সালমান এফ রহমানের টুইট ও বঙ্গ-মার্কিন সম্পর্ক

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেস্টা সালমান এফ রহমান ১৭ ঘন্টা আগে দেয়া এক টুইটে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দূরত্ব হ্রাস পেয়েছে এবং আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার অপেক্ষায় রয়েছি।’

সালমান রহমান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া ও এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ট লু এর সফরের পর সৃষ্ট নানামুখি জল্পনার পর এই টুইট করেছেন বলে মনে হয়। এই জল্পনার বিষয়ের মধ্যে সামাজিক গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের পাশ্বে বসা সালমান রহমানের একটি গুমড়ো মুখের ছবিও রয়েছে।

আমেরিকান দুই মন্ত্রীর সফরের পর দু’দেশের সম্পর্ক কোথায় সেটি বুঝতে এদেশি বিশ্লেষকের চেয়ে আমেরিকান বিশ্লেষকদের শরণাপন্ন হওয়া ভালো। আর সেটি যদি আমেরিকান পররাষ্ট্র দফতরের অধীনে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারী কোন আমেরিকান কূটনীতিক হন তাহলে সেটি হয় বেশি প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশের আমেরিকান দুতাবাসে ডেপুটি মিশন চীফ হিসাবে দায়িত্বপালনকারী জন ড্যানিলোভিজ মূল্যায়নটা এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করা যেতে পারে। তিনি জেয়া-লু’র সফরের পর একটি সংক্ষিপ্ত টুইট করেছেন আর সে সাথে কিছুটা বিস্তারিত একটি লেখার সংযুক্তি দিয়েছেন।

সাউথ এশিয়া পারস্পেক্টিভ এর লেখাটিতে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ হোক বা বিশ্বজুড়ে ইতিহাস থেকে হোক আমরা একটি শিক্ষা নিতে পারি, আর তা হলো কোনো কিছুই চিরকাল স্থায়ী হয় না। এমন অগণিত রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন যারা নিজেদেরকে একদিন শীর্ষস্থানে খুঁজে পেয়েছেন কেবল পরের দিন তাদের টেবিলগুলি চালু করার জন্য। আমরা এই গত সপ্তাহান্তে দেখেছি যে রাশিয়ান রাষ্ট্রপতি পুতিন ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার বাস্তব সম্ভাবনার মুখোমুখি হয়েছিলেন যখন তার প্রাক্তন মিত্ররা তার দিকে বন্ধুক তাক করে ফিরছিল। উইনস্টন চার্চিল এবং জর্জ এইচ.ডব্লিউ বুশ তাদের দেশকে সামরিক বিজয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আর এরপর শান্তিকালীন নির্বাচনে ক্ষমতা হারানোর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন।’

কর্মজীবনে সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং চ্যালেঞ্জিং কূটনৈতিক পোস্টগুলির কিছুতে নেতৃত্ব দেয়া আমেরিকান পররাষ্ট্র দফতরের সাবেক এই কর্মকর্তা এরপর বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সরাসরি আসেন। বাংলাদেশের বিষয়টা তিনি আনেক গভীরভাবে বুঝেন এ কারণে যে তিনি ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় বসার প্রক্রিয়ার সময়কার নানা ঘটনার ভেতরের প্রত্যক্ষ সাক্ষী।

জেয়া-লু এর সফরের কথা উল্লেখ করে জন বলছেন, ‘এরপর বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের কাছে দুটি বিকল্প রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে সব মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করা। এটি কিছু সময়ের জন্য কাজ করতে পারে, কিন্তু এটি চিরতরে কাজ করবে না। আর তারা যত বেশি সময় ক্ষমতা ধরে থাকবেন এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা যত বেশি চরমপন্থায় যাবেন তাতে তারা যখন চলে যাবেন তখন প্রতিক্রিয়া ততই কঠোর হবে। আবার, শেষ পর্যন্ত বাঁধ ভেঙে গেলে স্বৈরাচারীদের কী হয় তা নির্দেশ করার জন্য প্রচুর উদাহরণ রয়েছে।’

জন এর মতে, ‘ অন্য বিকল্প হল ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা নতুন ম্যান্ডেট পাওয়ার যোগ্য কিনা তা জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া। যদি, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা দাবি করেন, গত ১৫ বছরে তাদের নীতিগুলি জনপ্রিয় হয়েছে, তাহলে তাদের উচিত জনগণের কাছ থেকে আস্থার ভোট গ্রহণ করা এবং যে চাপ তৈরি হচ্ছে তা থেকে মুক্তি দেওয়া উচিত।’

জন ড্যানিলোভিজ বলছেন, ‘জনগণ যদি পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দেয়, তাহলে শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত উত্তরণের সুযোগ থাকবে। ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা আর দায়িত্বে না থাকলে জবাবদিহিতা বা প্রতিশোধের ভয় পেতে পারেন। গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অন্যান্য দেশে যেমন দেখা যায়, যদি এটি একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার অংশ হয় তখন এই ভয়গুলি আরও সহজে মোকাবেলা ও পরিচালনা করা যায়। শেষ পর্যন্ত, জটিল সময়ে নেতারা পছন্দ বেছে নেওয়ার মুখোমুখি হন আর বাংলাদেশের নেতাদের তাদের কর্মপন্থা বেছে নেওয়ার সময় এসেছে।’

সালমান রহমানের টুইট এবং জন ড্যানিলোভিজ এর মন্তব্যের পর পাঠকরা বুঝে নিতে পারেন বাংলাদেশ- যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কটা এখন ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য সরকার কোন বিকল্প বেছে নিতে চলেছেন। আর কোন বিকল্পের কী পরিণতি হতে পারে।

লেখক: মাসুম খলিলী, সাংবাদিক ও কলামিস্ট, সাবেক নির্বাহী সম্পাদক দৈনিক নয়া দিগন্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *