হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী সিলেট থেকে:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমি আশা করি সিলেট কিডনী ফাউন্ডেশন হাসপাতাল বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এটি ‘মাইলফলক’ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, এটি কিডনী রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় রোগীদের জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। সাশ্রয়ী ও আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেবা দেওয়া এবং রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য মাঠ পর্যায়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন তা প্রশংশনীয়। কিডনী ফাউন্ডেশন হাসপাতালের সাফল্য কমনা করে বলেন, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ১০ তলা ভবনের যাত্রা শুরু হলো তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, কিডনী ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, সিলেট ২০১৮ সাল থেকে একটি ভাড়া করা ভবনে কিডনী রোগীদের ৫০ শতাংশ ছাড়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানের সাথে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেকের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় আছে। তাদের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ইতোমধ্যে এটি সিলেটের মানুষের কাছে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বজন সমাদৃত। তিনি বলেন, এর সাথে জড়িত প্রবাসীরা যে অবদান রেখে চলছেন-তা সত্যিই প্রশংসিত।
সিলেট কিডনী ফাউন্ডেশন হাসপাতাল-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়্যালি যুক্ত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।
গত শনিবার (১১ জানুয়ারি) তেমুখীর বাদাঘাট রোডস্থ নাজিরের গাঁও-তে অবস্থিত কিডনী ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, সিলেট-এর নিজস্ব ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। কিডনী ফাউন্ডেশন সিলেট-এর সভাপতি প্রফেসর ডা. জিয়া উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং ট্রাস্টি ফিতরাত রশীদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশীদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চ্যানেল এস-এর চেয়ারম্যান আহমদ-উস-সামাদ চৌধুরী জেপি, মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান বীর উত্তম, ঢাকাস্থ ন্যাশনাল কিডনী ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ হাসপাতাল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হারুনুর রশীদ, ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামারা হাসান আবেদ, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি’র চেয়ারপার্সন মেহেরিয়ার এম হাসান, শহীদ প্রফেসর শামসুদ্দিন আহমদ ফাউন্ডেশন অ্যান্ড এডুকেশন ট্রাস্ট-এর চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সালাহউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ জাকি হোসাইন। কিডনি ফাউন্ডেশন সিলেট-এর চেয়ারম্যান ডা. জিয়া উদ্দিন আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক কর্নেল মুহাম্মদ আব্দুস সালাম বীরপ্রতীক অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মানের স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতালটি স্থাপনের লক্ষ্যে সিলেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লায়ন জুবায়ের আহমদ চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যরা ১২০ শতক ভূমি বিনামূল্যে এবং বিনাশর্তে দান করেছেন। এ হাসপাতালটি নির্মাণের জন্য ২০১৮ সাল থেকে উদ্বোধন পর্যন্ত প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর ও কিডনী ফাউন্ডেশন সিলেট-এর যৌথ উদ্যোগে ১৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশীদ বলেন, সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের অধীনে ৭৬ হাজার প্রতিষ্ঠান আছে। কিডনী ফাউন্ডেশন সিলেটও এর অন্তর্ভুক্ত। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর ও কিডনী ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এ হাসপাতাল নির্মাণ সত্যিই একটি অসাধারণ কাজ। যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, এটাকে কাজে লাগিয়ে এই একত্রীকরণের কাজটি সিলেটের চিকিৎসাব্যবস্থায় নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদ কে চৌধুরী বলেন, কিডনী ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, সিলেট-এর সাথে যারা সম্পৃক্তদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানকে উন্নত করতে হলে অর্থনৈতিক, প্রোগ্রাম্যাটিক, টেকসই দৃষ্টিভঙ্গি এবং যোগ্য উত্তরসূরি দরকার। এ প্রতিষ্ঠানের সাথে যারা ছিলেন, তারা সত্যিকার অর্থে এ কাজগুলো করেছিলেন। তারা কেবল স্বপ্ন দেখেননি বরং স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছেন। ক্রমান্বয়ে এখানে চিকিতসা সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে বলে সংস্লিষ্টরা জানান।