে। তবে এই ভিডিওটি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে দেখতে পারেনি বিবিসি।

গতমাসেই দামেস্কের বাইরে একটি সন্দেহজনক ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিপ্লবী গার্ডের একজন কমান্ডার নিহত হয়েছিলেন।

চারদিন আগে ইরান দাবি করেছিল যে, তারা ইরাকের আধা স্বায়ত্বশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দপ্তরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। সেই ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করেছিল রেভ্যুলশনারি গার্ডস।

সাতই অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে ইসরায়েল। হামাসের হামলায় ১৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মধ্যে এখনো অন্তত ১৩২ জিম্মি রয়েছেন। অন্যদিকে গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় গাজাতে ২৪ হাজার ৯০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছে, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে তারা ভূমি এবং আকাশপথে হামলা চালাচ্ছে, যে গোষ্ঠীটির মূল সমর্থক ইরান।
এরপর থেকে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি। যুদ্ধ আশেপাশের দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই হেজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে।

ইরান সমর্থিত ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে চলাচলকারী জাহাজের ওপর হামলা করছে। হুথিদের দমন করতে ইয়েমেনে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

এই সপ্তাহে উত্তেজনা আরও বেড়েছে যখন পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা করে, যাদের দুটি শিশুর মৃত্যু হয়। ইরানের দাবি, তারা ইরানি সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

এরপর পাল্টা জবাব হিসাবে ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় হামলা করে পাকিস্তান, যাতে অন্তত নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের দাবি, তারাও সন্ত্রাসী ঘাটিতে হামলা করেছে।

উভয় দেশই তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আলোচনার পরে অবশ্য কূটনৈতিক যোগাযোগ আবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। – বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *