সরকারী অবহেলায় সুন্দরবনের মধু এখন ভারতের জিআই পণ্য – সিপিডি

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বাংলাদেশের সরকারী নীতিনির্ধারকেরা গুরুত্ব না দেয়ায় সুন্দরবনের মধু ভারতের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এমনটি মনে করে। সম্প্রতি বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) এক সম্মেলনে সুন্দরবনের মধুকে ভারতের জিআই পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

বুধবার সিপিডির কার্যালয় ধানমন্ডিতে ‘সুন্দরবনের মধু এখন ভারতের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য’ শীর্ষক সংলাপে সংস্থাটির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। এ সময় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সুন্দরবনের মধু ভারতের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। আমরা যদি মূল উৎপাদনকারী হই, তাহলে ভারত কীভাবে একক হয়। ২০১৭ সালের ৭ই আগস্ট বাগেরহাটের ডিসি সুন্দরবনের মধুকে বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো তা রেজিস্ট্রেশন হয়নি। এই দায় আমরা কাকে দেব? অথচ ভারত আমাদের চার বছর পর ২০২১ সালে আবেদন করে তারা জিআই স্বত্ব পেয়ে গেছে।

মধুর বাজারে আগামীতে প্রতিযোগিতা কঠিন হবে জানিয়ে দেবপ্রিয় আরও বলেন, জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পরেও বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে কষ্ট হবে। কারণ তাদের বাজার অনেক বড়। তাই, তাদের অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচও অনেক কম হয়। স্বীকৃতির জন্য তৈরি করা জিআই পণ্যের তালিকা ‘পূর্ণাঙ্গ নয়’ জানিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সার্ভে করে আমাদের পণ্য যেগুলো আছে, সেগুলোকে জিআইয়ের অধীনে আনার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

জিআই পণ্য হিসেবে সুন্দরবনের মধু হাতছাড়া হওয়া প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, সুন্দরবনের মধুর মুখ্য অংশই বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থিত বনাঞ্চল থেকে সংগৃহীত হয়। কিন্তু এই পণ্যকে ভারতের জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, এর আগে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছিল। আমরা ২০১৩-১৪ সাল থেকেই এই টাঙ্গাইল শাড়ি, জামদানি শাড়ি এগুলোর ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম।

আমাদের প্রকাশনাও ছিল। তাছাড়া বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে আমরা একটা পথনির্দেশিকা এবং নীতিমালাও তৈরি করেছিলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা দেখেছি যে, নীতিনির্ধারক পর্যায়ে এ ব্যাপারে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এর ফলে, তারা টাঙ্গাইল শাড়িকে তাদের নিজস্ব ভৌগোলিক পণ্য হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করেছে। এখন আবার সুন্দরবনের মধুকে করেছে।

ফাহমিদা মনে করেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্য যদি জিআইয়ের আওতায় এনে রেজিস্ট্রেশন করা হয়, তাহলে সেসব নিজেদের বলে দাবি করা যাবে না। আমাদের বিষয়টা হচ্ছে যে, যখন হয়ে যায়, তখন আমাদের ঘুম ভাঙে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *