সংবাদপত্রে বাংলাভাষা প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ । আহমদ মতিউর রহমান

প্রবন্ধ-কলাম সময় চিন্তা
শেয়ার করুন

সংবাদপত্রে ভাষার অপপ্রয়োগ হচ্ছে, সংবাদ বা রিপোর্টে ভাষা সুসামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে না। ফলে পাঠক সংবাদপত্র পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন এ রকম অভিযোগ প্রায়শই করা হয়ে থাকে। এ অভিযোগ অমূলক নয়, আবার যদি এই প্রচারণার অর্থ হয় সংবাদপত্র বা সাংবাদিকদের ম্যালাইন করা বা হেয় করা তবে তারও জবাব আছে। প্রথম কথা হচ্ছে দেড় দশকের বেশি সময় আগে বেসরকারি টেলিভিশনের প্রচার শুরুর পর বিশেষ করে সংবাদভিত্তিক নিউজ চ্যানেল চালুর ফলে সংবাদপত্র বা প্রিন্ট মিডিয়া একটা প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে। এরপর আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সবাই যে যার মতো সংবাদ, গসিপ, কুৎসা, নিন্দা প্রচার করতে শুরু করে। এরও একটা প্রভাব পড়ে সংবাদপত্রের উপর। এর পর ২০১৯ এর শেষে এলো কোভিড ১৯ বৈশ্বিক মহামারি। এর প্রভাব পড়লো ব্যাপকভাবে। কেন না সামজিক জীবন গেল পাল্টে, মানুষ ঘরবন্দী, চোখের সামনে এন্তার মৃত্যু তাকে ঠেলে দিল ঘরের ভেতর। আতংকে সংবাদপত্র হাতে ধরে পড়ার বিষয়টা গৌণ হয়ে পড়লো। সংবাদপত্রের সরবরাহ চেইনও বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়লো। মানুষ প্রাণ বাঁচাতে লড়াই করবে না সংবাদপত্র পড়বে এ বিবেচনাও সামনে এল। এতসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে সংবাদপত্রগুলো আর্থিক সংকট , দক্ষ লোকবল সংকটে পড়ে গেল। এর একটা প্রভাব তো পড়বেই। দু’বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর আবার যখন স্বাভাবিকতার দিকে যেতে চলেছে বিশ্ব তখন আবার পুরনো প্রশ্নটা আসতে শুরু করেছে। এখন দেখার বিষয় ভাষা ব্যবহারের বিষয়টা পাল্টে যাচ্ছে কিনা, ভাষার অপপ্রয়োগ হচ্ছে কিনা। বলে নেয়া ভালো, সংবাদপত্রের ভাষা আর বইয়ের ভাষা এক নয়। আবার একই সংবাদপত্রে দুটি নিউজ বা ফিচারে আলাদা ভাষা প্রয়োগ করা হয়। সম্পাদকীয় পাতায় থাকে একটু গুরুগম্ভীর ভাষা। দেখা যাচ্ছে একই দিনের কাগজে একাধিক পৃষ্ঠায় একাধিক ভাষারীতি প্রয়োগ হচ্ছে। আর পাঠক তা পড়ে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, সংবাদপত্রকে দৌড়ের উপর থেকে কাজ করতে হয়। এই অন দ্য রান কাজ করতে তার ভাষার লালিত্ব মাধুর্য সুসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাষা ব্যবহারে অনেকটা ব্যত্যয় ঘটে থাকে। মনে রাখতে হবে দৈনিক পত্রিকা কোন গবেষণামূলক পত্রিকা নয়। সংবাদপত্রকে যেভাবেই হোক প্রতিদিনি ভোরে মানুষের সামনে হাজিরা দিতে হয়। ফলে তার ক্রুটি বিচ্যুতি থাকলে তার প্রকাশ ঘটে যায়। বড় বিচ্যুতি থাকলে তার মাশুলও গুণতে হয় বৈকি। তবে যতই হারি করুক, তড়িঘড়ি করুক না কেন সংবাদপত্রকেও ভাষার নিয়ম কানুন ব্যকরণ মেনেই চলতে হয়। আলাদা স্টাইলবুক থাকলে সেটারও অনুসরণ করতে হয়। কথা হচ্ছে এটা রক্ষিত হয় কিনা, এটা পরখ বা রিভিউ করার কোন ব্যবস্থা আছে কিনা সেটাও দেখার বিষয়।

স্বাজাত্যবোধ, নিজস্ব ভাষা ও দেশপ্রেমের নিরিখেই তৈরি করতে হয় সংবাদপত্রের ভাষা। দুনিয়ার সকল সংবাদপত্রের মধ্যে একটি সাধারণ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রত্যেকেই ঘটনা, তথ্য, অভিমত, এমনকি জল্পনা-কল্পনাকে নানাভাবে খবর আকারে তুলে ধরেন তথা পরিবেশন করেন। এই খবর বা সংবাদ পরিবেশনের একটি নিজস্ব রীতি বা স্টাইল থাকে। সংবাদ তৈরি করতে গিয়ে কিছু-কিছু সর্বসম্মত প্রশ্নমালা তাদের খুঁজে বের করতে হয়েছে। পাঁচটি ডাব্লিউ ও একটি এইচ (হু-কে, হোয়েন-কখন, হোয়্যার-কোথায়, হোয়াট-কি, হোয়াই- কেন এবং হাউ-কীভাবে)-এই প্রশ্নমালাকে সামনে রেখেই সাধারণভাবে সাংবাদিকরা খবর তৈরির ভাষা ও লেখার স্টাইল গড়ে তোলেন এবং এই পথ ধরেই একটি সর্বজনগ্রাহ্য মান দাঁড়িয়ে যায়। দুনিয়ার প্রায় সব স্বাধীন সংবাদপত্রের দেশে মান, পদ্ধতি ও উদ্যোগ অল্পবিস্তর একই ধরনের। অবশ্য দেশ ও ভাষাভেদে এই প্রক্রিয়াটায় আকার ও মাত্রার প্রশ্নে ভিন্নতা এসে যায়।
ভাষার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভাষারীতিরও পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশের সংবাদপত্রে কোন ধরনের বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে, তার দিকে দৃষ্টি দিলে কিছু ভিন্নতা চোখে পড়বে। স্বাধীনতার অব্যবহিত আগে-পরে ঢাকার সংবাদপত্রে যে ভাষারীতির প্রয়োগ দেখা গিয়েছিল, তাতে সাধুরীতি ও চলিতরীতি এই দুটি স্পষ্ট ভাগ ছিল। এটা এখন পুরোটাই চলিত রীতিতে চলে এসেছে। দু’একটি পত্রিকা সম্পাদকীয় এখনো সাধু ভাষায় লিখে থাকে। প্রাচীনতম দৈনিক আজাদ ও অন্যতম প্রাচীন দৈনিক ‘ইত্তেফাক’ সাধুরীতিতে প্রকাশিত হয়েছে এক সময়। আজাদ অধুনালুপ্ত আর ইত্তেফাকে ভাষায় বদল এসেছে। আরেক প্রাচীন পত্রিকা ‘সংবাদ’ ও অধুনালুপ্ত ‘দৈনিক পাকিস্তান’ও (পরে ‘দৈনিক বাংলা’) এই ভাষারীতি অনুসরণ করেছে। তবে অধুনালুপ্ত ‘পূর্বদেশ’ পত্রিকা চলিত ভাষারীতি অনুযায়ী মুদ্রিত হয় প্রথম থেকেই। স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ভাষা ব্যবহারে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সাংবাদিকদের বুদ্ধিদীপ্ত বাক্প্রতিমা নির্মাণ সংবাদকে আকর্ষণীয় করে তোলে। বর্তমানে সংবাদপত্রে বাংলা ভাষা কেমন বা সাম্প্রতিক প্রবণতাটি কী?। ঢাকায় দৈনিক সংবাদপত্রের কথা ধরলে দেখা যায় সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে এবং এগুলোর পৃষ্ঠাসংখ্যা ও রংবৈচিত্র্যও উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ভাষা প্রয়োগে পত্রিকাগুলো হারিয়েছে পূর্বের আকর্ষণ ও আবেদন। সংবাদ পরিবেশনার ক্ষেত্রে আজকাল আর শৈল্পিক বা নান্দনিক উপস্থাপনা দেখা যায় না; বরং ভাষা ব্যবহারে ভুলের নমুনা দেখা যায় বিস্তর। এটাকে কি অপপ্রয়োগ বলবো? ভাষাগত প্রচুর দুর্বলতা এবং বাংলা ভাষার ভুল প্রয়োগ এখন ঢাকার পত্রিকাগুলোতে বেশ দেখা যায়, ঢাকার বাইরের কাগজগুলোতেও একই প্রবণতা আছে। বলা যায়, যে সোনালি অতীত ছিল বাংলাদেশের সংবাদপত্রজগতে, তা আর ধরে রাখা যাচ্ছে না। সংবাদপত্রের মালিক ও কর্মীদের মধ্যে স্বাজাত্যবোধ ও ভাষাপ্রীতি না থাকলে এ থেকে পরিত্রাণের পথ নেই।

বর্তমানে সংবাদপত্রের আর কিকি প্রতিবন্ধকতা আছে তার একটি ধারণাও দেয়া যাক। সংবাদপত্রকে চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়ে থাকে। সে যদি মন খুলে লিখতে পারে, মত প্রকাশ করতে পারে তবেই তা এই স্তম্ভ হিসেবে কাজ করবে । কিন্তু হালে এই বিষয়টাতে একটা বাধা কাজ করছে। সংবাদপত্র আর গণতন্ত্র হাত ধরাধরি করে চলে। আমরা দেখবো দুটো ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা আছে। সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দলগুলোর শত বাধা সত্ত্বেও দেশে জিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। এর ফলে সাংবাদিকরা মন খুলে লিখতে পারছেন না, ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমে এটা বাধা হয়ে উঠেছে। সরকার বিষয়টাকে প্রথমে উড়িয়ে দিতে চাইলেও হালে আইনমন্ত্রী এসব বাধার কথা স্বীকার করে নিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার কথা বলছেন। সরকার সমর্থক সংবাদপত্রগুলো বিষয়টার প্রতি আগে গুরুত্ব না দিলেও রিপোর্ট প্রকাশ করতে গিয়ে দেখছেন এটা কতটা যন্ত্রণাদায়ক। এটার সুরাহা হওয়া দরকার।বিরোধী মতের প্রতি সংবিধান অনুসারেই শ্রদ্ধাশীল হওয়া দরকার। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংবাদপত্র সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের সমালোচনা করবে এটাই স্বাভাবিক। এটা হতে দিতে না চাইলে সমস্যা থেকেই গেল। এগুলো সংবাদপত্রের সাধারণ সমস্যা । এবার আসি মূল বিষয়ে। সংবাদপত্রে কি বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ হচ্ছে? হলে তার ধরন কি? এটা বন্ধের উপায়ই বা কি? উত্তর হলো হ্যাঁ কিছুটা তো হচ্ছেই। আগে পত্রিকা যতটা সুখপাঠ্য ছিল এখন তা নেই। পুরনো পত্রিকাগুলো এক সময়ে সংবাদ লেখা ও প্রকাশে একটি ধারার সূচনা করেছিল সেই ধারাটা মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিল। প্রতিটি পত্রিকারই রিপোর্ট বা ফিচার লেখার আলাদা ভাষা বৈশিষ্ট্য ছিল। এগুলো সুলিখিত সুসম্পাদিত ছিল। এখন সংবাদপত্র জগতে একটা বিরাট জোয়ার এসেছে সত্য কিন্তু পুরণো পত্রিকাগুলো যে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল তা কিন্তু একালের কাগজগুলো পাচ্ছে না, দু’একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে। এর কারণ কি? রাজনৈতিক বা মতাদর্শগত কারণ অবশ্যই থেকে থাকবে। তবে ভাল ভাল পেশাদার সাংবাদিকের অভাবেই মূলত ভাষার অপপ্রয়োগটা বেশি হচ্ছে। সংবাদপত্র আসলে খবরেরই জন্য। কিন্তু বিগত ত্রিশ বছরে সংবাদপত্রে খবরের পরিবর্তে এমন এমন কনটেন্ট যুক্ত হয়েছে যা আসলে সংবাদপত্রের কোন বিষয়ই হওয়া উচিত ছিল না। আগে একটি মাত্র সম্পাদকীয় পাতায় সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে সুচিন্তিত কলাম, বিশেষ নিবন্ধ, চিঠিপত্র কলাম বের হতো। এটিকে ব্যাপকতর করতে গিয়ে নিউজ পেপারের এডিটরিয়াল পেজগুলো যেন অনেকটা সাপ্তাহিক পত্রিকা টাইপ হয়ে গেছে। এখন এসব পাতা ভরাতে এমন সব লেখা ছাপা হয় যেগুলোতে কোন ভ্যালুজ মেনটেন করা হয় না। পেশাদার, জ্ঞানীগুণি লোকরা এগুলো না লেখায় এসব লেখায় ভাষার অপপ্রয়োগের মাত্রা অনেক বেশি।

ভাষার অপপ্রয়োগ হচ্ছে দেশী বিদেশী খবরে, রিপোর্টিং আইটেমে, স্পট নিউজে, খেলার খবরে, মফস্বল সংবাদে এবং অপরাধ ও রাজনীতি সম্পর্কিত রিপোর্টে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সময়ের অভাবে সঠিকভাবে সম্পাদনা না হওয়া, পেশাদার প্রুফ রিডারদের দ্বারা সংশোধিত না হওয়ার কারণে ভুলগুলো থেকেই যাচ্ছে।

বাংলাদেশে সংবাদপত্র পাঠকের অধিকাংশই স্বল্পশিক্ষিত। পাঠক চান চোখের পলকে একটি সংবাদ জেনে ফেলতে। তত্ত্বকথা ও দীর্ঘ জটিল বাক্য সংবাদ রচনায় তাদের পড়ার আগ্রহটাকে বিনষ্ট করে। সংবাদের ভাষা সহজ, সরল ও প্রত্যক্ষ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। লেখার স্টাইল যা-ই হোক না কেন, পাঠকের কৌতূহল অবশ্যই মেটাতে হবে। ছোট বাক্য, সুনির্বাচিত শব্দসমূহ এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে সত্যিকারভাবে তা অর্থবহ হয়। গণমাধ্যমে বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ নিয়ে কমবেশি লেখালেখি হলেও আমরা একটি আদর্শ অবস্থান বেছে নিতে পারিনি। এ আমাদের জাতীয় দৈন্য।
বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগের কারণ হিসেবে বলা যায়, সঠিকভাবে যে ভাষায় সংবাদ লিখছি তা আয়ত্ত করতে না পারা। দ্বিতীয়ত সঠিক তথ্য বা ইনফরমেশন না জেনে বইপত্র না ঘেঁটে আন্দাজের উপর লেখা। মাত্র কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করি। আজকাল ভালো ভালো কাগজের সাংবাদিকরাও লিখে থাকেন-
১. ওমুখ অপরাধের দায়ে ‘ক’ কে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
২. বাস ও মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ঘে ওমুক সড়কে ‘খ’ জন নিহত।
৩. আহত ‘গ’কে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
৪. বাংলাদেশ বিমানের ওমুক ফ্লাইটের বিমান গতরাতে ছেড়ে যায় নি।
৫. আজ মিস্টার ‘ঘ’ এর ৬০ তম জন্মবার্ষিকী (জীবিত লোকের ক্ষেত্রে) । আজ মিস্টার ‘ঙ’ এর ১১২ তম জন্ম দিন। (মৃত লোকের ক্ষেত্রে)।
৬. মিস্টার ‘চ’ গত রাতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
৭. অমুক জেলায় ৬ বছরের শিশু ধর্ষিত।

সাংবাদিক লিখতেই পারেন। কিন্তু ডেস্কে বা রিডিং সেকশনে ভুলটা ধরা পড়া উচিত , কিন্তু পড়ে না।
প্রথমত গ্রেফতার। ওমুক অপরাধের দায়ে ‘ক’ কে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ পর্যন্তই খবর, ‘নিয়ে যায়’ আর দরকার নেই। কারণ গ্রেফতার করে থানাতে বা হাজতেই নেবে। সম্ভবত রিপোর্টার/জেলা সংবাদদাতা ‘ধরে নিয়ে যায়’ বোঝাতে লিখেছেন ‘গ্রেফতার করে নিয়ে যায়’। এটা অপপ্রয়োগ। ২. বাস ও মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ওমুক সড়কে ‘খ’ জন নিহত প্রসঙ্গ। আসলে বাস ও মোটর সাইকেল-দুটো জিনিসের আকার এমন যে সংঘর্ষ হওয়ার তেমন সুযোগ নেই। ঘটনাটা হলো বাসের ধাক্কায়/চাপায় মোটর সাইকেল চূর্ণবিচূর্ণ। বিপরীত দিক থেকে বাস ও মোটর সাইকেল এসেছে এটা বুঝাতে সাংবাদিক ‘মুখোমুখি’ বলেছেন। এটাও অপপ্রয়োগ। ৩. বলা হচ্ছে, আহত ‘গ’কে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এটা তথ্যগত বা জানার ভুল। কারণ বাংলাদেশে এ নামে কোন হাসপাতাল নেই। আছে মেডিকেল কলেজ। হাসপাতালের নাম মিটফোর্ড। এটাও অপপ্রয়োগ। ৪. বাংলাদেশ বিমানের ওমুক ফ্লাইটের বিমান গতরাতে ছেড়ে যায় নি। এটাও তথ্যগত বা জানার ভুল। দেশের জাতীয় বিমান সংস্থার নাম বাংলাদেশ বিমান নয়, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স’। বাংলাদেশ বিমান বলতে কোন সংস্থা নেই। এটা অপপ্রয়োগ ছাড়া আর কি। ৫. আজ মিস্টার ‘ঘ’ এর ৬০ তম জন্মবার্ষিকী (জীবিত লোকের ক্ষেত্রে)। আজ মিস্টার ‘ঙ’ এর ১১২ তম জন্মদিন। (মৃত লোকের ক্ষেত্রে)। আসলে জীবিত লোকের হবে জন্ম দিন। জন্ম বার্ষিকী বললেই পাঠকের মনে হতে পারে লোকটা বুঝি মৃত। তার জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। তেমনিভাবে মৃত ব্যক্তির জন্মদিন পালিত কথাটিও ব্যকরণসম্মত নয়। দুটোই বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ। ৬. মিস্টার ‘চ’ গত রাতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। প্রায়ই বিভিন্ন পত্রিকায় এরকম লেখা থাকে। যে কারো সে যদি মানুষ নাও হয়, তার মৃত্যুর স্বাভাবিক কারণ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া। প্রেস রিলিজ/শোক সংবাদ যিনি লিখেছেন তিনি হয়তো বুঝাতে চেয়েছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। এ ভুলটাও ভাষার অপপ্রয়োগ। ৭. অমুক জেলায় ৬ বছরের শিশু ধর্ষিত। এ রকম খবর ছাপার প্রবণতা দেখা যায় একটি বিখ্যাত পত্রিকায়। তারা ধর্ষণের ভয়াবহতা বুঝাতে এটি করে থাকতে পারে। ‘শিশু’ শব্দ দিয়ে ছেলে মেয়ে দুটিই বুঝায়। আর কম বয়সী ছেলেশিশুও ওই ধরনের অপকর্মের শিকার হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে ধর্ষণ না হয়ে বলাৎকার হবে। শিশু না বলে মেয়ে বা কন্যাশিশু/ শিশুকন্যা লিখলে ভুলটা আর হতো না। এটাও বাংলা ভাষার ভুল প্রয়োগ বলাই বাহুল্য। এ ধরনের অনেক উদাহরণ দেয়া যায়। পত্রিকার নাম ইচ্ছে করেই বলা থেকে বিরত থাকলাম। তো এসব অপপ্রয়োগ থেকে বাঁচার পথ কি? সকলকে সচেতন হতে হবে। পাঠককে সঠিক তথ্য দিতে সম্পাদনা, ক্রস চেক ও সেকেন্ড থট প্রয়োজন। এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজে বের করা এখন সবার স্বার্থেই জরুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *