সাহিত্যের বিকাশে নবীন লেখকঃ নোশিন তাসনিম আজিজ

প্রবন্ধ-কলাম সময় সাহিত্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

নোশিন তাসনিম আজিজঃ সারা বছরই নানা বিষয়ে বই প্রকাশ হতে থাকে। তবে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বের হয় সর্বোচ্চ সংখ্যক বই। স্বাভাবিকভাবেই এসকল বইয়ের লেখকদের মধ্যে প্রবীণ ও নবীন উভয়ই অন্তর্ভূক্ত। সাহিত্যের সকল শাখায় প্রবীণ লেখকের পাশাপাশি নবীনরাও অবাধ বিচরণ করে থাকে। ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, অনুবাদ, রান্না, চিকিৎসা-স্বাস্থ্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নবীন লেখকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষণীয়। তবে প্রশ্ন হলো পরিচিত বা খ্যাতিমান লেখকদের বইয়ের প্রসার যেমন; নবীন লেখকদের বইয়ের প্রসার সে তুলনায় কতখানি? আবার নবীন লেখক মানেই কিন্তু বয়সে তরুণ এমন লেখক নয়। যে কোন বয়সে লেখালেখির জগতে যিনি প্রবেশ করবেন লেখক হিসেবে তিনি কিন্তু নবীন।

বেশিরভাগ পাঠকই পরিচিত লেখকের বই সংগ্রহে আগ্রহী। অনেক পাঠক আবার নবীন লেখকের লেখার মান নিয়ে হয়ে পড়েন সন্দিহান। তাহলে আমাদের সাহিত্যের যে সমৃদ্ধ ভাণ্ডার তা এগিয়ে যাবে কিভাবে? আজকের পরিচিত ও প্রবীণ লেখক যারা রয়েছেন তারাও একদিন নবীন বা নতুন লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তাদের সাহিত্যচর্চা অব্যাহত থাকার ফলে আমরা আজকের সমৃদ্ধ সাহিত্যরস উপভোগ করতে পারছি। সেই দৃষ্টিকোন থেকে যথাযথভাবে নতুনদের সহিত্যচর্চার সুযোগ করে দিতে হবে। আশার কথা হলো, বর্তমান সময়ে অনেক নবীন লেখকের বই খুবই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে এবং দিন দিন পাচ্ছে।

প্রতিটি মানুষের চিন্তাবোধ, সাহিত্যের উপলব্ধি, লেখালেখির ধরণ ভিন্ন ভিন্ন। আবার সবাই যে একই বয়সে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করে তা-ও কিন্তু নয়। বয়সের ভিত্তিতে নয়, লেখালেখির অভিজ্ঞতার আলোকেই লেখক পারদর্শী হয়ে ওঠেন। আমাদের আশেপাশের পরিবেশ, সমাজের বাস্তবতা, ন্যায়-অন্যায়, পাওয়া না পাওয়ার গল্পের চিত্র প্রাণবন্ত হয়ে প্রকাশ পায় লেখকের কলমের কালিতে। আর দশজন মানুষের সাথে লেখকের পার্থক্য এখানেই যে- অন্যরা এসব কিছু দেখেও নিজে তা লেখকের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করতে পারেনা, যেখানে লেখকের কলমের মাধ্যমে তা ফুটে ওঠে অনায়াসে।

অনেক নবীন লেখক আত্মপ্রকাশ করেও হারিয়ে যায় নানা কারণে। স্বনামধন্যদের তুলনায় নিজের পশ্চাৎপদ অবস্থান দেখে হতাশ হয়ে পড়েন অনেক নতুন লেখক। আবার অনেকে বই প্রকাশ করে প্রতিযোগিতার এই যুগে টিকতে না পেরে সাহিত্যচর্চা থেকে বিরত থাকেন। আর এমন সিদ্ধান্তে পিছিয়ে পড়টাই স্বাভাবিক। নতুনদের এসব না ভেবে বরং নিবিড়ভাবে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করতে হবে। সাহিত্যচর্চা বন্ধ না করে নানা উপায়ে তা সবার সামনে নিয়ে আসাটাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ।

সাহিত্যের বিভিন্ন ধারার নিত্যনতুন সংযোজন আমাদের হাসায়, কাঁদায়, ভাবনার জগতে নিয়ে নতুন উপলব্ধির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। তাই খ্যাতিমান লেখকদের পাশাপাশি নতুন লেখকের আগমন অত্যন্ত জরুরী। তবেই না সাহিত্যের চর্চা থেমে না থেকে এগিয়ে চলবে অবিরাম। সমৃদ্ধ হবে বাংলা সাহিত্য।

নিয়মিত সাহিত্যচর্চা ও গঠনমূলক সমালোচনার মধ্য দিয়ে নতুনরা হয়ে উঠবে আরও দক্ষ। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নবীন লেখকদের বই প্রকাশ করতে প্রকাশকরা অনীহা প্রকাশ করেন। কিন্তু নবীন লেখকদের মানসম্মত লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকাশকদের ভূমিকা অপরিসীম। এক্ষেত্রে প্রকাশকদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। কারণ, অধিকাংশ প্রকাশকই দেখেন বইটি কতোটা বিক্রি হবে বা বাজারে সেই লেখকের চাহিদা কেমন এই বিষয়টি। তাই বই প্রকাশকদের উচিত নতুনদের বই প্রকাশ করা ও ব্যবসায়িকসহ নানা বিষয়ে তাদের দিকনির্দেশনা দেয়া।

আর পাঠকের উচিত খ্যাতিমান লেখকদের পাশাপাশি একটি হলেও নবীন লেখকের বই কিনে পড়া, প্রশংসা করা, উৎসাহ প্রদান করা, গঠনমূলকসমালোচনা ও পরামর্শ দিয়ে সাহিত্যচর্চায় নবীনদের আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করা।

লেখকঃ শিক্ষাবিদ, ই-লার্নিং ও ব্লেন্ডেড লার্নিং বিশেষজ্ঞ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *