আগুনে পুড়লে মৃত ব্যক্তির মর্যাদা ও আগুন লাগলে যে দোয়া পড়বেন

ধর্ম ও দর্শন সময় চিন্তা সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

কোন মানুষ যখন দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে বা অন্য কোন উপায়ে আগুনে পুড়ে মারা যায় কিংবা পানিতে ডুবে মারা যায় তখন তার এই মৃত্যুর জন্য পরিবার, আত্মীয়স্বজন বা পাড়া-প্রতিবেশিরা শোকে কাতর হয়ে যায়। সেই মৃত ব্যক্তি শহীদের মর্যাদা পাবেন কি না? আর এই বিষয়ে শান্তির ধর্ম ইসলাম কি বলে? এমন নানা প্রশ্ন আমাদের মনে আসে।

কারা কারা শহীদ সে বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আখ্যা দিয়েছেন। পবিত্র হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে জাবের তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার বাবা জাবের (রাঃ)-কে তার রোগশয্যায় দেখতে গেলেন। তার কাছে গিয়ে দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছেন, আমরা মনে করেছিলাম, তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। তখন মহানবী (সাঃ) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে করো না? এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে। আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ…। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১১)

উল্লিখিত হাদিসটি ইবনে মাজাহ শরিফে এসেছে এভাবে—জাবের বিন আতিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী (সাঃ) তাকে দেখতে আসেন। জাবের (রাঃ)-এর পরিবারের কেউ কেউ বলল, আমরা আশা করতাম যে সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তাহলে আমার উম্মতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারিতে নিহত হলে শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয় রোগে মৃত্যুবরণকারীও শহীদ। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮০৩)আগুনে পুড়ে বা পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ব্যক্তির মর্যাদা সম্পর্কে বিশিষ্ট আলেম দ্বীন ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ বলেছেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর হাদীস অনুযায়ী এই কথাটি সত্য যে, আগুনে পুড়ে মারা গেলে কিংবা পানিতে ডুবে মারা গেলে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হবে। কিন্তু শহীদের মর্যাদা পাওয়া আর শহীদ হওয়া এক কথা নয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। এখানে যত ফজিলতের হাদিস আছে, সবগুলো শর্ত সাপেক্ষে। এগুলো আমাদের বুঝতে হবে। অবশ্যই তার মৃত্যু হতে হবে ঈমানের উপর। এমন কোনো কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত থাকতে পারবেন না, যা ইসলামের পরিপন্থি। তিনি বড় ধরনের কোনো অন্যায় বা গুনাহর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। নিয়মিত কবিরা গুনাহ করলে, অন্যায় করলে তিনি শুধু শাহাদাতের যে মর্যাদা আছে, সেটা পাবেন। এগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। অনেক সময় আমরা মনে করি, লোকটা পানিতে পড়ে মারা গেল মানে শহীদ হয়ে গেল। তাহলে তার পেছনে যত গুনাহ আছে, সেগুলো বিবেচনা করা হবে না? কীসের ভিত্তিতে আমরা বলব, সে শহীদ হয়েছেন? এটা তো আল্লাহর আজাবও হতে পারে। যিনি নিয়মিত কবিরাহ গুনাহ করেছেন, তিনি শহীদের মর্যাদা পাবেন না।

এমনকি বিধর্মী কোন ব্যক্তিও যদি উপরোক্ত কারণগুলোতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি কিন্তু শহীদ বা শহীদের মর্যাদা পাবেন না। মোট কথা হচ্ছে শহীদ হতে হলে বা শহীদের মর্যাদা পেতে হলে ঈমানের উপর অবিচল থাকতে হবে, কবিরাহ গুনাহ করা থেকে বিরত থােতে হবে।

মহান আল্লাহ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত সকল মুমিন মুসলমানকে শহীদি মর্যাদা দান করুন। তাদের পরিবার-পরিজনকে ধৈর্যধারণের তাওফিক দান করুন এবং তাদের উত্তম প্রতিদান দিন, আমিন।

আগুন লাগলে যে দোয়া পড়বেন:

দুর্ঘটনা বা আগুন লাগার ঘটনা কাউকে বলে-কয়ে আসে না। যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং নিভে যেতে পারে তরতাজা প্রাণ। তাই কোথাও আগুন লাগলে আশপাশে যারা থাকেন তাদের উচিৎ আগুন নেভানোর যাবতীয় চেষ্টা অব্যাহত রাখার আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করা ও মাসনুন দোয়া পড়া।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত- আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘তোমরা যখন কোথাও আগুন দেখ, তখন তোমরা তাকবির দাও অর্থাৎ اَللهُ اَكْبَر পড়ো। কেননা, তাকবির আগুন নিভিয়ে দেয়। (তাবরানি : ১/৩০৭)। তাকবিরের অর্থ : আল্লাহ মহান।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, ‘আগুন যত প্রলয়ঙ্করী হোক; তাকবিরের মাধ্যমে তা নিভে যায়। আর আজানের মাধ্যমে শয়তান পলায়ন করে। (আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা : ৫/১৮৮)।

এ ছাড়াও পবিত্র কুরআনে বর্ণিত একটি আয়াত রয়েছে। যেটি পড়লে আগুন নেভাতে প্রভাব পড়ে, আগুনের ক্রিয়া নিস্তেজ হয়ে আসে। হজরত ইবরাহিম (আঃ)-কে আগুন যেন স্পর্শ না করে, সে নির্দেশ দিয়েছিলেন মহান আল্লাহ তায়ালা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ

উচ্চারণ : ‘ইয়া না-রু কু-নি বারদান ওয়া সালামান আলা ইবরাহীম।’ অর্থাৎ ‘হে আগুন! তুমি ইবরাহিমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।’ (সুরা আম্বিয়া : ৬৯)

আরও পড়ুন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা
দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা
বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা, একটু গাফিলতি হলেই মারাত্মক বিপদ
রাসূল সা: প্রবর্তিত খাদ্যবিজ্ঞান । ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
যে খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে
ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থে কপিরাইটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিঃ ফাহিম ফয়সাল
অতিরিক্ত আবেগ মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দি
ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *