অনুবাদ:মাসুম খলিলী
এক. যখন আপনি আপনার পাপের জন্য অনুশোচনা করেন, পাপ করার জন্য দুঃখিত হন এবং যখন আপনি সেটি স্মরণ করলে ব্যথা অনুভব করেন তখন ধরে নিন এটি আপনার বিশ্বাস ও আন্তরিক অনুতাপের লক্ষণ। তবে, অনুতপ্ত হওয়ার পরে, শয়তান আপনাকে সর্বশক্তিমানের রহমত সম্পর্কে সন্দেহ করার দিকে যাবে। কোনভাবেই হতাশ হবেন না। ইবলিশের এই কৌশলের ফাঁদে পড়বেন না। সামনে এগিয়ে চলুন।
দুই. ভাল বা খারাপ, আমরা আমাদের জীবনে যা করি তা সবসময় আমাদের কাছে ফিরে আসে। তাই আমরা যদি সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ চাই, জীবনকে কঠিন করা এবং অন্যের জন্য বাধা সৃষ্টি করা আমাদের বন্ধ করতে হবে।
পূনশ্চঃ
এক. অন্যরা কেমন অনুভব করবে অথবা তারা এটি গ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে চিন্তা বন্ধ করুন। এই জীবন এসবের জন্য খুব ছোট। বিচার দিবসে সর্বশক্তিমানের সামনে বিষয়গুলি কেমন হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হন। এটাই হবে আপনার লক্ষ্য।
দুই, উদ্বিগ্ন হতে থাকা অর্থ আমরা সর্বশক্তিমানকে বিশ্বাস করি না। আমাদের অসন্তুষ্টি ও বিশ্বাসের অভাব কাটিয়ে ওঠার মূল চাবিকাঠি হ’ল তাঁকে আরও ভালভাবে জানা এবং তাঁর আরো কাছাকাছি হওয়া। আপনি যখন তাঁকে কখনও বলেননি তখনও কি তিনি আপনাকে প্রয়োজনীয় সামগ্রি সরবরাহ করেননি? এ নিয়ে একবার গভীরভাবে ভেবে দেখুন। এটি তাঁর প্রতি আপনার আস্থা ও বিশ্বাসকে বাড়িয়ে তুলবে!
তিন. জীবন নামক এই বিভ্রান্তিকর যাত্রায় আমরা কীভাবে আমাদের জন্য সর্বশক্তিমানের পরিকল্পনা বুঝব? এটি করতে হবে তাঁর সাথে আমাদের সংযোগ গড়ে। আপনি যদি তাঁর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন তবে তিনি আপনাকে পথ দেখাবেন। একটু একটু করে, এটি উন্মোচিত হবে এবং তিনি আপনার জন্য কী রেখেছেন তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। সেই সংযোগটি তৈরি করুন।
চার. মানুষের সবচেয়ে বড় ত্রুটিগুলির মধ্যে একটি হল তাদের নিজের দোষগুলির প্রতি অন্ধ হওয়ার ভান করা কিন্তু অন্যরা ভুল করলে প্রথম কারো গলায় ঝাঁপ দেয়া। সর্বদা আঙ্গুলের ইশারা করার পরিবর্তে আরও বেশি আত্ম-সমালোচনা করতে শিখুন।
পাঁচ. সর্বশক্তিমানের কাছে আমাদের মানসিক শান্তি দানের জন্য সর্বদা প্রার্থনা করুন। আমাদের চারপাশের কোলাহলটি যেন আমাদের এমন জায়গায় বিভ্রান্ত না করে যেখানে তিনি আমাদের জন্য কী করছেন তা আমরা বুঝতে পারি না। আমাদের সমস্যাগুলিতে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে আসুন আমরা আমাদের জন্য তাঁর পরিকল্পনায় মনোনিবেশ করি। আমাদের ধৈর্য ধারণ এবং তাঁর আনুগত্যের পথেই চলতে হবে।
দ্রষ্টব্য:
আর সেদিন যালিম (অনুতাপে) নিজের হাত দুটো কামড়িয়ে বলবে, হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোনো পথ অবলম্বন করতাম। হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশবাণী থেকে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে তা আসার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক”। [সূরা আল-ফুরকান: ২৭-২৯]
বলুন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে (রাসূল সা.) অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্ অত্যান্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ( সূরা আলে ইমরান: ৩১.)
হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা তোমাদের ধর্মকে হাসি-তামাসা ও ক্রীড়ার বস্তুরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে ও অবিশ্বাসীদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তাহলে আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা আল মায়িদা: ৫৭)
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, প্রত্যেক জান্নাতীকে যদি তার কর্ম খারাপ হতো তাহলে জাহান্নামে তার অবস্থান কোথায় হত তা দেখানো হবে। তখন সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। আর প্রত্যেক জাহান্নামীকে, যদি তার কর্ম ভালো হতো তাহলে জান্নাতে তার অবস্থান কোথায় হতো তা দেখানো হবে। তখন সে অনুতাপ করবে।(সহীহ বুখারী, ৬৫৬৯)
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রা” থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখন জান্নাতীরা জান্নাতে যাবে আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে যাবে তখন মুত্যুকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থানে জবেহ করে দেওয়া হবে। অতঃপর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিবে, হে জান্নাতবাসীরা! আর কোনো মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামবাসীরা! আর কোনো মৃত্যু নেই। এ ঘোষণা শুনে জান্নাতীদের আনন্দ-ফুর্তি আরো বেড়ে যাবে। আর জাহান্নামীদের দুঃখ- অনুতাপ আরো বেড়ে যাবে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম) আবু সায়ীদ আল খুদরী বর্ণিত মুসলিমের বর্ণনায় একটি বাক্য বেশি আছে। তা হলো: একথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সা: এ আয়াতটি পাঠ করেছেন যে, “আর তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপ দিবস সম্পর্কে যখন সব বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে, অথচ তারা রয়েছে উদাসীনতায় বিভোর এবং তারা ঈমান আনছে না”। [সূরা মারইয়াম:৩৯] উদাসীনতায় বিভোর কথাটি বলার সময় তিনি দুনিয়ার দিকে হাত দ্বারা ইশারা করেছেন”। (সহীহ বুখারী:৬৫৪৮; সহীহ মুসলিম:২৮৪৯)
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন,আদায়যোগ্য সর্বোত্তম আমল হলো আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত ফরজ, আর পরিত্যাগযোগ্য আমল হলো আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত হারাম। নিয়তের সততার ওপর প্রতিদান নির্ভর করে। (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ৩/১৯)
* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি
